ফানুসে ফানুসে বুদ্ধ বন্দনা
২৫ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪১
বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে উৎসবটি উদযাপিত হয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল ফানুস উৎসব। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন সারাবাংলার স্পেশাল ফটো করেসপন্ডেন্ট আশীষ সেনগুপ্ত
সংস্কৃত ‘পবারণা’ থেকে প্রবারণা শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ- ‘আশার তৃপ্তি’, ‘অভিলাষ পূরণ’, ‘শিক্ষা সমাপ্তি’ অথবা ‘ধ্যান শিক্ষা সমাপ্ত’ ইত্যাদি।
সহজ বাংলায় প্রবারণা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় বরণ করা, অভীষ্ট দান করা, কাম্যদান করা।
অন্যদিকে নিবারণ মানা, নিষেধ করা। মোটকথা প্রবারণা বরণ অর্থে যা কিছু কুশল, সুন্দর, সৎ, ভাল, যথার্থ, বিজ্ঞজন সর্বোপরি বুদ্ধানুমোদিত সেসব কাজকে বরণ করা এবং সেগুলো স্ব-স্ব জীবনে আচরণ করা।
প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত ভিক্ষুদের অনুষ্ঠান। তা সত্ত্বেও বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রবারণা শব্দের অর্থ হলো আত্মনিবেদন।
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ব্যাপী বর্ষাব্রত পালন করেন। তখন তারা বিহারে অবস্থান এবং জ্ঞানচর্চা করেন।
সে সময় তাদের মধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই বর্ষাব্রত পালন শেষে তারা আশ্বিনী পূর্ণিমায় প্রবারণা করে।
সেদিন তারা যদি গোচরে এবং অগোচরে কোন ভুল করে থাকেন তার জন্য জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুর কাছে তা জানান এবং তা সংশোধনের আহবান জানান।
তেমনিভাবে জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাও নবীনদের কাছে তাদের ভুলের কথা জানাবেন। এজন্য এটি হলো ভিক্ষুদের আত্মসমর্পণ ও আত্মনিবেদনের অনুষ্ঠান। একে কেন্দ্র করেই এ পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা উৎসব করে।
এদিন সকালে বৌদ্ধ নরনারী শুচি শুভ্র হবে, পরিষ্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হয়, বুদ্ধকে পূজা দেয়, ভিক্ষুদের আহার্য ও দান দেয়, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ করে, দুপুরে বিহারে বিহারে ভাবনা হয়, বিকেলে আয়োজিত হয় ধর্মসভা।
এতে পন্ডিতজন অংশ নেয়, বৌদ্ধধর্মের মূল বাণীগুলি আলোচিত হয়, রাতে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
এদিন ঘরে ঘরে ভাল রান্না হয়, অতিথিদের পায়েস পরিবেশন করা হয়। দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হলো- সন্ধ্যায় ফানুস উড়ানো উৎসব। দেশের বিহারগুলোয় ফানুস উড়ানো হয়।
ফানুস উড়ানোর উদ্দেশ হলো আকাশে ভাসমান গৌতমের পবিত্র কেশধাতুকে প্রদীপ দিয়ে বন্দনা করা।
এসময় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের নরনারী সমবেত হয়ে ফানুস উড়ানো উপভোগ করেন।
এই তিথিতে বিহার গৃহশীর্ষে আকাশ প্রদীপ জ্বালানো হয়।
লক্ষণীয় যে, এদিন সন্ধ্যায় বৌদ্ধরা পঞ্চশীল গ্রহণ করে এবং বুদ্ধমূর্তির সামনে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালায়, নবীনেরা প্রবীণদের প্রনাম করে, প্রবীণেরা ছোটদের আশীর্বাদ করে। সমবয়সীরা কোলাকুলি করে, প্রবাসীরা ঘরে ফেরে, বধুরা নাইয়র যায়।
মূলত: এ উৎসব মিলনের, দূরকে নিকট আর পরকে আপন করার।
তথ্যসূত্র: প্রজ্ঞামিত্র বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
সারাবাংলা/এমএস/একে