Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মন্ত্রীদের কড়া বার্তায় সুফল আসবে তো

রাজন ভট্টাচার্য
৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২২

‘সিন্ডিকেট করে যারা ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। সব পণ্যই উৎপাদন এবং মজুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এরপরও দাম বেশি কেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাংস, ডিম এবং মাছের মূল্য কেন বেশি, এসব কেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি যা বলেছেন একথা আশাকরি দেশের সব মানুষের কথা। সকলের অন্তদের উপলব্দি তিনি অনূভব করতে পেরেছেন। এটা অনেক বড় বিষয়। এতোদিন সরকার পরিচালনায় যারা ছিলেন তারা ঠিকই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন বটে। কিন্তু সরাসরি এভাবে বলার হয়ত সাহস করেননি।

সাত জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের ভোটের মধ্য দিয়ে টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের যাত্রা শুরু। এবারের ৩৬ জনের মন্ত্রী সভায় ১৯ জনই নতুন মুখ। তাই নতুনদের চ্যালেঞ্জও অনেক বেশি। স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে সবার দক্ষতা দেখানোর অনেক বিষয় আছে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর গত কয়েকদিনে অনেক মন্ত্রী জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভালো ভালো কথা বলেছেন। অঙ্গীকার করেছেন। দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। প্রশ্ন হলো, সফলতা নিয়ে। তারা কতোটুকু সফল হতে পারবেন, তাই দেখার বিষয়।

কোভিড পরবর্তী ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে। বাংলাদেশেও এর বাইরে নয়। এরমধ্যেই দুনিয়া জুড়ে চলছে ডলার সংকট। এই সংকট ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বিপদ হয়ে সামনে আসে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে দেশ। এরমধ্যে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভয়, ভিসা নীতির চাপ তো রয়েছেই।

সরকারের কাছে মানুষের চাহিদা কী খুব বেশি? অল্প টাকায় নিত্যপন্য কিনে, খেয়ে পরে যেন- বেঁচে থাকা যায়, চিকিৎসা করানো যায়, পড়াশোনার নিশ্চয়তা হয় এটাই তো অনেক কিছু। এইটুকু চাহিদা পূরণ হওয়া মানেই দেশের বেশিরভাগ মানুষের সন্তুষ্টি।

তাই সবখানে আলোচনা একটাই বেসামাল নিত্যপণ্য। রাত পোহালেই দাম বাড়ে পণ্যের। আমদানি নির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। মানছি এ ধরণের পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কেন? নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।

শীত মৌসুমে সবজির বাজারে আগুন। আলুর দাম কেজি প্রতি ৮০টাকা। শতটাকা ছাড়িয়েছে সীমের বাজার। বেগুন কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজ সেঞ্চুরি ছাপিয়ে আরো ১০ টাকা যুক্ত হয়েছে। এসব পণ্য তো বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে না। তাহলে মৌসুমে এত দাম কেন? বাম্পার ফলনের পরও চালের বাজারে অস্থিরতা থামেনি। যা সরকারের গত তিন মেয়াদেও ছিল। অথচ কোন মেয়াদেই চালের বাজার নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলও কম হয়নি। কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং উল্টো চিত্র দেখা গেছে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেক মন্ত্রী নিত্যপণ্য সহ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। ধারাবাহিক আলোচনার মধ্যে থাকা বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘অবৈধ খাদ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স’। মন্ত্রী হিসেবে সঠিক কথাই বলেছেন তিনি। বাস্তবতা হলো তিনি যে সংকট নিয়ে একথা বলেছেন, তা নতুন নয়। পুরনো। আগে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কখনও কখনও খাদ্য মজুদদারদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কখনও বাজার নিয়ন্তণ করতে না পেরে কার্যত ব্যর্থতার কথাও বলেছেন। তবুও মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। এবার সফলতা দেখানোর বিষয়ে তিনি পিছ পা হবেন কিনা জানিনা।

‘সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তাদের ছাড় নয়’ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৭ জানুয়ারি এমন কড়া বার্তা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। ‘কৃষি পণ্যের মধ্যস্বত্বভোগীদের ধ্বংস করা হবে’ এমন বার্তা এসেছে কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ সরকার মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যাপারে বেশ ওয়াকিবহাল। ঘাপটি মেরে থাকা এই সুবিধাভোগিদের যদি থামিয়ে দেয়া যায় তাহলে অবশ্যই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বাধ্য।

এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেশি নিলে ৩৩৩ অভিযোগ জানানো যাবে, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই সুবিধা চালুর কথা জানিয়েছেন প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ‘জুলাই থেকে সিন্ডকেট বলতে কিচু থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। আসন্ন রমজানে নিত্য পণ্যেও দাম বাড়লেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন এই প্রতিমন্ত্রী।

বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর কথায় বাজার পরিস্থিতির কথা ওঠে এসেছে। তার মানে হলো সরকার বিষয়টি নিয়ে হয়ত গভীরভাবে ভাবছে। নতুন সরকারের দক্ষতা দেখানোর প্রথম পদক্ষেপ যদি ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ’ হয় তাহলে এরচেয়ে খুশির খবর আর কিছু হতে পারে না। এ বিষয়টি সরকারের চমক কিনা জানিনা। তবে এই চমক সবাই সাদরে গ্রহণ করবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম আর পণ্যবাহি পরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেই বাজার পরিস্থিতি উন্নতি হবে। এর বাইরে অন্যান্য করণীয় নিয়ে সরকার কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক।

নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘পরিবহনে চাঁদাবাজি চলবে না’। তিনি যদি কঠোর থেকে এ কাজটি অর্ধেকও নামিয়ে আনতে পারেন তাহলে পরিবহনে নৈরাজ্য কমবে। কমবে সড়কপথের দুর্ঘটনা। এরসঙ্গে পণ্যের ঊর্ধমুখি পারদও নেমে আসতে বাধ্য।

রেলের কালো বিড়াল ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন রেলমন্ত্রী জিল্লুর হাকিম। এই কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষ পর্যন্ত চেয়ার ছাড়তে হয়েছিল। দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। যদি নুতন মন্ত্রী কালো বিড়াল ধরতে পারেন তাহলে গোটা রেলওয়ে বদলে যাবে। কতোটুকু শক্ত থেকে তিনি দায়িত্বে এগিয়ে যেতে পারবেন সেটাই বড় বিষয়।

দেশের স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এরমধ্যে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রী সামান্ত লাল সেন বলেছেন, অবৈধ-ক্লিনিক ও হাসপাতালের নামে অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা হবে। কাজটি খবুই কঠিন। দুবৃত্তদের হাত অনেক লম্বা। তবুও আশায় বুধ বাধা যেতেই পারে। তিনি সফল হলে স্বস্তি পাবে গোটা দেশের মানুষ।

দ্রুত ন্যায় বিচার করে জনদুর্ভোগ কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি যদি বিচার বিভাগের এই সংকট দূর করতে পারেন তাহলে ধারাবাহিত দুর্ভোগের মধ্যে থাকা বিচার প্রার্থীরা খুশি হবে। নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল হবে দেশের ভাবমূর্তি।

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

মত-দ্বিমত মন্ত্রীদের কড়া বার্তায় সুফল আসবে তো রাজন ভট্টাচার্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর