ইতালি রাজনীতির যুগ পরিবর্তন
২৭ মে ২০১৮ ১২:১৩
ইতালিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে অভিনেতা থেকে প্রতিবাদী থেকে নতুন আন্দোলনের স্রষ্টা বেপ্পে গ্রিল্লোর দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন, “ফাইভ স্টার মুভমেন্ট” এবং চরম ডানপন্থী “লীগ”। ধনীদের ধামাধরা মিডিয়া মোঘল বার্লোসকোনির মধ্য ডানপন্থী দল “ফরজা ইতালিয়া” এবং মাত্তেও রেঞ্জির নেতৃত্বাধীন মধ্য বামপন্থী দল “ডেমোক্রেটিক পার্টি”র দিন শেষ। নতুন নেতৃত্ব পরিচালনা করবে ইতালির সরকার। বিগত শতাব্দীর নব্বই এর দশকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্বক নাটক করা অভিনেতা বেপ্পে গ্রিল্লো জনপ্রিয় হয়েছিলেন নিজের প্রতিভাগুণে। এরপর তিনি বন্ধুদের পরামর্শে রাজনীতির অসঙ্গতি নিয়ে ব্লগ লিখতে শুরু করেন। ব্লগের পাঠকের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায় কিছুকালের মধ্যে। তাঁর তরুণ অনুসারীদের নিয়ে ৯ সালে সৃষ্ট রাজনৈতিক আন্দোলনটি এখন ইতালির সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। ফাইভ স্টার মুভমেন্টকে রাজনৈতিক দল মনে করেন না এর সদস্যরা। তারা বলেন, এটা একটা আন্দোলন। বেপ্পে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ১৫ সালে। আন্দোলনের নেতৃত্বে এখন আছেন বেপ্পের শিষ্য ৩১ বছর বয়স্ক ডি মাইও। মাইও’র নেতৃত্বে ৩২% ভোট পেয়ে ইতালির সর্ব বৃহৎ দলে পরিণত হয়েছে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কোয়ালিশন করতে হচ্ছে অভিবাসন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিরোধী লীগের সঙ্গে। কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন না নির্বাচনে নেতৃত্ব দেয়া মাইও। এ জন্য মনোনিত হয়েছেন ফ্লোরেন্স ইউনিভার্সিটির ৫১ বছর বয়স্ক আইনের অধ্যাপক এবং ফাইভ স্টার কর্মি গিউসেপ্প কন্তে।
২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কট থেকে শুরু করে পশ্চিমা দুনিয়াব্যাপী ২০১১ সালের অর্থনৈতিক ধ্বস সমাধান করতে গিয়ে কায়েমী স্বার্থবাদীরা এঞ্জেলা মার্কেলের নেতৃত্বে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে যে আর্থিক নীতিমালা (কৃচ্ছতা সাধন নীতি) গ্রহণ করেছিল তার ফল হয়েছে ইউরোপব্যাপী অভাব। কৃচ্ছতা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে কমানো হয়েছে সরকারী খরচ; বাড়ানো হয়েছে কর। সরকারী খরচের একটা বড় অংশ যায় সাধারণ মানুষের পকেটে। কৃচ্ছতা নীতির ফলে ইউরোপের দেশে দেশে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কমেছে পেনশন, স্বাস্থ্য সুবিধা, মজুরী। বেড়েছে বেকারত্ব, অভাব। আধপেট খেয়ে থাকতে হয়েছে ইউরোপের সাধারণ মানুষদের। এ নীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছেঃ গ্রীস, ইতালি, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, স্পেন। ১১-১২ সালে ইউরোপের শহরে শহরে হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিবাদ। অন্যদিকে, এ নীতির ফলে বেড়েছে ধনীদের আয়। বেড়েছে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য। গত দশ বছরে একেটি দেশে সরকারের পর সরকার বদল হলেও পিছু ছাড়েনি অভাব। ক্ষেপে ছিল ইতালিয়ানরাও। এক-তৃতীয়াংশ তরুন সেখানে বেকার। তাদের দুর্গতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দুর্নীতি আর অভিবাসনকে। ঐতিহ্যবাহী দলগুলোকে বাদ দিয়ে এবার বেশিরভাগ মানুষ ভোট দিয়েছে সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতাহীন প্রথা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং দুর্নীতি বিরোধী ফাইভ স্টার মুভমেন্টকে আর অভিবাসন সংস্কারকে প্রধান ইস্যু হিসেবে উপস্থাপন করা লীগকে। ইতালিয়ানদের ধারণা – প্রতিষ্ঠিতরা যখন পারছে না তখন নতুনেরা পারবে নিশ্চয়!
এঞ্জেলা মার্কেলের কৃচ্ছতা নীতি আর তাঁর পূর্বসুরী রিগান-থ্যাচারের তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি ব্যাকফায়ার করতে শুরু করেছে কয়েক বছর আগে থেকেই। শুধু ইতালিতেই নয়, পশ্চিমের দেশে দেশে একে একে হটিয়ে দিচ্ছে কায়েমী স্বার্থবাদীদের; জেগে উঠছে নতুন ধারার রাজনীতি। বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গার পর থেকে ইউরোপে, আমেরিকায় লিবারেল ধারার যে রাজনীতি সৃষ্টি হয়েছিল তাতে গা ভাষিয়ে আর্থিক সুবিধা পেয়েছে কট্টরপন্থী এবং মধ্য বামপন্থী সকলেই। মধ্য বামপন্থীরা নিজেদের অনেক এজেন্ডা ভুলে গিয়ে তারাও হয়ে উঠেছিল পুঁজিবাদের সমর্থক। তাদের সঙ্গে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না রক্ষণশীলদের। এ পরিস্থিতির সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন বৃটিশ মধ্যবাম লেবার পার্টি আর বিল ক্লিন্টন ও বারাক ওবামা’র নেতৃত্বাধীন মার্কিন মধ্যবাম ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। আগ্রাসী পুঁজিবাদ সৃষ্ট ৮ সালের অর্থিক সঙ্কট চোখ খুলে দিয়েছে পশ্চিমাদের। জেগে উঠেছে পশ্চিমের মানুষ। একে একে বয়কট করছে ঐতিহ্যবাহী বাম, ডান সব শোষকদের। শূণ্য স্থান পুরন করা হচ্ছে পুঁজিবাদের এ সঙ্কট যারা জনগণের কাছে তুলে ধরছে তাদের দিয়ে।
এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রীসে ধামাধরা রাজনৈতিক দলগুলোকে হারিয়ে দিয়ে ১৫ সালে ক্ষমতায় এসেছে তরুণ বামপন্থী নেতা আলেক্সিস সিপ্রাসের ১২ সালে গড়া দল “সিরিযা”। ফ্রান্সের ক্ষমতায় এসেছে রাজনীতিতে আনকোরা ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সদ্য গঠিত দল “দ্যা মার্চ”। তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছিল মেরিন লী পেনের চরম ডানপন্থী দল “ন্যাশনাল ফ্রন্ট”। বৃটেনে হয়েছে বেক্সিট আর পুঁজিবাদীদের ধামাধরা লেবার দলের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন বামপন্থী জেরেমি করবিন। রাজনীতিতে টিকে থাকতে থেরেসা মে বদলে নিয়েছেন তাঁর রক্ষণশীল দলটিকেও। পোল্যান্ডে জারসলো কাচজিনেস্কি, হাঙ্গেরীতে ভিক্টর ওরবান আর আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প – সবই আগ্রাসী পুঁজিবাদের ব্যুমেরাং। নতুন যুগে যুক্তরাষ্ট্র কাঁপাচ্ছেন অপ্রথাগত রাজনীতিবিদ বার্নি স্যাণ্ড্রাস। নতুন রাজনীতিতে টিকে থাকতে জার্মানীর রক্ষণশীলেরাও নিজেদের বদলেছেন অনেক। সর্বশেষ নির্বাচনে কোন মতে টিকে গিয়ে গঠন করেছেন সরকার। সেখানের মধ্যবাম এসপিডি এখন রক্ষণশীলদের আঁচলের তলায়; প্রধান বিরোধীদল চরম ডানপন্থী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানী (এএফডি)। ৮ সালের আর্থিক সঙ্কট আমূল বদলে দিচ্ছে পশ্চিমাদেশগুলোর রাজনীতি। পশ্চিমা কায়েমী স্বার্থরক্ষীরা এই নতুন ধারার রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে আসা দলগুলোকে তাচ্ছিল্য করে বলছে “পপুলিজম” যাকে বাংলায় বলে “লোকরঞ্জনবাদ”। পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মিডিয়ায় “পপুলিষ্ট” এবং “পপুলিজম” এখন একটা গালি।
ফিরে আসি ইতালির সাম্প্রতিক রাজনীতিতে। মার্চের জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বৃহত্তম দল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ডি মাইওর নেতৃত্বাধীন ফাইভ স্টার মুভমেন্ট (৩২%), দ্বিতীয় মধ্যবাম ধারার দল ক্ষমতাসীন মাত্তেও রেঞ্জি’র ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (১৯%), তৃতীয় হয়েছে মাত্তেও সালভিনি’র চরম ডানপন্থী লীগ (১৮%) এবং চতুর্থ বার্লোসকোনির ফরজা ইতালিয়া (১৪%)। কোয়ালিশন সরকার গঠন করবে ফাইভ স্টার এবং লীগ। ১৯৯১ সালে গঠিত উত্তরের আঞ্চলিক দল লেগা নর্ড ১৮ সালের নির্বাচনে সালভিনির নেতৃত্বে নতুন ভাবে ব্রান্ডিং হয়ে নাম নিয়েছে “লেগা” যা ইংরেজিতে “লীগ”। উত্তরের ধনীদের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করা লীগের প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুগুলো হচ্ছেঃ ফেডারেল ব্যবস্থা; আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন। সালভিনি’র নেতৃত্বে দলটি আঞ্চলিকতা ছেড়ে ইতালিয়ান জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউরো বিরোধীতায়, বিশ্বায়ন বিরোধীতায় এবং অভিবাসন নীতি সংস্কারসহ অন্যান্য লোকরঞ্জনবাদী ইস্যুতে। দলটি যুক্ত রয়েছে ইউরোপের অন্যান্য চরম ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ ফান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট, নেদারল্যান্ডের পার্টি ফর ফ্রিডম এবং অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে।
ফাইভ স্টার মুভমেন্ট না বাম না ডান। কোন পন্থার মধ্যে তাদের ফেলতে পারছেন না ইউরোপের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, এটা একটা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যসূচক ইতালিয়ান বিষয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এরা যাত্রা শুরু করেছিল। এরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নীতিমালার বিরোধী; আগ্রাসী পুঁজিবাদের সমালোচক; কায়েমী স্বার্থবাদীদের বিরোধী। এরা মধ্যপন্থী; জাগিয়ে তুলেছে পিছিয়ে পড়া ইতালিয়ানদের; কথা বলেছে ক্ষুদ্র এবং মধ্যম আকারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে; ভোট টেনেছে মধ্যবামদের। ফাইভ স্টার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায়; অভিবাসী এবং শরনার্থী সমস্যার সমাধান করতে চায়; ফসিল ফুয়েল হটিয়ে দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবস্থা করতে চায়। দ্যা গার্ডিয়ানের কলাম লেখক লরেঞ্জো মার্সিলি লিখেছেন, “এরা ক্রমশ মধ্যপন্থার দিকে ধাবমান। এরা কি প্রথা বিরোধী, বামপন্থীদের শূণ্যস্থান পুরন করতে এগিয়ে আসছে?”
ফাইভ স্টার দলটির কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কারো মধ্যে দেখা যায় না। যেমন ডাইরেক্ট ডেমোক্র্যাসী। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে দলের নেতারা। এতে দলের সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে না। যারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সদস্যদের প্রতিনিধি হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিজের মত করে নিয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রেই তা সাধারণ সদস্যদের মতের প্রতিফলন করে না। জাতীয় জীবনেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সংসদ সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে নিজের এবং দলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। প্রতিনিধির মাধ্যমে অধিকার আদায়ের এ ব্যবস্থা বাস্তবে প্রতিনিধিদের ক্ষমতাবান করে তোলে – একদল মধ্যস্বত্বভোগীর সৃষ্টি করে। এই মধ্যস্বত্বভোগীরা সদস্য বা জনগণ থেকে দূরে থেকে দুর্নীতির সুযোগ পায়। এ সমস্যা সমাধান করে ফাইভ স্টার সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সদস্যদের মধ্যে অনলাইন ভোটিং এর মাধ্যমে। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা বিষয়টি ব্লগে আলোচনার জন্য ছেড়ে দেয়। তারপর পর্যাপ্ত আলোচনা, বিতর্কের পর এরা অনলাইনে ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থাকে তারা বলছেন, ডাইরেক্ট ডেমক্রেসী। ফাইভ স্টারের অন্যতম দাবী হচ্ছে সবার জন্য ইন্টার্নেট। তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকাকে এরা একটি অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে।
রাজনীতিকে ফাইভ স্টার পেশা মনে করে না। তাদের মতে রাজনীতি হচ্ছে সমাজ সেবা। একজন মানুষ তার সুবিধামত সময়ে রাজনীতিতে কয়েক বছর যুক্ত থেকে সমাজের সেবা করে যাবেন। কোন ব্যাক্তি তার জীবনে যেকোন পর্যারের পদে দুই বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না। ফাইভ স্টার সদস্যদের কোন অপরাধের রেকর্ড থাকতে পারবে না। অর্থাৎ কোন অপরাধের কারণে শাস্তি প্রাপ্ত ব্যাক্তি রাজনীতি করতে পারবেন না। এমন কি সাজা ভোগ করার পরেও নয়। ফাইভ স্টার কোন রাজনৈতিক দল বা সঙ্ঘের সঙ্গে আবদ্ধ হয় না। এ কারণে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কোন এলায়েন্সের সঙ্গে তাদের কোন বন্ধন নেই। এই নীতির ফলে তাদের অন্যের নীতি এবং আদর্শের কাছে নিজেদের নীতি এবং আদর্শের আপস করতে হয় না। ফলে তারা নিজেদের নীতি এবং আদর্শ ঊর্ধে তুলে ধরে অন্যদের থেকে নিজের অবস্থানের ব্যবধান পরিস্কার করে তুলে ধরতে পারে।
ফাইভ স্টার আর লীগের কোয়ালিশনকে সহজে গ্রহণ করতে পারছেন না রাজনৈতিক এলিটেরা, কায়েমী স্বার্থরক্ষী মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ। তাদের বক্তব্য, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতাহীন দলদুটি ব্যর্থ হতে বাধ্য। ফাইভ স্টার এবং লীগের কোয়ালিশন সরকার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর পরে গেছে শেয়ার বাজারে। এই দুই দলের সরকার যে কায়েমী স্বার্থবাদীদের অনুকুল হবে না তা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বোঝা গিয়েছিল স্পষ্ট। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে একটা সমঝোতার সম্ভাবনা ছিল। ফাইভ স্টার তাদের সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের উম্মুক্ত রেখেছিল। সে সুযোগ বাতিল করে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা মাত্তেও রেঞ্জি। উত্তরের ধনীদের স্বার্থ দেখা লীগের সঙ্গে দক্ষিণের এবং কেন্দ্রের গরীবদের ভোট পাওয়া ফাইভ স্টারের সরকার চালানো কঠিন হবে নিঃসন্দেহে। এই দুই দলের মধ্যে কমন ফ্যাক্টর শুধু ইউরো বিরোধীতায়। সেক্ষেত্রেও ফাইভ স্টারের গলা নামানো। তাদের সামনে রয়েছে পাহাড় পরিমাণ সমস্যা। নির্বাচনী প্রচারণা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা করেছে আকাশচুম্বী। যে পরিমানের কর কর্তন এবং সরকারি খরচ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন তার পরিমাণ ৬০ – ১০০ বিলিয়ন ইউরো। এর উপরে রয়েছে ২.৩ ট্রিলিয়ন ইউরোর ঋণ যা জিডিপি’র ১৩২%। সদিচ্ছা থাকলে কোন চ্যালেঞ্জই অনতিক্রমণ্য নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে, কায়েমী স্বার্থবাদীদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ সামলে দিয়ে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাতব্বরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে পৌঁছান যাবে লক্ষ্যে। অন্যথায় ভেঙ্গে পরতে সময় লাগবে না তাদের ঘিরে দেখা সাধারণের অভাব মুক্তির স্বপ্ন।
সারাবাংলা/এমএম