বিজ্ঞাপন

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, ক্ষোভ-প্রতিবাদ নাগরিক সমাজের

July 6, 2018 | 5:48 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবক ও উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মুক্তি চেয়েছেন তারা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার (৬ জুলাই) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়েছে।

প্রতিবাদ সমাজে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলন। এই আন্দোলনে কারা হামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সরকারের এত এত গোয়েন্দা সংস্থা, এ ঘটনার ছবি, ভিডিও ফুটেজ আছে। সরকারের উচিৎ এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এগুলো চোখে দেখছেন না। তিনি এই আন্দোলনের পেছনে ১২৫ কোটি ষড়যন্ত্রের গন্ধ ‍খুঁজে পেয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আজ কোদাল দিয়ে কোপানো হচ্ছে, লাঠি দিয়ে মারা হচ্ছে, হাতুড়ি পেটা করা হচ্ছে। যারাই প্রতিবাদ করতে যাচ্ছেন, যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন করছেন তারাই পেটোয়া বাহিনীর রোষানলে পড়ছেন ‘

প্রতিবাদ সমাবেশে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুর বাবা।

বিজ্ঞাপন

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ছেলের লেখাপড়া করাচ্ছি জমিজমা বিক্রি করে। হামলায় আমার ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। এখন জমিজমা বিক্রি করে তার চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছি।’

প্রতিবাদ সমাবেশে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ, বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের ভাষায় সরকার উন্নয়ন করছে। জনগণের জন্য যদি উন্নয়ন হয় তাহলে সরকারের এত ভয় কেন? কেন তাদের পেটোয়া বাহিনীর দরকার হচ্ছে? কেন আন্দোলনকারীদের ওপর এমন হামলা চালানো হলো?’

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির অসঙ্গতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা প্রকৃতভাবে সুবিধাবঞ্চিত সেই অসহায় নারী, সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা এর সুফল পায় না। সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও তাদের লোকজন এই কোটার সুযোগ নিচ্ছে। কোটা যত থাকবে, নিয়োগ বাণিজ্যে তত লাভ। এই কারণে তারা এই কোটার সংস্কার চায় না।’

সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হলো না। এটি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না, এটি ছিল তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।  এ কারণে পরবর্তীতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ কামাল।

তিনি বলেন, ‘এই সরকার রাষ্ট্রবিদ্রোহী সরকার। রাষ্ট্রবিদ্রোহ কেবল নাগরিক করে না, সরকারও করে সেটি আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।’

দেশের রাজা যদি ঠিকমতো দেশ শাসন না করেন তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আন্দোলনকারীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রশাসনের মতো অর্থব ও তেলবাজ প্রশাসন আমি দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা আর কোনো শিক্ষক দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।’

আহমেদ কামাল আরও বলেন, ‘৭৫ এ বাকশাল ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যেন বাকশালে যোগ দেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষক বাকশালে যোগ দেননি। আজকেও দেখি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ শিক্ষক দাঁড়িয়েছেন। এখনও আলো নিভে যায়নি, একদিন আলো দপ করে ঠিকই জ্বলে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ফলে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু তারপরও দেখলাম প্রশাসন আন্দোলনকারীদের তথ্য নিয়েছে, নাম-ঠিকানা নিয়েছে তাদের পরিবারকে হয়রানি করেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। অগ্নিকন্যা বললেন এরা সব রাজাকারের বাচ্চা। প্রথম দিকেই এদের রাজাকার, জামায়াত, দেশদ্রোহী বানানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এই ছাত্র সমাজ সকলের ইন্টাররেস্ট দেখছে। সে কারণে কাজ হয়নি। সকলের জন্য সমান সুযোগ দেওয়া এটা একটি ডেমোক্রেটিক ডিমান্ড।’

গত মঙ্গলবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছিল উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ। এ সময় ছাত্র-শিক্ষক, অবিভাবক, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মানববন্ধনে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধায় ওইদিনের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর প্রায় তিন মাসেও এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় গত শনিবার থেকে ফের আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন।

এরপর রোববার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সোমবারও আন্দোলনকারীদের ওপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার ফারুক হোসেনসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর দুই মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

সারাবাংলা/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন