রমজানে পণ্যমূল্য কমাতে হবে
৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৫
পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী বার্তা শুরু হয়েছে। রোজাকে সামনে রেখে তার প্রস্তুতিও চলছে। দেশে দেশে মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে চলছে নানা আয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রোজা উপলক্ষে কতশত পণ্যে মূল্যছাড় দেয়া যায় তার প্রতিযোগিতা চলছে। আর আমাদের দেশের চিত্র পুরো উল্টো। অবশ্য বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও বিগত অপ্রত্যাশিত করোনাকালীন দুর্যোগ সময় পার করতে না করতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর আগেও পৃথিবীব্যাপী দেশে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে কিন্তু তাতে সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে এমন বিরুপ প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বিশেষ করে করোনাকালীন দুর্যোগের সময় অর্থনীতি প্রায় বছরদুয়েক স্থবির হয়ে পড়েছিল। সেই প্রভাব এখনও শেষ হয়নি, মানুষ কর্মহীন হয়ে গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত এসেছে। তার উপর এই অনাকাঙ্ক্ষিত রাশিয়া -ইউক্রেন ও ইসরাইল- ফিলিস্তিনি যুদ্ধ। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কষ্টে আছে তুলনামূলক গরীব ও উন্নয়নশীল দেশ ও দেশের মানুষ। বিশ্বের তথাকথিত পরাশক্তিদের ক্ষমতা প্রদর্শনের দম্ভের কারনে মানবজাতি আজ চরম দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে। যার সাথে সাধারণ মানুষের ন্যূন্যতম কোনও সম্পর্ক নেই। মানুষ্যসৃষ্ট এই দুর্যোগে আজ সাধারণ মানুষ কাহিল। এর প্রভাব এসে পড়েছে আমাদের দেশেও। যা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এদেশের সাধারণ জনগন।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে একদিকে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কাজ নাই। যুদ্ধসহ নানা কারনে ডলারের দাম বেড়েছে, চলছে ডলার সংকট। তার কারনে আমদানি কমেছে, পক্ষান্তরে বিশ্বব্যাপী আমদানি নির্ভর পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতির সব জায়গায় আঘাত হেনেছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। নিত্যপন্যের মুল্য বাড়তে বাড়তে এখন তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। খাদ্যশস্য থেকে ওষুধ, বিলাসী পণ্য থেকে নিত্য ব্যবহার পন্য সব কিছুর দাম আকাশচুম্বি। বলা যেতে পারে মানুষের আয় বেড়েছে তাই জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। কিন্ত সার্বিক বিবেচনায় আয়ের চাইতে ব্যয় অনেকাংশে বেড়েছে। যে কারনে মানুষের সঞ্চয় দিন দিন আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এই সঞ্চয় ফুরিয়ে গেলে মানুষের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হবে। একদিকে যুদ্ধবিগ্রহ অন্যদিকে দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েন , একটা অনিশ্চিত অবস্থায় আছে মানুষ। কারো যেন কোন দায়িত্ব নেই। বাজার পরিস্থিতি অস্থির। যে যেমন পারছে করে নিচ্ছে। সবজির দাম আকাশচুম্বি, আজ যার দাম ত্রিশ টাকা তো কাল পঞ্চাশ টাকা। মাছ মাংসের দাম নাগালের বাইরে। পেয়াজের দাম সিজনেও একশ টাকার বেশি কেজি । লেবুর দাম দ্বিগুণ, আদা রসুনের দাম প্রতি কেজি দুইশো টাকার উপরে। প্রান্তিক কৃষকদের থেকে কম দামে কিনে সাধারণ ক্রেতা পর্যায়ে কারা এই উচ্চ মুল্যে বিক্রি করে তা কেউ জানে না। সব জায়গায় শোনা যায় সিন্ডিকেটের কথা। কারা এই সিন্ডিকেট? কোথায় তাদের ক্ষমতার উৎস? তারা কি সরকারের চেয়েও ক্ষমতাবান! নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত বাড়ার কারন কি? সরকারকে বিপদে ফেলা না অন্য কিছু?
যেহেতু দেশের সবকিছু ভালো-মন্দের জন্য সরকারকে দায়ী করা হয় বা সরকারের দায়িত্বে থাকে। সে ক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে মনে রাখতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে। যা এই মুহূর্তে দেশে বিদ্যমান। সরকার ইতোমধ্যে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে এসেছে। নতুন উদ্যমে কাজও শুরু করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সাধারণ মানুষ ডাল ভাত খেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করতে চায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামই এখন মানুষের প্রথম মাথাব্যথা। দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানি নেই বললেই চলে। নাগরিক সুবিধা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। আগের চাইতে জীবন মানেরও উন্নতি হয়েছে। সেই উন্নতিকে স্থবির করে ফেলেছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। দেশের অভূতপূর্ণ উন্নয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন শিক্ষার উন্নয়ন সব কিছুকেই আড়াল করে চোখে পড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। মানুষ জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছে। সরকারের অনেকেই হয়তো বিষয়টি আড়াল করতে চায়, তাতে ফল ভালো হবে না। সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস তার প্রতি আছে। অযোগ্যদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। সিন্ডিকেট করে যারা দাম বাড়ায় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি দেশের যেকোনো সমস্যা চিহ্নিত করে যখনই পদক্ষেপ নিয়েছেন তার সমাধান হয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান হয়েছে, প্রায় প্রান্তিক পর্যায়ে আজ ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। নতুন করে গ্যাসের ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম অল্প কিছু কমানো হয়েছে যেটা ভালো লক্ষণ। এই মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব জিনিসপত্রের দাম আর এক দফা বেড়ে যাবে। সামনে রমজান অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানকে সামনে রেখে এমনিতেই দাম বাড়িয়ে দেয়। তার উপর গ্যাস -বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব কিছুরই দাম বাড়বে। সাধারণ মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না। জন অসন্তোসও বেড়ে যাবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের শিক্ষার সুযোগ আছে,স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। এসবই এখন দৃশ্যমান। কিন্তু সবকিছু ম্লান হতে চলেছে পন্যমুল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে। শুনতে খারাপ শোনা যায় কিন্তু এটাই বাস্তব কারণ। সাধারণ মানুষের দিকে কান পাতলে স্পষ্ট বোঝা যায়। সরকারকে যেকোন উপায়ে নিত্য পন্য মূল্যের লাগাম টেনে ধরতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে আরও ভর্তুকি বাড়াতে হবে,তথাকথিত সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং এর সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা যাই হোক এই মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনধারন ক্ষমতা। এই সমস্যার সমাধানে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ রোজা সন্নিকটে , ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপন্য মূল্যের বাজার এই অবস্থায় থাকলে মানুষের কষ্টের শেষ থাকবে না।
একথা অস্বীকার করার উপায় নাই সরকারকে নানাভাবে বিপদে ফেলতে অব্যাহতভাবে চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্তের অন্যতম একটা কারন হতে পারে বর্তমান বাজার সমস্যা। এমনিতেই করোনা,যুদ্ধের কারনে সাধারণ মানুষ অনেক কস্টে আছে। দিন মজুররা তবুও দৈনন্দিন কাজ করে দিননিপাত করছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ খুব বিপদে আছে ‘না পারছে কইতে না পারছে সইতে’। আয় ইনকাম দৃশ্যমান ভাবে কমে গেছে,কিন্তু খরচ কমে নাই। প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। যে যেমন ভাবে পারছে ইনকাম করে নিচ্ছে। কোন ধরনের লাজলজ্জা নাই,দেশপ্রেম নাই। যেন অসৎ কাজের প্রতিযোগিতা চলছে। এরাই প্রভাবশালী, এদের ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এদের জায়গা হতে পারে না। এদের জন্য ত্রিশ লক্ষ শহিদ জীবন দেয় নাই। বঙ্গবন্ধু এদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে গেছেন। তাই এখন বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই এগিয়ে আসতে হবে। এই সব দুর্নীতিবাজদের কোন দল নাই, এরা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু, দলের শত্রু। এদের একটাই পরিচয় এরা দুর্নীতিবাজ লুটেরা, দেশদ্রোহী।
তাই এসব থেকে পরিত্রাণে বাজার ব্যবস্থায় কঠোর মনিটরিং এর মাধ্যমে যে কোনোওভাবে নিত্যপন্য মূল্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতেই হবে। নতুন সরকার নতুন তরুণ বাণিজ্যমন্ত্রী। মানুষ আশায় আছে। বাজারে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যসহ যেসব পণ্য অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবত যারা গুদামজাত করে রেখেছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। যারা পর্যাপ্ত পণ্য থাকতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি মুনাফা করতে চায় তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সর্বোপরি আগামীদিনের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ বৃদ্ধি করতে হবে। পৃথিবীব্যাপী দুর্ভিক্ষের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। কৃষকের নানা ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। আর রোজার জন্য নিতে হবে তড়িৎ ব্যবস্থা।
লেখক : রাজনীতিক,কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
মত-দ্বিমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার রমজানে পণ্যে মুল্য কমাতে হবে