Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহিউদ্দিনের কুলখানিতে মৃত্যুর মিছিল, দায় কার?


১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:৪৮

প্রয়াত ‘চট্টলবন্ধু’ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকে এখনো মূহ্যমান চট্টগ্রাম। সারাদেশের মানুষ বিজয়-উৎসব করলেও চট্টগ্রামের মানুষ বিজয়ের উৎসবে ছিল শোকাতুর। সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিজয়-দিবসের কর্মসূচি পালিত হলেও তাতে ছিল তীব্র শোকের ছায়া।

এই শোকাবহ পরিবেশেই মহিউদ্দিনের মৃত্যুর চারদিনে আয়োজন করা হলো চট্টগ্রামের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মেজবান। এত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ১৪টি স্পটে একযোগে একলাখ মানুষের খাবারের আয়োজন শুনে শুরুতেই ভাবনায় পড়েছিলেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

মহিউদ্দিন চৌধুরী দিলদরিয়া মানুষ ছিলেন। আজীবন তিনি মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। কাজেই তার কুলখানিতে একলাখ মানুষ খাবে সেটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু মাত্র দুদিনের প্রস্তুতিতে একলাখ মানুষের জন্য নির্বিঘ্নে, নিরাপদে খাবার-আয়োজন কতটা সহজ হবে সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল তখন। এক্ষেত্রে মহিউদ্দিন-ভক্ত এবং নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলাপূর্ণ অতিথি-আপ্যায়ন ও সুব্যবস্থাপনার জন্য ‘নির্ভরতা’ ভাবা হয়েছিল। সে অনুযায়ী দায়িত্বও বণ্টন করে দেয়া হয়েছিল আ.লীগের নেতাকর্মীদের।

কুলখানিতে খেতে এসে পদদলিত হয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের ১০ জনের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে সেই নির্ভরতার মানুষগুলো তাহলে কোথায় ছিলেন? কী ছিল তাদের ভূমিকা?

ঘটনাস্থল রিমা কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ১০ হাজার অমুসলিমের খাবারের আয়োজন করা হয়। বলা হয়েছিল ভিড় সামলাতে ১১টার পর থেকে সবগুলো কমিউনিটি সেন্টারে একযোগে খাবার বিতরণ করা হবে। গণমাধ্যমে মহিউদ্দিন-পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের এমন ঘোষণায় ১১টা থেকেই সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে অবস্থান নেন আমন্ত্রিতরা। রিমার অতিথিরাও হাজির হতে থাকেন ১১টার পর থেকে। কিন্তু গিয়েই তারা হোঁচট খান। দেখেন গেট বন্ধ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিথিদের জটলাও বড় হতে থাকে রিমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। সাড়ে ১২টার দিকে খাবার বিতরণের জন্য যখনই গেইট খুলে দেওয়া হয় তখনই হুড়মুড় করে ঢোকার চেষ্টা করেন হাজারো মানুষ। জনস্রোতে পিষ্ট হয়ে মুহূর্তেই নিভে যায় ১০ টি তাজা প্রাণ, গুরুতর আহত হন অন্তত ৩০ জন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বললেন, মূল সড়ক কিংবা রিমার কমিউনিটি সেন্টারের মূল গেইট থেকে ১০ ফুট নিচে ক্লাবটির অবস্থান। প্রশ্ন উঠেছে, এত কমিউনিটি সেন্টার থাকতে ১০ ফুট নিচের এই ক্লাবকে কেন ১০ হাজার মানুষের খাবারের জন্য বাছাই করা হলো। বাছাই যখন করাই হলো, গেইট বন্ধ রেখে জনস্রোত কেন আটকানো হলো, নির্ধারিত সময়েই বা কেন খাবার বিতরণ শুরু হলো না!

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে আয়োজকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন রিমা কমিউনিটি সেন্টারের ঢালু অংশটি কেন বালু দিয়ে আগে থেকে ভরাট করা হলো না।

রিমাতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে আসা রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত সাংবাদিকদের জানালেন, ‘রিমা কমিউনিটি সেন্টারে অমুসলিমদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও সেটা মানা হয়নি। সবধর্মের লোককেই এখানে ভিড় করতে দেখেছেন তিনি। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

মুসলিমদের জন্য ১৩টি স্পটে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। অমুসলিমদের জন্য ব্যবস্থা রাখা রিমাতেই বা কেন মুসলিম আমন্ত্রিতরা ভিড় করবেন? আয়োজক বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা তারাই বা কেন সেটা অ্যালাউ করবেন?

১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এই প্রশ্ন, অব্যবস্থাপনাগুলো এখন নগরজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিমা কমিউনিটি সেন্টার ট্র্যাজেডি থেকে ফিরে আসা এক মহিউদ্দিন-ভক্তের আক্ষেপ, আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভালোবাসি, তার মৃত্যুতে এখনো শোকাহত। তার মৃত্যুকে উপলক্ষ করে কোনো খাবার কিংবা উৎসবের পক্ষপাতি নই আমরা। সার্বিক অব্যবস্থাপনা দেখে মনে হয়েছে, আমাদের আপ্যায়নের নামে একধরনের উৎসব কিংবা শোডাউনটাই  ছিল মুখ্য। আর সে কারণেই এতগুলো মানুষকে প্রাণ দিতে হলো। এর দায় কার? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

যদিও চমেক হাসপাতালে হতাহতের দেখতে গিয়ে মহিউদ্দিন-পুত্র কেন্দ্রীয় আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানালেন, বাবার শোকে তারা মূহ্যমান। সেই শোকের মাঝেই নতুন শোক, শোকের সারি। এই শোক সামাল দেওয়া সত্যিই তাদের জন্য কঠিন হবে।

আজাদ তালুকদার : সম্পাদক, একুশে পত্রিকা, চট্টগ্রাম।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর