টেক্কা মিয়ার রিকশাচিত্র
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৯:৫৮
হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: ঢাকার রিকশা মানেই রঙিন চালচিত্র। রিকশা মানেই জীবনের এক চলন্ত প্রদর্শনী। রিকশাচিত্র ঢাকার ঐতিহ্য। অথচ ডিজিটাল প্রিন্টের এই সময়ে এসেই ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে ঢাকার এই ঐতিহ্য।
পুবের দেশ জাপানে দেড়শ বছর আগে রিকশার উৎপত্তি। যা পরে ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে প্রথমে চট্টগ্রাম, পরবর্তীতে ঢাকা ও ময়মনসিংহে রিকশার চল শুরু হয়। সেই থেকে নিত্যদিনের বাহন রিকশাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক পেশা। যার অন্যতম রিকশা সাজানো বা পেইন্টিং।
রিকশার সামনে পেছনে ও ছাউনির চারদিকে নানা রঙ্গে জীবনের চালচিত্র ফুটিয়ে তোলেন নিপুণ শিল্পীরা। জীবিকার প্রয়োজনে করা এই শিল্প মূলত গণমানুষের শিল্পকলা। রিকশা শিল্পীদের সাধারণত শিল্পকলায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকে না। বংশ পরম্পরায় দেখতে দেখতে রিকশায় শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলেন তারা।
গত শতকের মধ্যভাগ থেকে নিত্যদিনের বাহন রিকশাকে ঘিরে এই শিল্পের চর্চা শুরু। প্রথমদিকে রিকশায় গ্রামীণ চিত্র ও জীবনের গাঁথা আঁকা হলেও আস্তে আস্তে রিকশায় সিনেমার ছোঁয়া লাগে। ফুল, ফল, মাছ, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি সিনেমার নায়ক, নায়িকা, ভিলেন হয়ে ওঠে রিকশাচিত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। এছাড়া শহর, নগর, যান্ত্রিক যানবাহনের পাশাপাশি উপদেশ, বাণী, মতামত, আলাদিনের চেরাগ থেকে শুরু করে হালের সুলতান সোলেমান পর্যন্ত সবই এই বৈচিত্রময় রিকশাচিত্রের উপজীব্য।
কিছুদিন আগেও নতুন রিকশায় থাকত বাহারি নকশার পেইন্টিং, অলঙ্ককরণে ব্যবহার হতো ঝালড়- সাজানোতে আরো নানা অনুসঙ্গ। কিন্তু ইদানিং বাহন সাজানোর বিষয়টি কমে গেছে একেবারেই। বংশপরম্পরায় কেউ আর এ পেশায় আসতে চান না।
রিকশাচিত্র বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটি শিল্প। নগর কেন্দ্রিক জীবনে দিনে দিনে রিকশার চাহিদা কমে আসছে। সেই সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে রিকশাচিত্র। এ শিল্প জীবিকার প্রয়োজনে, তবুও কোথাও যেন জড়িয়ে থাকে তুমুল ভালোবাসা। এ ভালোবাসা, আবেগের পরও শিল্পটি ক্ষয়িষ্ণু। তবুও একটু উদ্যোগ নিলে, আমাদের এ শিল্পটি যুগযুগান্তর টিকে থাকবে প্রজন্মের মাঝে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এসবি/এমএ