Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেতৃত্ব দেওয়ার শর্ত

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
২১ মে ২০২৪ ১৫:৫০

রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতিকদের ক্ষমতাধর হওয়ার অতি উদ্যোগ রয়েছে। একজন রাজনীতিকের কাজ হল, জনস্বার্থ উদ্ধারে প্রথমত সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সমর্পণের অঙ্গিকার করা। অতঃপর ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিচরিত্রকে সততার নজীরে, দক্ষতার দৃষ্টান্তে, দেশপ্রেম ও দূরদৃষ্টির আলোকে প্রস্তুত করে সামাজিক নেতৃত্ব থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে রাজনৈতিক পরিসরের নেতা হওয়ার উপলক্ষ তৈরি করা। তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির মঞ্চে অর্থ ও তোষামোদির মত দু’টো অসুস্থ অস্ত্রের মাধ্যমে যে কেহ ‘দুই দিনের রাজনৈতিক কর্মী’ থেকে নেতা হয়ে পড়ছেন।

বিজ্ঞাপন

যোগ্যতা ও ত্যাগ— একজন রাজনীতিকের জন্য যে কত বড় অত্যাবশ্যক দুইটি ধর্ম, তা বুঝতে চায় না তৃণমুল কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে থাকা কতিপয় কথিত রাজনীতিকেরা। মনে রাখা দরকার যে, যোগ্যতা অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে নেতৃত্বের মৌলিক গুনাবলি না থাকলে এবং তা দীর্ঘমেয়াদী দলিয় আনুগত্যে প্রমাণিত সত্য না হলে তাদের ওপর আস্থা অর্জনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় না। অথচ, কালো টাকা ও পেশীশক্তির মাধ্যমে এই বাংলাদেশে আজ রাজনীতিতে এসে আগামীকাল বড় বড় নেতাদের হাতে এনে রাজনীতিক বনে যাওয়ার হিড়িক আছে। এই ধরণের রাজনৈতিক অসংস্কৃতি রুখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ওয়ারেন বেনিস বলেছিলেন, ‘নেতৃত্ব হল একটি দর্শনকে বাস্তবে রূপান্তর করার ক্ষমতা’।— এমন মতবাদে সিক্ত হয়ে বাংলাদেশে আমরা কতজন রাজনৈতিক নেতা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারছি? জাতীয় পর্যায়েই তো তেমন সংখ্যা নগণ্য পর্যায়ের। আঞ্চলিক পর্যায়ে আরো তথৈবচ প্রেক্ষিত। এভাবে চলে না। উদাহরণস্বরূপ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দর্শনে মজে গিয়ে অপরাহ্ণ করে আমরা কতজন সাধারণ মানুষের সামনে তা তুলে ধরতে পারছি?

অন্যদিকে প্রচলিত আরেকটি মতবাদ রয়েছে। তা হল, ‘নেতৃত্ব শুধুমাত্র সাথে থাকার জন্য চলতে পারে না। নেতৃত্বকে অবশ্যই আজকের নৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।’ — এখানেও রাজনীতিকবর্গকে হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রতিটি দিবসেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতায় যেতে হবে। অথচ, সচিবালয়ের ফ্লোরে যেয়ে তদবির করা ছাড়া নেতৃস্থানীয় সত্তাসমুহের আর যেন কোন কাজই নেই।

একটি পুস্তক পড়ে যদি পাঠচক্র করে পাঠকশ্রেণি অভ্যাসরত হয়, তাহলে উক্ত বই থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিজেদের জীবনে প্রভাব তো ফেলবেই, লেখকের উল্লেখযোগ্য বার্তাও নিষ্পত্তি হবে। ঠিক একই ভাবে একটি মতবাদের ওপর আস্থা রেখে বলছি, ‘নেতারা চিন্তা করে এবং সমাধানের কথা বলে। অনুসারীরা চিন্তা করে এবং সমস্যার কথা বলে।’ কাজেই নেতা ও অনুসারীদের ওই পাঠচক্রের মত করে নিত্য বৈঠকের আয়োজনে যেয়ে জনস্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা না থাকলে রাজনীতি কী করা হল? আমরা কি এখানেও নিজেদের প্রমাণ করতে পারছি?

খুব সহজ করে বললে, ‘নেতাদের জন্ম হয় না, তারা তৈরি হয় এবং তারা তৈরি হয় অন্য যেকোন কিছুর মতো- কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।’ নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা তখনই তৈরি হয়, যখন সে নেতার আদর্শ তুলে ধরার জন্য নিজেকে গড়ে নিতে পারে। আবার পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরী হিসাবে হয়তো একটা সুবিধে আছে। তা হল, জনশ্রেণি আগভাগেই নির্দিষ্ট সত্তাকে সু স্বাগত জানায়। কিন্তু যোগ্যতা, মেধা, দলিয় আনুগত্য না থাকলে ওই নবাগত কী টিকে থাকতে পারবেন? পূর্বসূরীদের ছাপিয়ে যেয়ে উত্তরসূরীরাও শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক হিসাবে আবির্ভূত ভতে পারেন, তাও মনে রাখতে হবে।

রাজনীতি করতে যেয়ে পরিমিতিবোধ, শিষ্টাচারকে সঙ্গি করার পাশাপাশি মূল্যায়নের নানাবিধ দিকি নিয়েও ভাবতে হবে। নেতা হতে পারা তার নেতৃত্বগুনে উত্তীর্ণ হয়। কেহ তা রুখতে পারে না, যদি তার মধ্যে মানবিক পর্যায়ের সেরা গুনগুলো থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ে আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে মনস্থির করেছি যে, রাজশাহীসহ সারাদেশে জাতীয় নেতা হওয়ার মত অর্ধশত রাজনৈতিক চরিত্র গড়ে দিতে চাই। যারা এই দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসাবে আগামীতে লড়বে।

লেখক: সভাপতিমন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নেতৃত্ব দেয়ার শর্ত মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর