Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহিংসতায় পুলিশের মৃত্যু: দায় এড়াতে পারেন না পিটার হাস

অরুণ কুমার গোস্বামী
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৪০
বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যের নিহত হওয়ার দায় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এড়াতে পারেন কি ? বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতা–কর্মীরা সহিংসতায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এসময় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর দলটির নেতা–কর্মীরা আক্রমন করে। দায়িত্বপালনরত অবস্থায়  এক পুলিশ সদস্যসহ ২ জন নিহত হন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকরাইল, মতিঝিল, মগবাজার, হাইকোর্ট মোড়, বিজয়নগর ও আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত এর নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের  সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত তিনশ’ জন আহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ৪১ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন সাংবাদিক রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে কাকরাইলে পুলিশ বক্স ও বিভিন্ন স্থানে অন্তত দেড় ডজন গাড়িতে আগুন এবং দুই ডজন যানবাহন ভাঙচুর করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা। নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. আমিরুল ইসলাম (৩৩)।  জানা গেছে বিএনপি ও এর নেতা কর্মীরা পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যের ওপর লাঠি, চাপাতি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় একজন যুবদল নেতা চাপাতি দিয়ে কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায় বিএনপি-র মহাসমাবেশ এবং জামায়াতের জঙ্গি মিছিলের আগে শুক্রবার রাতে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে আমেরিকান দূতাবাসের পলিটিক্যাল সেক্রেটারির সাথে জামায়েতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বিএনপি-র মহাসমাবেশের আগে রাত ১০টা থেকে রাত ১১:২০ পর্যন্ত  ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আমেরিকা দূতাবাসের পলিট্যিকাল সেক্রেটারি ম্যাথিউ বে-এর সাথে গুলশানস্থ আমেরিকান ক্লাবে প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী এই গোপনীয় বৈঠক করেন। আমেরিকান ক্লাবে জামায়াত নেতা টাই-কোট এবং মাস্ক পরিহিত অবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন।
বিএনপি-র সমাবেশ ছিল পল্টনে। এখানে কোনও সংঘর্ষ হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও বাধা দেয়া হয় নি। প্রস্তুতি নিয়েই সেখানে মঞ্চ সাজানো হয়েছিল্ তবে ২৮ তারিখ দুপুর ২.৩০ টার দিকে সমাবেশ বন্ধের ঘোষণা কেন দেয়া হলো ? জানা গেছে একটি বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই হঠাৎ করেই সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপির হাই কমান্ড। আর এর পেছনে রয়েছে বড় কোন মহলের ইন্ধন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করলে ইন্ধনটি স্পষ্ট হয়ে যায়। ২৮ অক্টোবর সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত-এর নেতা-কর্মীরা। বেলা ১১ টা থেকে কাকরাইল থেকে শুরু হয় বিএনপি-জামায়াতের তান্ডব। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে বাস ভাঙচুর গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ শুরু করে তারা। ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াত আলাদা সমাবেশ করে। তবে শেষ খবর পর্যন্ত জামায়াত মাঠে থাকলেও বেলা ২.৩০টার দিকে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন বিএনপির সমাবেশে কাক্সিক্ষত লোক সমাগম না হলেও সমাবেশ চালিয়ে নেয়ার মত সমাগম ছিল। অথচ অত্যন্ত আকস্মিকভাবে সমাবেশ বন্ধের ঘোষণা দেয় বিএনপি-যা শুনে স্তম্ভিত হয়েছে খোদ বিএনপির কর্মীরা।
সমাবেশ বন্ধের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে সমাবেশ স্থগিত করা হলো। অথচ মূলত জামায়াতের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাপলা চত্বরে। পল্টন এলাকা সম্পূর্ণ সুশৃঙ্খল ছিল। এই পরিস্থিতিতে ‘সংঘর্ষের’ বাহানায় বন্ধ করা হয়েছে সমাবেশ। মূলত এই ঘোষণার পেছনেই লুকিয়ে আছে ঘটনার পেছনের ষড়যন্ত্রটি !!
পর্যবেক্ষক মহল মণে করেন,  দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই  ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সমাবেশের দিন মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জামায়াতকে উস্কে দিয়েছে ঐ একই তারিখ সমাবেশ করতে। যাতে করে দেশের মানুষের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমেরিকার সরকার এদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের বিশেষ করে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া প্রথম ও প্রধান উসকানি দাতা। এদেশের মানুষ যাতে আজীবন পরজীবি হয়ে আমেরিকার দ্বারে ভিক্ষার থালা নিয়ে থাকে সেজন্য বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। আর তাদের এই মিশন বাস্তবায়নে সহয়তাকারী জামায়াত বিএনপি। জামায়াত হলো স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী,গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তানের মিলিটারিদের সহয়তাকারী একমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থানকারী দল। এদের ভিতরে লুকিয়ে আছে হিংস্রতা যা ৭১ এ বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর প্রয়োগ করেছিল। এখন আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে আবারো অপতৎপরতা নেমেছে।
অপর দিকে, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দেখানোর জন্যই বিএনপির সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সমাবেশ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এই সংঘর্ষের সূচনা করেছিল জামায়াত ! প্রশ্ন উঠেছে তবে কী ২৬ অক্টোবর মার্কিন দূতাবাসের সাথে জামায়াতের গোপন বৈঠকের পরই এমন সংঘর্ষের সূচনা করা হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পিটার হাসের দৃষ্টিকটু তথা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কথা-বার্তা ও চলাচল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা ব্যতীত কিছুই নয়! পাশাপাশি, দূতাবাস প্রধান হিসেবে পিটার হাসের অনুমতি ছাড়া জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তার সাথে গোপন বৈঠক করতে পারেন না। উপসংহারে বলা যায় পিটার হাসকে সন্তুষ্ট করতেই বিএনপি-জামায়াত মেতে উঠেছিল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ! যার ফলশ্রুতিতে পুলিশ কর্মীসহ ২জনকে জীবন দিতে হয়েছে। এই সবকিছুর দায়-দায়িত্ব পিটার হাস কি এড়াতে পারেন?
লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ঢাকা। সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

অরুণ কুমার গোস্বামী মত-দ্বিমত সহিংসতায় পুলিশের মৃত্যু: দায় এড়াতে পারেন না পিটার হাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর