বিজ্ঞাপন

ভারতকে হারিয়ে বাংলার কিশোরীদের সাফ জয়

December 24, 2017 | 3:48 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের রাউন্ড রবিন লিগে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়ে ফাইনালে নেমেছিল ‘অপরাজিত’ বাংলার বাঘিনীরা। ফাইনালে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে। বাংলাদেশের জার্সিতে গোল করেন শামসুন্নাহার। বিজয়ের মাসে শিরোপা জয়ের যে শপথ নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা, তা পূর্ণ করেই ছাড়লো।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় শুরু হয় ম্যাচটি। ফাইনালের আগে এই ভারতকেই ৩-০ গোলে হারায় লাল-সবুজের দলটি। তবে, তারও আগে এক ম্যাচ হাতে রেখে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল।

 

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের প্রথমার্ধ থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ছিল। ৩২ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা তহুরা খাতুন জোরালো শট নেন ভারতের জাল লক্ষ্য করে। তবে, বল গোলবারের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। একই মিনিটে অনুচিং-মনিকা জুটির দারুণ একটি সম্ভাবনা নষ্ট হয়। মনিকাকে ঠিকমতো বল বানিয়ে দিতে না পারায় গোলের দেখা পায়নি লাল-সবুজরা।

বাংলাদেশ গোলের দেখা পায় শেষ দিকে। খেলার ৪১তম মিনিটের মাথায় লিড নেয় স্বাগতিকরা। বল নিয়ে ভারতের বক্সে প্রবেশ করেন তহুরা। অনুচিং মারমার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে শটও নেন তিনি। তবে, ভারতের গোলরক্ষক প্রস্তুত থাকায় বল জালে জড়ায়নি। এক সেকেন্ডের হতাশা জমলেও ভারতের গোলরক্ষক বলটি ঠিকমতো গ্লাভসবন্দি করতে না পারায় আনন্দে মেতে উঠে বাংলাদেশ। বল পেয়ে তাতে শট নেন শামসুন্নাহার। জালে বল জড়ালে উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মারিয়ার দল।

বিরতির পর প্রথম মিনিটেই ভারতকে কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ। অনুচিংয়ের জোরালো শট পোস্ট ঘেঁষে চলে যায়। প্রথম থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলা অনুচিং ম্যাচের ৫৭ মিনিটের মাথায় আবারো জ্বলে উঠেন। ভারতের ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে শট নেন তিনি। ভারতের ডি-বক্সে প্রবেশ করে ডানপায়ের জোরালো শট নিলেও পোস্টে লেগে বল বাইরে চলে যায়।

বিজ্ঞাপন

ভারত বলতে গেলে বাংলার বাঘিনীদের কাছে একরকম পাত্তাই পায়নি। নিজেদের ডিফেন্স সামলে খেলতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে প্রতিবেশি দেশটিকে। ৫৮ মিনিটে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে অফসাইডের বাঁশি বাজে। অনুচিংকে এ সময় হলুদ কার্ড দেখানো হয়। ৬০ মিনিটের মাথায় ভারতের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল আদায় করে নিতে পারেননি তহুরা। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে বল নিয়ে তহুরা চলে গিয়েছিলেন মাঠের এক কোণে। সেখান থেকে শট নেওয়া বেশ কষ্টকরই ছিল।

৭২ মিনিটের মাথায় বাংলাদেশের বক্সে জটলা তৈরি করে ভারত। নিজেদের বক্সে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা আঁখি খাতুন। একের পর এক অফসাইডের বাঁশি বাজায় বেশ কয়েকবারই গ্যালারি থেকে রেফারিদের দুয়ো শুনতে হয়। কারণ, বেশির ভাগই অফসাইডের কারণ ছিল না। ৭৭ মিনিটে আবারো ভারতের আক্রমণ, প্রস্তুত ছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহমুদা। দ্বিতীয়ার্ধে এটি ছিল তার তৃতীয় সেভ। ৭৯ মিনিটে তহুরার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন শট চলে যায় ভারতের গোলবারের ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে মারজিয়ার জায়গায় কোচ গোলাম রব্বানী নামান রিতুপর্ণা চাকমাকে। ৮৫ মিনিটের মাথায় একটুর জন্য জোড়া গোলের দেখা পাননি শামসুন্নাহার। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে পা লাগাতে পারলেই নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে যেতেন। ম্যাচের বাকি সময় আর কোনো গোল না পেলেও ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল এগিয়ে থেকে ফাইনালের মঞ্চে নামার লড়াই। খাতা-কলমে ম্যাচটি ছিল নিয়ম রক্ষার। মর্যাদার লড়াইয়ের ম্যাচটি বাংলাদেশের মেয়েরা জিতে নেয় ৩-০ গোলে। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে ভারতকে সেই ম্যাচে হারানোর মধ্য দিয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবলে টানা তিন জয় তুলে নেয় বাংলাদেশের কিশোরীরা। এর আগে ২০১৫ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে ভারতকে ৩-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেই ভারতকেই ৪-০ গোলে হারিয়ে জোড়া জয় পূর্ণ করে লাল-সবুজের মেয়েরা। এবার ঢাকায় হ্যাটট্রিক জয় পূর্ণ করে টাইগ্রেসরা। ফাইনালে এই ভারতকে হারিয়েই এক হালি পরাজয় উপহার দেওয়া হলো তাদের।

এর আগে ফাইনালে ওঠার পথে নেপালকে ৬-০ ও ভুটানকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভুটানকে ৩ ও নেপালের জালে ১০ গোল দিয়েছিল ভারত। নিজেদের তিন ম্যাচে ১৩ গোল করা ভারত এবারের আসরে প্রথম গোল হজমের সঙ্গে প্রথম হারের স্বাদও পেয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে। অন্যদিকে ফাইনালে নামার আগে নিজেদের জাল অক্ষত রেখে প্রতিপক্ষের জালে তিন ম্যাচে মোট ১২টি গোল করেছিল বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমআরপি/এএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন