বিজ্ঞাপন

সোহেল হত্যায় জড়িত ৬ জনই শনাক্ত, গ্রেফতারে অভিযান

July 19, 2018 | 9:36 am

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলসহ তার ৫ সহযোগী মিলে কাজী রাশেদকে হত্যা করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হত্যার সাথে জড়িত ৬ জনকেই শনাক্ত করেছে। এখন গ্রেফতারের পালা। এরই মধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

রাশেদকে হত্যার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সুন্দরী সোহেলের ব্যক্তিগত অফিস থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। সুন্দরী সোহেলের দেহরক্ষী রাশেদকে হত্যার পর চারজন মিলে লাশ ফেলার দৃশ্য ওই ফুটেজে ধরা পড়ে।

পুলিশের উদ্ধার করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জাকির, হাসু, দীপু ও ফিরোজ মিলে হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে রাশেদের লাশ শাইন করে নিয়ে যাচ্ছে। লাশ ফেলে আসার পর তারা পুনরায় সোহেলের ব্যক্তিগত ওই অফিসে প্রবেশ করে।

বিজ্ঞাপন

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেন, সুন্দরী সোহেলের অফিসের ভেতরেই ৬ জন মিলে (সোহেল, ফিরোজ, হাসু, দীপু, জাকির ও রবি) রাশেদকে গুলি করে। ওই সময় দরজা বন্ধ করে প্রচণ্ড শব্দে গান বাজছিল। যার ফলে গুলির শব্দ বাইরের কেউ শোনেননি। অফিসের মেঝেতে রক্ত ভেসে যায়। পানি দিয়ে সেই রক্ত ধুয়ে মুছে ফেলে তারা। রাশেদের শরীরও অনেক বেশি রক্ত মাখা অবস্থায় ছিল। লাশ ফেলার সময় রাস্তায় রক্ত পড়বে তাই রাশেদের শরীরও ধুয়ে দেওয়া হয়।

১৫ জুলাই ভোরে যখন পরিবারের সদস্যরা রাশেদের মরদেহ সোহেলের অফিসের পেছনের গলিতে দেখতে পায় তখন তার শরীর ভেজা ছিল। আর শরীরে তেমন কোন তাজা রক্ত ছিল না। গুলিতে নিহত রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, রাশেদকে জড়িয়ে ধরার সময় বুঝতে পারি ওর শরীর সমস্ত ভেজা। মনে হচ্ছিল তার শরীরে পানি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। শরীরে তেমন রক্তও ছিল না।

বনানী থানা পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) সারাবাংলাকে জানান, সিসিটিভি ফুটেজে যে চার জনকে দেখা গেছে তারা হলেন- মহাখালীর দক্ষিণ পাড়ার ফিরোজ, আকিজপাড়ার দীপু, আমতলীর সন্ত্রাসী হাসু ও সোহেলের সহযোগী সন্ত্রাসী জাকির।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।

এদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও রাজধানী ও তার আশেপাশে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে বলে র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, রোববার (১৫ জুলাই) ভোরে দিকে মহাখালী জিপি-গ-৪২ নম্বর বাসার গলির মাথায় রাশেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পায় পরিবারের সদস্যরা। ওই বাসাতেই সপরিবারে থাকতেন রাশেদ। আর লাশ পাওয়া গেছে জিপি-গ-৩৩/১ এর পেছনের গলিতে।

রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের দাবি, সুন্দরী সোহেলের সাথে সবসময় চলাফেরা করত রাশেদ। প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাশেদ অনেক নির্যাতন সহ্য করত। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ভালো লাগছিল না জানার পর কিছুদিন হলো রাশেদ সোহেলের সাথে আর কোনো কাজ করবে না বলে জানিয়ে দেন সোহেলকে। তখন সোহেল উত্তরে বলেছিল, তুই কোথাও যেতে পারবি না। তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে। অন্য কোথাও গেলে তোকে জানে মেরে ফেলব।

বিজ্ঞাপন

রাশেদের মা রাবেয়া বেগম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘রাশেদকে মাঝে মধ্যেই মারধর করত সোহেল। তবুও রাশেদ কিছু বলত না। সোহেল প্রায় রাতেই ড্রিংকস করত। তখন রাশেদকে বাসায় আসতে দিত না। অফিসে তার সাথে থাকতে হতো।’ সোহেলই তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। ‘সোহেল আমার ছেলেকে হত্যা না করলে ওর বাবা-মা পর্যন্ত পলাতক কেন?’, জানতে চান রাবেয়া বেগম।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের টাকা ভাগাভাগি নিয়েই রাশেদকে হত্যা করা হতে পারে। তদন্ত চলছে। জড়িতরা অবশ্যই ধরা পড়বে।

এদিকে, রোববার (১৫ জুলাই) ময়নাতদন্ত শেষে রাশেদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাশেদের শরীরের বুক ও পেট থেকে চারটি গুলি পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে অনেক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

একই দিন বিকেলে বনানী থানায় রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার ইউসুফ সরদার সোহেলকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের নামে মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদুল আলম সারাবাংলা’কে বলেন, পরিবার যাদের সন্দেহ করছে মূলত তারাই রাশেদকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের সবাই পলাতক রয়েছে। অভিযান চলছে তাদের গ্রেফতারে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন কাজী রাশেদ হোসেন। সোহেলের পরামর্শে প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরেন। তখন থেকে সোহেলের সাথেই চলাফেরা করতেন তিনি। চার বছর আগে সৈয়দপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তারকে বিয়ে করেন রাশেদ। দুই বছর আগে তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। চার ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ বড়। তাদের আরও দুই বোন রয়েছেন। বাবা ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকোতে গাড়ি চালান। মা গৃহিণী।

সারাবাংলা/ইউজে/এমএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন