বিজ্ঞাপন

গুহায় আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে গিয়ে থাই ডুবুরির মৃত্যু

July 6, 2018 | 9:12 am

|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক || 

বিজ্ঞাপন

থাইল্যান্ডের ‘থাম লুয়াং নাং নন গুহায়’ আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে গিয়ে মারা গেছেন এক ডুবুরি। থাই নেভি বলছে, ওই ১২ ফুটবলার ও তাদের সহকারী কোচকে উদ্ধারে অংশ নিয়ে সাবেক ওই থাই নেভি ডাইভারের মৃত্যু হয়েছে।

তারা আরও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গুহাটির ২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটে। শিশুদের ওই দলটির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে এসময় বাহিরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তিনি।

তবে মাঝপথে এসে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান সামান গুনান (৩৮) নামের ওই ডুবুরি। সহকর্মীরা তার জ্ঞান ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। থাই নেভিতে দীর্ঘদিন কাজ করার পর অবসরে গেলেও ওই ক্ষুদে ফুটবলারদের উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছায় তিনি উদ্ধারকারী দলে যোগ দেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

চিয়াং রাইয়ের ডেপুটি গভর্নর পাসাকর্ণ বনিয়ালাক বলেছেন, ‘গত রাতে উদ্ধারকারী দলের সদস্য সাবেক এক থাই নেভি সিল ডুবুরির মৃত্যু হয়েছে। তার কাজ ছিল আটকে পড়াদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহণ করে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু ফেরার পথে সেটির অভাবেই মারা গেছেন তিনি।’

এর আগে, গত শনিবার (২৩ জুন) ওয়াইল্ড বোয়ার নামের এক ফুটবল দলের ওই সদস্যরা উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই এলাকায় অবস্থিত থাম লুয়াং নাং নন গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার নয়দিন পর উদ্ধারকাজে যোগ দিতে আসা দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি সোমবার (২ জুলাই) রাতে তাদের খুঁজে পান।

বিজ্ঞাপন

এরপর থেকেই তাদের উদ্ধারে কয়েক ডজন থাই নেভি সিলের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এমনকি যেকোনো উপায়ে দ্রুত শিশুদের সেখান থেকে বের করে আনতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

উদ্ধারকর্মীরা ও সেনাবাহিনী বলছে, দশ কিলোমিটার দীর্ঘ থাইল্যান্ডের সর্ববৃহৎ এ পাহাড়ি গুহাটির ভেতর এমনভাবে পানি ঢুকে পড়েছে যে তাদের সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পথটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। আর ১৩ জনের ফুটবল দলটি সেই গুহার মধ্যে একটি শুকনো কার্নিশের মতো জায়গায় বসে আছে। সেখান থেকে গুহার বাইরে আসতে হলে তাদের ডুবুরির মতো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরানো শিখতে হবে অথবা কয়েক মাস গুহার মধ্যেই অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন পানি নেমে না যায়।

সেনাবাহিনী আরও বলছে, তাদেরকে হয়তো আগামী চার মাস ধরে বাইরে থেকে খাবার পাঠাতে হবে। তবে দেশটিতে কেবলই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও বাড়লে থাম লুয়াং নাং নন গুহার অভ্যন্তরীণ পানির উচ্চতা বাড়তে পারে। আর সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।

বিজ্ঞাপন

দেশটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, শিশুদের উদ্ধারে কোনও ধরনের ঝুঁকি নেবেন না তারা। তাদের উদ্ধারে সবচেয়ে নিরাপদ এবং ভালো উপায়টিই বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। উদ্ধারকারী দলটি ইতিমধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ভালো ফল পেয়েছে। তারা জানিয়েছে, সবার শারীরিক অবস্থাই ভালো রয়েছে। এখন তারা চাইছেন, শিশুদের কিভাবে হাসি-খুশিতে রাখা যায়। বর্তমানে তাদের সঙ্গে একজন ডাক্তার, একজন নার্সসহ ৭ জন বিশেষ প্রশিক্ষিত ডুবুরি রয়েছেন।

এছাড়া শিশুদের সঙ্গে তাদের পরিবারের লোকজনের কথা বলিয়ে দিতে গুহার অভ্যন্তরে একটি টেলিফোন লাইন সংযোগের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে জরুরি উদ্ধারকারী দল।

গুহায় আটকা পড়া শিশুদের কেউই প্রশিক্ষিত ডুবুরি নয়। তারা সাঁতারও জানে না। পেশাদার ডুবুরিদের গুহার প্রবেশপথ থেকে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগছে ছয় ঘণ্টা এবং ফিরতে পাঁচ ঘণ্টা করে। শূন্য দৃশ্যমানতার গোটা পথটি জায়গায় জায়গায় খুবই সরু। তাছাড়া তাদের সহায়তা করতে সার্বক্ষণিকভাবে পাম্প করে বন্যার পানি সরাতে হচ্ছে।

কেভ রেসকিউ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন আইইউসিআরআরও’র সমন্বয়ক এড সোরেনসন বলেছেন, ‘ডুবুরির সহায়তায় উদ্ধার চেষ্টা চালানো খুবই বিপজ্জনক পন্থা এবং একেবারে শেষ উপায় ছাড়া তিনি এটা বিবেচনা করবেন না। সেখানে চোখে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনভ্যস্ত কেউ ভয় পেয়ে নিজে মারা যেতে পারে বা উদ্ধারকারীদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

সারাবাংলা/এএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন