বিজ্ঞাপন

শ্বাসকষ্টে ভুগছেন? জেনে নিন কিছু জরুরি বিষয়

December 23, 2017 | 1:38 pm

ডা. অনির্বাণ সরকার

বিজ্ঞাপন

‘শ্বাসকষ্ট’ শব্দটি আমাদের খুব পরিচিত।  নিজেরা অথবা আশেপাশে কাউকে না কাউকে আমরা শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখি বছরের কোনো না কোনো সময়।  শ্বাসকষ্ট হতে পারে জন্মগত কোনো সমস্যার কারণে, কোনো রোগের কারণে অথবা অ্যালার্জির কারণে।  ইদানিং শ্বাসকষ্টের কারণ হিসেবে যে প্রধানতম কারণটি চিহ্নিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে বায়ুদূষণ।  ভারতের রাজধানী দিল্লীর সাম্প্রতিক বায়ুদূষণের খবর আমরা প্রায় সকলেই জেনেছি।  দেখেছি মুখে মাস্ক পরে শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা দিল্লী টেস্টে ফিল্ডিং করতে নামছেন!

বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি- ২০১৭’ প্রতিবেদন বলছে- ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে।  আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।

বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গের সাথে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়।  বায়ুদূষণ ছাড়াও আবহাওয়ার পরিবর্তনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

শীতকাল এবং শুষ্ক আবহাওয়া- এই দুটি ব্যাপার শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।  শীতকালে আবহাওয়ার কম তাপমাত্রায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ খানিকটা কমে যায়।  আর শুষ্ক আবহাওয়ায় জীবাণু খুব সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে।  শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে ফুসফুস কার্যকরভাবে জীবাণু ও ধূলিকণা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে না।

শ্বাসকষ্টের সাথে সাধারণত সর্দি, চোখে জ্বালাপোড়া ভাব ও চোখ থেকে পানি পড়া, বুকে চাপ বোধ, হাঁচি, কাশি, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।

যদি শ্বাসকষ্ট দীর্ঘমেয়াদী হয়, জ্বর থাকে, শ্বাস নেয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ হয়, বুকে ব্যথা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।  কারণ এটি মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

শৈশব থেকে যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি আছে, তারাও বায়ুদূষণের কারণে বা শীতকালে বেশি ভুগতে পারেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে কিছু বিষয় মেনে চলা ভালো-

* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী রোগের যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।

* যাদের অ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্ট আছে, তারা যতটা সম্ভব অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকবেন।  গরুর মাংস, বেগুন, বাদাম, চিংড়ি ইত্যাদি খাবার খেলে যাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তারা এসব খাবার খাবেন না।

বিজ্ঞাপন

* ধুলোবালি থেকে দূরে থাকতে হবে।  ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।  ঘরের কার্পেটে অনেক ধুলো জমে।  এজন্য ঘরে কার্পেট ব্যবহার করা যাবে না।

* শীতকালে গরম কাপড় ব্যবহারের আগে কাপড় ভালোভাবে রোদে দিতে হবে।

* আলোবাতাসপূর্ণ ঘরে বাস করা উচিৎ।  স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বাস করা যাবে না।

* ধূমপান পরিহার করতে হবে।

* বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।  তবে একই মাস্ক দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিৎ নয়।  মাস্কের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের জন্য সঠিক ইনহেলারটিও নির্বাচন করতে হবে।  ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

* শ্বাসকষ্টের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে।  গরম পানিতে মেনথল দিয়ে ভাপ নিলে, আদা চা খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে আরাম পাওয়া যায়।

পরিশেষে একটি কথা বলার আছে।  শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণ, যেটি শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।  কলকারখানা রাখতে হবে শহর থেকে দূরে, ডিজেলচালিত গাড়ির সংখ্যা ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয় ছাড়া এটি সম্ভব নয়।  আমাদের দেশের মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে চাইলে সবার সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ কাম্য।

 

লেখক-  প্রভাষক, কমিউনিটি মেডিসিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ছবি- ইন্টারনেট

সারাবাংলা/এসএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন