বিজ্ঞাপন

ছোট্ট বাবা আরাফাত, ছাড়িনি তোমার আসামীকে!

December 24, 2017 | 11:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গত ১৮ ডিসেম্বর দয়াগঞ্জ মোড়ে ছিনতাইকারীরা থাবা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে নিলে আকলিমার কোল থেকে পড়ে তার ছয়মাস বয়সী ছেলে আরাফাত মারা যায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে আরাফাতের বাবা শাহ আলম যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন।

রোববার ( ২৪ ডিসেম্বর) ছিনতাইকারী রাজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজীব তার দোষ শিকার করেছে জানিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ওই ছিনতাইকারী দোষ শিকার করেছে ,তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

রাজীবকে গ্রেফতারের পর ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম তার ফেসবুকে ছোট্র আরাফাত উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন, আরাফাাতের মায়ের চোখের পানি তাদেরকে আবেগ্লাপুত করেছে। আরও লিখেছেন, কোনও ধরণের ক্লু ছাড়া রাজীবকে গ্রেফতার করা তাদের কাছে ছিল একটি চ্যালেঞ্জ । অনেক কৌশল আর কষ্টের পরই তারা রাজীবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখায়রুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গত ১৮ ই ডিসেম্বর দয়াগঞ্জে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ভোরে সদরঘাট থেকে যাত্রাবাড়ির উদ্দেশ্যে আসতে থাকে শাহ আলম ও আকলিমা নামে এক দম্পতি। বড় ছেলের অসুখ তাই ডাক্তারের কাছে চেক আপ করাতে ঢাকায় আসা! কে জানতো তাদের এই আগমন মর্মস্পর্শী স্মৃতি হয়ে রবে জীবনে!

বিজ্ঞাপন

তাদের বহনকারী রিক্সা দয়াগঞ্জ রেললাইন এলাকা অতিক্রম করার সময়, হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই এক ছিনতাইকারী আকলিমা’র ব্যাগ ধরে হ্যাচকা টান মারে আর এতেই ভারসাম্য হারিয়ে আকলিমা তাঁর নিজের আদরের ধন ৫ মাসের আরাফাতসহ রিক্সা থেকে পড়ে যান। গুরুতর আহত হয় আদরের সন্তান আরাফাত…! মুহূর্তেই তারা চলে যান ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে!

কর্তব্যরত ডাক্তার আরাফাতকে মৃত ঘোষণা করেন। সংবাদ প্রাপ্তির পরপরই ওয়ারী বিভাগের ডিসি স্যার, এডিসি স্যার, এসিসহ সকলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

বিজ্ঞাপন

মা আকলিমা’র চোখের পানি আমাদের প্রত্যেক পুলিশ হৃদয়কে বিগলিত করে ফেলে মুহূর্তেই। কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলামনা এই ঘটনা। ঘটনার পর থেকে শুরু হয় আমাদের ঝটিকা অভিযান।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রমাণ সংগ্রহ করা। এত সকালে চাক্ষুস সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না। ভিকটিমের বাবা মাও খুব বেশি তথ্য দিতে পারছিলেন না। ভিকটিমের বাবা শুধু বলেছেন, তার সমান উচ্চতার, শ্যামবর্ণের, চিকন একটি ছেলে ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে আকলিমা বলেছেন ” আমি শুধু দেখেছি ২ টি কালো হাত”! এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের অভিযান চালাতে থাকি। দয়াগঞ্জের নিকটেই নামাপাড়া বস্তি তাই বস্তির আশপাশ ঘিরে আমাদের তৎপরতা চলতে থাকে। সময়ে সময়ে এলাকা পরিদর্শন ও লোকজনের সাথে কথা বলতে বলতে আমাদের কাছে কিছু তথ্য চলে আসে, তদন্তের প্রয়োজনে সেটি খোলাশা করছিনা।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গত রাত ১ টায় এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পাষন্ড রাজীবকে ওয়ারী বিভাগের দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই! রাজীব একজন মাদকসেবী। আশেপাশের বস্তিতেই তার বসবাস। শুধুমাত্র একটি ব্যাগের জন্য ৫ মাস বয়সী আরাফাতের জীবন নিয়ে নেয় এই পাষন্ড। আসামী রাজীব প্রাথমিক জবানবন্দীতে পুলিশের কাছে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয় এবং আজ ২৪ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

শিশু আরাফাতকে মা আকলিমা’র কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা, কিন্তু তাঁর চোখের পানি আমাদেরও কাঁদিয়েছে। কয়েক রাত আমরা ঘুমাইনি শুধু এই পাষন্ডকে আইনের আওতায় আনতে। ভিকটিমের বাবার ছোট্ট বর্ণনা, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত অংশ এবং সর্বোপরি একজন চাক্ষুষ সাক্ষী আমাদের এই অর্জনকে বেগবান করতে সহায়তা করে…কোথায় যাইনি আমরা শৌচাগার, ময়লার ড্রেন থেকে ধরে বিভিন্ন এলাকাঘেষে আমরা ঘুরেছি, হেঁটেছি। এটা আমাদের দায় হলেও আমরা এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ছোট্ট ফেরেশতা আরাফাতের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনে!!

ডিসি ওয়ারী স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে, এডিসি স্যারের সহায়তায়, সিনিয়র এসি ডেমরা’র নেতৃত্বে এস আই রেদোয়ান ও এসআই জনিসহ সর্বোপরি একটি পুরো টিম দিনরাত কাজ করে উক্ত অভিযান পরিচালনা করেন।

বিজ্ঞাপন

আরাফাত ছোট্ট বাবা আমার স্বর্গীয় পরিবেশে নিশ্চয়ই অনেক ভাল আছো!? তোমাকে হারিয়ে খুব ভাল আমরা ছিলাম না বাবা, তোমার আসামীকে ছাড়িনি । ওই পাষন্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি সুনিশ্চিত করেই আমরা থামবো বাবা’।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন