৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১০ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৩৪
আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তন, শিকারীদের উৎপাত— সবকিছুর পরও দেশের অন্যান্য বিল-হাওরের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ঝাঁকে ঝাঁকে নেমেছে পরিযায়ী পাখিদের দল।
বিদায়ের পথে থাকা হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় ভর করে উঁকি দিচ্ছে শীত। বর্ষপঞ্জিতে এ ঋতুর আগমন না ঘটলেও দেশের উত্তরাঞ্চল রীতিমতো কাঁপছে কনকনে ঠান্ডায়। গত কয়েক দিনে তার রেশ ছড়িয়েছে সারা দেশেই। তবে শূন্যের নিচে নেমে যাওয়া তাপমাত্রার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ উষ্ণ বটে! সেই উষ্ণতার সন্ধানেই ওই সব দেশ থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দেশের খাল-বিলে এসে আশ্রয় নিয়েছে পরিযায়ী পাখিদের দল, মার্চ-এপ্রিলে গরম তীব্র হতে থাকলে যারা বিদায় নেবে। তিন-চার মাসের জন্য আশ্রয় নেওয়া এসব পাখির আদুরে নাম অতিথি পাখি।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সিরাজগঞ্জের হুরা সাগর, পাবনা-নাটোরের চলনবিল, নীলফামারীর নীলসাগর, বরিশালের দুর্গাসাগর— বাংলাদেশে অতিথি পাখিদের সবচেয়ে বড় বিচরণক্ষেত্র এগুলোই। রাজধানীর অদূরে প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরপুর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। হেমন্ত পেরিয়ে শীত আসতে আসতেই সেখানে ভিড় জমিয়েছে অতিথি পাখিরা, কলকাকলিতে মুখরিত করে রেখেছে চারপাশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিথি পাখির ছবি তুলেছেন সারাবাংলার ফটো করেসপন্ডেন্ট সুমিত আহমেদ
-
-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য, একসময় দেশি-বিদেশি মিলে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত এই ক্যাম্পাসের অভয়ারণ্যে। তবে বিদেশি পাখির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে।
-
-
শীতে এই জলাধারে যেসব দেশি-বিদেশি পাখির উপস্থিতি বেশি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে— ছোট সরালি, শামুকভাঙা, মুরহেন, জলময়ূর, চিতা টুপি, গার্গিনি, বামুনিয়া, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, খঞ্জনা, জলপিপি, নাকতা, মানিকজোড়, খোঁপাডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি ইত্যাদি।
-
-
মূলত ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যাম্পশায়ার, সাইবেরিয়া বা অ্যান্টার্কটিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে পাড়ি জমায় পরিযায়ী পাখিরা।
-
-
কেবল তীব্র ঠান্ডাই নয়, এই সময়ে ওইসব শীতপ্রধান অঞ্চলে খাবারেরও অভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশের অভয়ারণ্যগুলোতে উষ্ণতার পাশাপাশি খাবারও পায় অতিথি পাখিরা।
-
-
নভেম্বরে শীত পড়তে শুরু করলেই পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয় বাংলাদেশে। এরা অবস্থান করে একদম মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, যখন কি না তীব্র গরম পড়তে শুরু করে।
-
-
তীব্র শীতপ্রধান দেশের হাঁসজাতীয় পাখি, ক্লাইক্যাসার, নর্দান পিনটেইল, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস, বড় সারস, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, কমন পোচার্ড সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অতিথি পাখিগুলোর মধ্যে।
-
-
৬০০ মিটার থেকে ১৩০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উড়ে আসে অতিথি পাখিরা। কোনো কোনো পাখি ২২ হাজার মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। উষ্ণতা, নিরাপদ আবাস আর খাদ্যের সন্ধানে।
-
-
তবে দেশে শিকারীদের আনাগোনায় প্রাণ হারাতে হয় বহু অতিথি পাখিকে। এসব শিকারীর অপতৎপরতায় পাখিদের আবাসস্থল অনিরাপদ হয়ে ওঠাকে অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
-
-
আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তন, শিকারীদের উৎপাত— সবকিছুর পরও দেশের অন্যান্য বিল-হাওরের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ঝাঁকে ঝাঁকে নেমেছে পরিযায়ী পাখিদের দল।
-
-
সারা দিন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে থাকছে অভয়ারণ্য। দিনভর পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে।
-
-
মুগ্ধ হয়ে তারা দেখছে জলের বুকে পাখিদের জলকেলি, মুক্ত ডানায় ঝাঁক বেঁধে ওড়াউড়ি আকাশের বুকে।
সারাবাংলা/টিআর
অতিথি পাখি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পরিযায়ী পাখি
পাখিদের ওড়াউড়ি