Saturday 14 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছড়িয়ে পড়ছে ‘মস্তিষ্কের পচন’, ঝুঁকিতে কারা?

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৮

মার্কিন লেখক হেনরি ডেভিড থরো ১৮৫৪ সালে তার প্রকাশিত বই ‘ওয়াল্ডেন’-এ Brain Rot শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। ব্রেন’ মানে মস্তিষ্ক, ‘রট’ মানে পচন। তবে তিনি এই প্রেক্ষাপটে শব্দটি ব্যবহার করেন নি। সে সময় ইংল্যান্ডের Potato Rot বা আলুর পচন নিয়ে মানুষের মাত্রাতিরিক্ত গবেষণার প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু আলুর পচন নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না এর চেয়েও মানুষের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার অবনতির মাধ্যমে ব্যাপক ও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া মস্তিষ্কের পচন (ব্রেইন রট) নিরাময় নিয়েও ভাবতে হবে’। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিম্নমানের কন্টেন্ট দেখার হার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার যে অবনতি হয়েছে তা বোঝাতে Brain Rot শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শব্দটির ব্যবহার ২৩০ শতাংশ বেড়েছে। দীর্ঘসময় ফোন স্ক্রল করতে করতে ক্লান্ত মানুষ দিগবিদিক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। ভুলে যাচ্ছেন কেন ফোনটা হাতে নিয়েছিলেন বা কী করার কথা ছিল তার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রিজিবিলস্কির মতে শব্দটির জনপ্রিয়তাই বলে দেয় বর্তমান জনগোষ্ঠী কোন অবস্থায় বসবাস করছে।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে রয়েছে- facebook, messanger, google, instagram, linkedln, pinterest, tumbler, snapchat, twitter, viber, wechat, whatsApp, youtube ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অগ্রপথিক হচ্ছে facebook. আগস্ট ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রায় ২০৪ কোটি ৭০ লাখ। বিশ্বব্যাপী ইউটিউব ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ১৫০ কোটি, হোয়াটসঅ্যাপ ১২০ কোটি, ফেসবুক মেসেঞ্জার ১২০ কোটি ও উইচ্যাট ব্যবহারকারী ৯৩ কোটি ৮০ লাখ (আগস্ট ২০১৭, সূত্র : ইন্টারনেট)। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের জরিপ অনুযায়ী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে (সূত্র : দৈনিক বণিক বার্তা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। ওয়ার্ল্ড অব স্ট্যাটিস্টিকস অনুসারে, বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ব্যক্তিদের তালিকায় ফিলিপাইনের লোকদের নাম রয়েছে। তারা সাধারণত ৪ ঘণ্টা ৬ মিনিটের জন্য এখানে সক্রিয় থাকে। পরের অবস্থানে আছে কলম্বিয়া। তারা দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট সময় কাটায়। এরপর সাউথ আফ্রিকা ৩ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। ব্রাজিল ৩ ঘণ্টা ৪১ মিনিট এবং আর্জেন্টিনা ৩ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। এছাড়া ভারতীয়রা প্রতিদিন গড়ে ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিট সময় ব্যয় করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমেরিকানরা প্রতিদিন প্রায় ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট সময় কাটায়। বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর এই সংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি। তথ্যমতে, ১৬ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি।

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারে মানসিক হতাশা, ক্রোধ আর অসহিষ্ণুতা বেড়ে যায় বলে মনে করেন গবেষকেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অনেক ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। একজন ইংরেজ মনোচিকিৎসক বলেছেন, তিনি বছরে প্রায় ১০০ জনকে মনোচিকিৎসা দিয়ে থাকেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মনোবিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কোনো তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করলে চাকরি ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ২০১৩ সালে ৬টি দেশের ১৭ হাজার তরুণের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ১৬-৩৪ বছর বয়সী তরুণেদের ১০ জনের মধ্যে ১ জন চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৩ শতাংশ নিয়োগদাতা প্রার্থী বাছাইয়ের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্টিং পরীক্ষা করে দেখেন। বেলজিয়ামের Ghent University’র Professor Stijn Baert এক জরিপে দেখিয়েছেন- ফেসবুকে যাদের প্রোফাইল ছবি বিতর্কিত, তারা নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাক পাননি। নিয়োগকারী সংস্থা অনেক সময় চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে ফেসবুক পরীক্ষা করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর গবেষণা করা হয়। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পক্ষে মত দিয়েছেন সব শিক্ষক এবং তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৪৩ ভাগ আমেরিকান ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ায় আবিষ্ট থাকেন। যাদের মাঝে ২০ ভাগ মানুষের মানসিক অবসাদের উৎস হচ্ছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের আসক্তিকে তুলনা করা হচ্ছে ড্রাগ বা অ্যালকোহলের সঙ্গে। কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে এসবে মানুষের আরও বেশি আসক্তি হওয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তবে চাইলেই নিজেকে এই সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে দূরে রাখা যায়। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গড়ে ১৪৪ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে থাকেন। অথচ গবেষকেরা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় দৈনিক ৩০ মিনিট ব্যয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোত্তম। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু ছাত্র পাঁচদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। যা তাদের মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই এক ঘণ্টা বা এক সপ্তাহ বিরত থাকার অভ্যাস এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উত্তম সহায়ক হতে পারে।

মানুষের মেধা বলতে মস্তিস্ককে বোঝায়। সকল স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে মস্তিস্কের নিউরনে। মানব মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়নের মতো নিউরন বা স্নায়ুকোষ রয়েছে। নিউরনের দু’টি অংশ অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট। নিউরনের একটি অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট প্রান্ত পরপর সংযুক্ত থাকে এবং সংযোগস্থলকে বলা হয় সিন্যাপস। এই সিন্যাপসই তথ্য আদান প্রদান এবং স্মৃতি ধরে রাখে। ব্রেন রট বা মস্তিস্কের পচন বলতে নিউরনের সংযোগস্থলের সিন্যাপসের কাজে ব্যাঘাত ঘটানোকে বোঝায়। যখন কেউ কোন বিষয় অত্যন্ত মনোযোগ বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কিছু অর্জন করতে চায় তখন দু’টি নিউরনের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ গড়ে ওঠে। ধরা যাক একটি নিউরন A ক্রমাগতভাবে অপর নিউরন B-কে সক্রিয় করে অ্যাকশন পটেনশিয়াল (স্পাইক) তৈরি করে ফলে সিন্যাপটিক শক্তির দীর্ঘস্থায়ীত্ব হয় এবং এ অবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদী পটেনশিয়েশন (LTP-Long-Term Potentiation) বলে। এ ধরণের কার্যকারিতার ফলে স্মৃতি স্থায়ী হয় এবং তা ধরে রাখার জন্য সিন্যাপসে নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতায় একধরণের প্রোটিন তৈরী হয়ে স্মৃতি দীর্ঘদিন জমা থাকে। খাতায় কলম দ্বারা লিখে রাখার পদ্ধতির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। আর যখন কেউ মোবাইলের টাচ স্কিনে বা কম্পিউটারের মনিটরে হাল্কা ভাবে একই সাথে বিভিন্ন প্রকার কাজ বা তথ্য শুধুমাত্র দেখে বা পড়ে সেক্ষেত্রে তার নিউরন A ধারাবাহিকভাবে নিউরন B-কে স্পাইক করতে ব্যর্থ হয় ফলে সিনাপসের সংযোগ দুর্বল হয়ে এবং সেখানে সুখ হরমোন ডোপামিন কিছুটা স্বস্তি দিলেও স্থায়ীভাবে কোনো তথ্যকে স্মৃতিতে রূপ দেয় না বা প্রোটিন সংশ্লেষ করে না। (Having too much dopamine is linked to being aggressive and having trouble controlling impulses. Dopamine imbalances are also related to ADHD and addiction. Having low levels of dopamine can make less motivated and excited about things.) এ অবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্ণতা (LTD – Long Term Depression) বলা হয়। আবার ডোপামিনের দীর্ঘমেয়াদী এরূপ ভারসাম্যহীনতায় মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের পারকিনসন ব্যাধিতে ভুলে যাবার প্রবণতাসহ শরীরের নড়াচড়ার উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব পড়ে। কাদামাটির ইট পোড়ানো বা শুকানোর আগে বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে বা আঘাত প্রাপ্ত হলে যেরকম নষ্ট হয়ে যায় সেরকম তখ্য স্মৃতিতে পরিণত হতে পারে না এবং স্পাইক করতে বার বার ব্যর্থ হবার কারণে নিউরনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অকারণে মস্তিস্কের এরূপ ব্যবহারকে ব্রেইন রট বা ব্রেইন পচনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় অদৃশ্য শত্রুর সৃষ্টি হয়। একজন পোস্টদাতা জানেন না যে তার সাফল্য কিংবা তার পারিবারিক পোস্টে আর একজন মনোকষ্টে ভুগছেন। এ ধরণের প্রবণতা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে পরশ্রীকাতরতা। পরশ্রীকাতরায়ও মানুষের ব্রেইন রট বা পচন হতে পারে। এ শব্দটি নাকি আমাদের একান্তই নিজস্ব কারণ অন্য ভাষায় এরকম শব্দ নাই। কারো ধন-দৌলত, সম্মান, ভালো ফল বা উচ্চ মর্যাদা দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া এবং তার ধ্বংস কামনা করাকে পরশ্রীকাতরতা বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে পরশ্রীকাতরতা নিয়ে দুটি গল্পের উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথম গল্পটি হলো- একজনকে বলা হলো আপনি যা চাবেন বা নিবেন আপনার প্রতিবেশী তার দ্বিগুন পাবে অর্থাৎ আপনি এক লাখ টাকা চাইলে আপনার প্রতিবেশী দুই লাখ টাকা পাবে। প্রতিবেশি দুই লাখ টাকা পাবে লোকটি পরশ্রীকাতরতায় ভুগে সাথে সাথে বলল আমি টাকা নিব না। তার পরিবর্তে আমার একটি চোখ অন্ধ হয়ে যাক তাহলে আমার প্রতিবেশীর দুটি চোখ আপনা আপনি অন্ধ হয়ে যাবে- আমি এটাই চাই। অন্য গল্পটি হলো- কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বর্গ-নরক পরিদর্শনে গেছেন। স্বর্গ দেখার পর তারা নরক পরিদর্শনে গিয়ে দেখলেন নরকবাসী পাপীদের জ্বলন্ত চুলার ওপর বড় বড় কড়াইয়ে সেদ্ধ করা হচ্ছে। একেকটি কড়াইয়ে একেক দেশের পাপীরা আছে। পাপীরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য কড়াইয়ের চারপাশে প্রহরীরা বড় বড় লাঠি হাতে দণ্ডায়মান। কড়াই থেকে কেউ উঠে পালাবার চেষ্টা করলে তাকে লাঠি দিয়ে গুঁতিয়ে আবার কড়াইতে ফেলা হচ্ছে। পরিদর্শকরা দেখলেন একটি দেশের কড়াইয়ে কোনো পাহাড়াদার নেই। পরিদর্শকরা ভাবলো এরা হয়তো কোনো দেশের ভদ্র নাগরিক। যারা আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল তাই পালায় না। একটু পরেই তারা লক্ষ্য করলেন একজন পালাতে চেষ্টা করলে অন্যরা তাকে বলপূর্বক টেনে নামাচ্ছে। তখন পরিদর্শকরা সহজেই বুঝতে পারলেন এরা কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না তাই এখানে পাহারাদার লাগেনা। এখানে পাপীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘পরশ্রীকাতর’ নামের একটি অটোমেশিন তাদের মস্তিস্কে বসানো আছে- পাঠক নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন এই পাপীরা কোন এলাকার হতে পারে।

আমাদের মস্তিস্কের সত্যিকার মালিকানা অনেক সময় আমাদের নিজেদের হাতে থাকে না। একটু বেখেয়াল হলেই অন্যদের দখলে চলে যায় কিংবা অন্যরা তাদের পরিকল্পনা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয় ফলে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি না। সবসময় আমাদের মস্তিস্ক তাদের মর্জি মাফিক চলে। সারাদিন বিনোদনের জিনিস দেখছি। এসকল কাজ করতে যেয়ে মস্তিস্কের চিন্তার পরিধি কমে যাচ্ছে। আর এই বিনোদনের প্রভাব মস্তিস্ককে প্রভাবিত করছে। কোনো সময় যুব সমাজ বিভিন্ন ধরণের সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে অনুষ্ঠান দেখে একই কায়দায় নৃসংশভাবে আপনজনকে খুন করছে। এগুলো মস্তিস্কের পতনের চেয়েও ভয়ংকর।

বাংলায় ‘হাটে হাড়ি ভাঙ্গা’ বলে একটি প্রবাদ আছে যার অর্থ গোপন কথা প্রকাশ করা। তদ্রুপ ইন্টারনেট দুনিয়াও নানাভাবে আমাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করছে। আমাদের মেধা, শ্রম সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতের সেই অদ্শ্যৃ শক্তির প্রভাবে এবং এভাবেই আমাদের মস্তিস্কের পচন অব্যাহত রয়েছে। ভার্চুয়াল জগতের দক্ষ খেলোয়াড় বা প্রযুক্তি আমাদের নিয়ে খেলা করে, আর আমরা সেই খেলার যথার্থ উপকরণ হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি। নিজেদের চিন্তা-ভাবনা বা কাজ বাদ দিয়ে বিনা বেতনে আমরা স্বনিয়োজিত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি। জমি-জমা, ফ্লাট, স্বর্ণ ইত্যাদির মালিকানা স্পষ্টতই দৃশ্যমান বা এগুলোর লিখিত দলিল/ডকুমেন্ট থাকে। তারপরও মালিক যদি তার ফ্লাটে না থাকেন বা জমি যদি তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে না রাখেন বা চাষাবাদ না করেন তাহলে অনেক সময় দখলদাররা দখল করে নেন। এভাবেই অনেক সরকারি সম্পত্তি বা নদী, খাল, বিল ইত্যাদি অন্যের দখলভূক্ত হয়ে যায়।

কিন্তু মস্তিস্কের মালিকানার কোনো দলিল না থাকায় একটু বেখেয়াল হলে অন্যের চিন্তা, চেতনা, পরিকল্পনা বা মতাদর্শ ব্রেইনে ঢুকে যায়। তখন নিজেকে বা নিজেদের নিয়ে ভাববার সময় একেবারেই থাকে না। আর যারা নিজেদের ব্যাপারে ভাবেন বা ভাববার ব্যাপারে যারা যথেষ্ট সচেতন তারাই প্রকৃত জ্ঞানী এবং তারা নিজেদের ব্রেইনকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। আমরা যদি নিজেদের নিয়ে, দেশকে নিয়ে এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবি তাহলে আমাদের ব্রেইনের পচন ধরবে না বা আমাদের নিয়ে কেউ তার ইচ্ছায় পুতুল নাচের মতো নাচাতে পারবে না।

লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম

সারাবাংলা/এএসজি

ছড়িয়ে পড়ছে ‘মস্তিষ্কের পচন’ মত-দ্বিমত মস্তিষ্কের পচন

বিজ্ঞাপন

বিজয় দিবসে লন্ডনে গাইবে চিরকুট
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৩

আরো

সম্পর্কিত খবর