বিজ্ঞাপন

‘বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরাট দায়িত্ব রয়েছে’

July 6, 2018 | 8:59 am

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিকের রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক  ক্যারিয়ার।

বিজ্ঞাপন

জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর ড. (কর্নেল) অলি আহমদ বীর বিক্রম সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তখনও ১৩ বছর চাকরি ছিল তার। জিয়াউর রহমানের পর খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরলে তার অন্যতম প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন অলি আহমদ। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ. কিউ. এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেন। এরপর বি. চৌধুরীর সঙ্গে মতবিরোধ হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে একত্রে আন্দোলন নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা হয়নি তার। ২০১২ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে যোগ দেন ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। এখনো তিনি বিএনপি জোটেই আছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রী হয়েছেন বার।

বিজ্ঞাপন

৭৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক সম্প্রতি তার বাসায় সারাবাংলাকে দেন একান্ত সাক্ষাৎকার। সেখানে উঠে আসে সমকালীন রাজনীতি নিয়ে তার ব্যক্তিগত ভাবনা এবং তার দল জোটের রাজনৈতিক অবস্থান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান।

সারাবাংলা: বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে আপনার পরামর্শ কী?

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ দেশ এগিয়ে যাক— সকল মুক্তিকামী মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এটাই চায়। আমিও তাই চাই।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পেছনে আমার ব্যক্তিগত কতকগুলো ধ্যান-ধারণা ছিল। সেটি হলো, জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের সরকার গঠন করবে এবং সরকারে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ৪৭ বছর পরও আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। কখনো এক দলীয় শাসন, কখনো বহুদলীয় শাসন, কখনো রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন, কখনো প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসন। কিন্তু এতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। অন্যদিকে বেগম জিয়ারও একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। তিনিও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

আমরা তাদেরকে সহায়তা করব। জনগণ যেন তাদের ভোট দিতে পারে। জনগণ দ্বারা যেন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। প্রতিনিধিরাই যেন দেশ পরিচালনা করে। তাহলেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণ সুখে শান্তিতে থাকবে।

সারাবাংলা: সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কাছ থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। অধিকন্তু এবার নির্বাচনে না গেলে আপনাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে যাচ্ছে?

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আমরা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে খুব একটা চিন্তা করি না। যে কোনো সময় নিবন্ধন পুনরায় করানো যায়— সেটা নিয়ে ভাবি না। তবে দেশের জন্য যেটা ভাল, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেটা অবশ্যই করতে হবে— এতে কোনো সন্দেহ নাই। আর ২০ দলের মধ্যে এটা নিয়ে কোনো দ্বিমতও নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি জোটের লাভ কী হবে?

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: গেলেও লাভ কী হবে? যেখানে আপনি আপনার ভোট দিতে পারবেন না, সেখানে আপনি কীসের জন্য যাবেন? ভোট যদি দিতে পারেন, হান্ড্রেড পার্সেন্ট যাওয়া উচিত। যেখানে ভোটের অধিকারই নেই, সেখানে ভোটে গিয়ে কী করবেন? আজকে ভোটের অধিকার নেই বলেই তো এসব কথা আসছে।

যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে হয়, তাহলে ভোটে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই সুযোগটা তো সরকারকেই তৈরি করে দিতে হবে। যে সমস্যা দেশে আছে, সরকারের পক্ষ থেকে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। এটাকে স্বীকার করে নিয়ে বিরোধী জোটগুলোর সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে।

সারাবাংলা: সংলাপ-সমঝোতা নিয়ে কী ভাবছেন?

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আমরাও ১৯৭৯ সালে যখন নির্বাচনে যাই তখন আওয়ামী লীগ বলল যে, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না।’ আমরা কিন্তু কয়েক রাত ঘুম নষ্ট করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান দিয়ে, রাজি করিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসছিলাম। এখনো বঙ্গবন্ধুর কন্যা সেটা করতে পারেন। বিরোধী দলের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে, সুশাসন কীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে, সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান হবে, দেশটা কীভাব সঠিক পথে চলবে— তা ঠিক করতে পারেন।

সারাবাংলা/এজেড

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন