Sunday 09 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুনের সমারোহ

শায়রুল কবির খান
৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:২০

নতুনের মধ্যে ‘মৌলিকত্ব’ ও পুরোনোতে ‘গুণগত পরিবর্তন’ অপরিহার্য তবেই সমাজে রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্যতা পায়। আর নতুনের মধ্যে মৌলিকত্ব, পুরোনোতে গুণগত পরিবর্তন না থাকলে সাময়িক আলোচনার সূত্রপাত কিংবা উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয় বটে কিন্তু সময়ে সাথে সাথে তার মোহটা হারিয়ে যায়। মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

স্বাধীনতার পর ঊষালগ্নেই নাগরিকদের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ৭৫’র পটপরিবর্তন পর আওয়ামী লীগের বিপরীতে জনশক্তি ও জন-আকাঙ্খা হতাশায় নিমজ্জিত ছিলো। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) রাষ্ট্র নেতৃত্বে এসে জন-আকাঙ্খাভিত্তিক সঠিক দুটি পদক্ষেপ নিলেন। একটি সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ আর ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। একটি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রিন্সিপাল। অন্যটি ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতি শ্রদ্ধা।

বিজ্ঞাপন

তিনি কতটা নিখুঁত আর্কিটেক ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন-সার্বভৌমের ভূখন্ডে নানান ভাষা গোষ্ঠীর নাগরিকদের বিশ্ব দরবারে জাতি রাষ্ট্রের পরিচয় দিলেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ তার প্রধান রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে। ইসলাম ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র না করে সকল ধর্মের নাগরিকদের সমমর্যাদা রেখে একটি ঝুড়িতে অলংকৃত হলো। ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর ভীত অনেক মজবুত ও কঠিন। তার বিপরীতে আগে ও পরে কেউ এমন জায়গা নিতে পারেননি, আর পারার সম্ভাবনাও নেই। এর একটি যৌক্তিক কারণও আছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে দুটি ইস্যু স্হায়ী জায়গায় নিয়েছেন। প্রথমটি ‘১৯৭১ সাল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ’। দ্বিতীয়টি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর হাত ধরে তার নীতি’র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পরিচয় সত্তা যা ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’।

বিজ্ঞাপন

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সঠিকভাবে বুঝেছিলেন এই অঞ্চলের নাগরিকদের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার বা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার জায়গায়টা কোথায়। তার ওপর দীর্ঘ নিবিড় চর্চা ও বিচক্ষণতায় সততার সাথে রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। তাই স্বল্প সময়ে অথাৎ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে রাষ্ট্রপতি হয়ে ৪ বছরের কিছু বেশি সময়ে সবার জন্য শিশু একাডেমি থেকে শুরু করে যুব কমপ্লেক্স ও প্রবীণ নিবাস করেছেন। অর্থনৈতিক মৌলিক মডেল দিলে তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্প আর প্রবাসী শ্রমের কর্মসংস্হান যার বিপরীতে আজ ৫০ বছরের বেশি বয়সে বাংলাদেশে এখনো কেউ করতে পারেননি। কতটা দূরদর্শিতার রণকৌশলী হলে একজন মেজর হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। প্রথম ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’এর অধিনায়ক। প্রথম ৫০০ বর্গ মাইল এলাকা স্বাধীন ঘোষণা করে বেসরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে প্রথম শহীদ সৈনিকদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতা ও একুশে পদক এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্হাপন এগুলো কি আপনারা গুণগত না কি মৌলিক বলবেন? এর বিপরীতে নতুন কি কি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর কর্মকাণ্ড একটি লেখার মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয় এবং তা ভাবনায় নেওয়া ঠিক হবে না।

এবার যে লক্ষ্য রেখে এই লেখা তার মধ্যে মনোযোগ দিতে চাই- গত প্রায় ১৭টি বছর এই দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ নাগরিক চরম নিপীড়ন নির্যাতন হামলা লাখ লাখ মামলা গুম গণহত্যার শিকার হয়েছেন। ২০২৪ জুলাই ৫ আগস্টে ব্যাপক নির্যাতিত ছাত্র জনগণের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়। নতুন প্রজন্ম নিজের নিকট অভিজ্ঞতায় জেনেছে যে রাজনীতির অপব্যবহার রাজনীতিকে কীভাবে আওয়ামী লীগ নিছক ক্ষমতা ও বিত্তের বিনিয়োগে পরিণত করেছিল। তাই তারা ওয়েবসাইট তৈরি করে ইস্যুভিত্তিক ও রাজনৈতিক মতামত–নির্বিশেষে প্রধান বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রামের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে একটি ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠে। সেই অরাজনৈতিক নানা বর্ণের প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ভূত আন্দোলনই আজ অনেক মূল্যের বিনিময়ে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়ে স্বৈরাচার উৎখাত করে বিশাল এক প্রাথমিক বিজয় অর্জন হয়েছে। এই প্রাথমিক বিজয়ই ‘রাষ্ট্রক্ষমতা’ অর্থাৎ স্বৈরাচারের বিদায়ের পর কে সেখানে বসবে, সে প্রশ্ন তুলে ধরেছে জাতির সামনে এই প্রশ্ন কি অতি গুরুত্বপূর্ণ?

আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এবার রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ ঘোষণা করলেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করে আহ্বায়ক হয়েছেন। অন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দ ভিন্ন ভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাদেরকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশদরদী তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাসী এই সময়ে এসে আবারও তাই প্রমাণিত হয়েছে। এত আত্মত্যাগের পর যদি কোনো নতুন সাম্রাজ্যবাদ বা মৌলবাদের আদর্শপুষ্ট ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক শক্তি বা আরও বৈষম্যপূর্ণ কোনো গোষ্ঠী এসে শূন্যস্থানে বসে, তাহলে ছাত্রসমাজ ও জনগণের এই গৌরবময় আন্দোলন ব্যর্থ হবে না? সেটিও নিশ্চয়ই ছাত্র-জনতা চাইবেন না? তাই রাজনৈতিক প্রশ্নটিকে এখন এই মুহূর্তে ছাত্রদের তৈরি করা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা বিবেচনায় না নিয়ে উপায় নেই। এখন পর্যন্ত তাদের দাবিগুলো তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা’কে তাড়িয়ে ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা’র বিলোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিলোপ বা যেকোনো উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন, মৌলবাদী ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদ বা রাষ্ট্রধর্মমতবাদ, অথবা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিপীড়ন, ইত্যাদি প্রবণতার রয়েছে মৌলিক বৈরিতামূলক বিরোধ। কিন্তু ইতোমধ্যেই এসব প্রবণতা দেশের ভেতরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে; এ ব্যাপারে কি তারা সচেতন? যদি এ ব্যাপারে তারা সচেতন হন, তাহলে তাদের ও তাদের দলের উচিত হবে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার মধ্যে কি নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। তা করার জন্য নতুনের মধ্যে ‘মৌলিকত্ব’ দরকার হবে। তাদের রাজনীতিতে কি মৌলিকত্ব আছে নাগরিকরা নিখুঁত ভাবে উপলব্ধি করেই গ্রহণ করবেন।

বেশির ভাগ তরুণই তাই যে যে দলই অতীতে করুক না কেন বা যে দলের প্রতি যে আশায়ই সমবেত হন না কেন, বাস্তবে সমস্যা সমাধানের একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্প কিন্তু তাদের কাছ থাকতে হবে। একটি বৈষম্যহীন সমাজে প্রত্যেকের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য সমাজের কী ধরনের মৌলিক রূপান্তরের প্রয়োজন হবে, তা নিয়ে তরুণদের ও প্রতিযোগী দলগুলোর ধারণা স্পষ্ট হতে হবে। লক্ষনীয় বিষয় স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আলোচিত উজ্জীবিত রাজনৈতিক দলের নাম ছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক নীতির ওপর ভিত্তি করে জাসদ। আজ তাদের সংগঠনের পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে কত বড় বড় নেতা রাজনৈতিক দল তৈরি করলেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বিকল্প রাজনীতির কথা বলে বিকল্পধারা নামে দল করলেন। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ৯ বছর রাষ্ট্র নেতৃত্বে দিয়ে স্বৈরাচার তকমা নিয়ে গণঅভ্যুত্থানে বিদায় নিলেন। তার দল একই নামে কয়টা ভাগ হয়েছে বলা মুসকিল। বাম ভাবধারা ও ইসলামি ভাবধারা রাজনৈতিক দলগুলো কথা আর না বললাম।

জাঁকঝমকভাবে পাঁচ তারকা হোটেলে জন্ম নেওয়া ইনসাফ পার্টি কোথায়? বিশেষ করে আরো বলার প্রয়োজন ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা’র উচ্চ বিলাসী ভাবনায় আমি-ডামি নির্বাচনের নামে রাতারাতি নতুন দল ও নিবন্ধন দেওয়া কি পরিণতি। এগুলো নাগরিকদের সামনে স্পষ্ট দিবালোকের মতো উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই বিষয়গুলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা সম্ভাবনাময় ছাত্রনেতৃবৃন্দ আশু উপলব্ধিকে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্বে যদি রূপান্তরিত করতে চান। তাহলে আশাকরি মনোযোগ দেবেন। তাতে তাদের ও দলের এবং দেশের কল্যাণ হবে এই ভরসা রেখে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা শেষ করলাম।

লেখক: বিএনপি মিডিয়া সেল সদস্য ও রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মী

সারাবাংলা/এএসজি

জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মত-দ্বিমত শায়রুল কবির খান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর