বিজ্ঞাপন

পানির সমস্যা না মিটলে কমবে না হালিশহরের রোগ-বালাই

June 27, 2018 | 9:14 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

হালিশহরে এ মাসে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হেপাটাইটিস-ই’তে আক্রান্ত হয়েই এসব মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ওই এলাকায় পানিবাহিত রোগের কথা নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ শহরে পানির সমস্যা যতদিন ঠিক না হবে, ততদিন পানিবাহিত রোগ-বালাই এর প্রকোপ কমবে না।

চট্টগ্রামের সিটি গেইট এলাকার বাসিন্দা নাসরিন নাহার এ্যানি সারাবাংলাকে বলেন, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রমজানের ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। জন্ডিসের সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাতে চিকেন পক্সের প্রকোপও বেশি মন্তব্য করে এ্যানি বলেন, হালিশহর এলাকার অবস্থা খুব খারাপ, এখানকার প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

গত মাসে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকসার্স ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে হালিশহর এলাকার ৩০২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট (কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড সার্পোট সেন্টার) বে-নাজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে ইতোমধ্যেই অধিদফতর থেকে চট্রগ্রামের সিভিল সার্জনকে খোঁজ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন ল্যাবে কত সংখ্যক জন্ডিসের রোগী আসছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা, যারা মারা গিয়েছেন-তাদের সর্ম্পকে খোঁজ নেওয়াসহ এ সর্ম্পকিত নানা তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। এতে করে প্রকৃত চিত্রটা আমরা পেতে পারি। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন, তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকৃত চিত্র জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন বে-নাজির আহমেদ।

তবে দূষিত পানির কারণেই পানিবাহিত এসব রোগের প্রাদুর্ভাব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম আগেও হয়েছিল, তাই সে সম্ভাবনা থেকেই যায়। দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে রয়েছে অনেক এলাকা। যখন কোনও পুরো শহর প্লাবিত হয় তখন সেখানে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কারণ, তখন সুয়ারেজ লাইন এবং পানির লাইন মিশে যায়। তাতে পানি দূষিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়-তাই একেও আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।

এদিকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ওই এলাকায় আমরা কাজ করে এসছি। হেপাটাইটিস-ই আগেই পাওয়া গিয়েছে, আইইডিসিআরের দল সেখানে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, আগামীকাল (২৭ জুন) আইইডিসিআর থেকে তিনজনের একটি দল আসবে। আমরা কাজ করছি। তবে এখানে হেপাটাইটিস-ই এর রোগী প্রচুর মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফেসবুকে দেখেছি তিনজন রোগী মারা গিয়েছেন। যেহেতু সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছিল তাই তাদেরকে বলেছি একটি তদন্ত টিম গঠন করে এ সর্ম্পকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দুইদিনের মধ্যে জমা দিতে।

তিনি আরও জানান,হালিশহর এলাকাতে স্থাপিত ক্যাম্পে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের দরকারে স্থানান্তরিত করাও হয়েছে। এরমধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দুইলাখের মধ্যে এক লাখ ৮৫ হাজার দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে আরও একলাখ ট্যাবলেট বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুকে রোগী মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আমরা যেমন সতর্ক হয়েছি তেমনি সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

তবে মূল সমস্যা এই এলাকার পানি উল্লেখ করে আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ নয় যেমন ঠিক তেমনি অনেকে ঠিকমতো নিজেদের পানির টাংকি পরিষ্কারও করে না স্থানীয়রা। এরসঙ্গে বৃষ্টি হলে এখানে হাঁটুপানি জমে যায়, তখন ব্যবহারের পানি এবং সুয়ারেজ পানি সব একাকার হয়ে যায়। আবার সমুদ্রপাড়ে হওয়ায় জোয়ারের সময় শহরে পানি ঢোকে-সব মিলিয়ে এখানে পানির সমস্যা যতদিন ঠিক না হবে ততোদিন ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস বন্ধ করা যাবে না।

রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনও ঝাঁড়ফুকে বিশ্বাস না করে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের কেউ জন্ডিস আক্রান্ত হলে সময় ক্ষেপণ না করে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চট্রগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ফেসবুক পেইজেও এ নিয়ে একাধিক সতর্কবার্তা এবং করণীয় সর্ম্পকে বলা হচ্ছে মন্তব্য করে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, সচেতনতার জন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরআগে, গত এপ্রিলের শুরুতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত জন্ডিস ও ডায়রিয়া রোগের প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়ে। একমাস ধরে হালিশহরের ঘরে ঘরে এইরোগ ছড়িয়ে পড়ার পর ২মে সেখানে পরিদর্শনে যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিম এবং সিভিল সার্জন। তারা সেখানে গিয়ে কয়েক’শ মানুষ ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েসীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে (বিআইটিআইডি) চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পান। তখনও পানির নমুনা পরীক্ষা করে ওয়াসাকে দায়ী করা হয়। তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে সেই দাবি নাকচ করে দেন।

আরও পড়ুন

হালিশহরে পানিবাহিত রোগে মৃত্যু, হেপাটাইটিস ই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন