বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানে ভোট, অভ্যুত্থান ছাড়াই সেনাবাহিনীর দেশ দখল

July 25, 2018 | 4:48 pm

সন্দীপন বসু

সন্দীপন বসু ।।

জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ভোটগ্রহণ চলছে পাকিস্তানে। ৩৪৭ আসনের জাতীয় পরিষদের ২৭২টিতে সরাসরি ভোট হচ্ছে। ৭০টি আসন আছে সংরক্ষিত। একইসঙ্গে ভোট হচ্ছে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচনেও। দেশটির সিন্ধ, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ায় ভোট দিচ্ছেন সাড়ে ১০ কোটি ভোটার।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের নির্বাচনকে ঘিরে গত তিনমাস ধরেই উত্তপ্ত দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরীফ।

এদিকে প্রচারণার সময় জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন প্রার্থীসহ নিহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। ভোটের দিনও ওয়াজিরিস্তান ও পাঞ্জাবে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিতে মারা গেছেন অন্তত ৪১ জন। ভোট শুরুর আগেই এবারের নির্বাচনকে দেশটির সংবাদমাধ্যমই অভিহিত করেছে, সেদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দূষিত নির্বাচন হিসেবে।

তবে এবারের নির্বাচনে ভোটের লড়াইকে ছাপিয়ে নওয়াজ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা অস্থিরতাই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সঙ্গে পাকিস্তানের আরো একটি চিরন্তনী বাস্তবতা উঠে এসেছে- সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় দখলদারিত্ব। সব দেখেশুনে বিশ্লেষকদের মন্তব্য- অভ্যুত্থান ছাড়াই পাকিস্তান দখল করতে চলছে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী।

বিজ্ঞাপন

‘মাইনাস নওয়াজ’
এবারের নির্বাচনে নওয়াজের পিএমএল-এন এর সাথে মূল লড়াই হচ্ছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের। ইমরান সেনাবহিনীর সমর্থন পাচ্ছেন বলে বহুদিন আগে থেকেই মন্তব্য করে আসছিলেন বিশ্লেষকরা। তবে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি।

পিএমএল-এন এর অভিযোগ, সেনাবাহিনী অপ্রকাশ্যে তাদের দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আর সেনাবাহিনীর লক্ষ্য একটাই- মাইনাস নওয়াজ। গণমাধ্যমের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ও ভয়ভীতি দেখানো ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের। নির্বাচনে জঙ্গি আর সন্ত্রাসীদের ব্যপক অংশগ্রহণ দেশটির মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগের কারণ।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্বাচন সামনে রেখে এক বছর ধরে যা ঘটছে একে আরেকটি নীরব সামরিক অভ্যুত্থান বলেই মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে ভোটের তিনমাস আগে থেকে সব রকম জরিপে নওয়াজ শরীফের দল এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের চলতি ক্ষমতার পটবদলের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান মুসলীম লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। প্রভাবশালী এই সংবাদমাধ্যমটির মন্তব্য, সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে নওয়াজ ক্ষমার অযোগ্য ভুল করেছেন। কারণ সেনা আশির্বাদপুষ্ট হয়ে নওয়াজ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হলেও ক্ষমতাধর সেনা কর্তৃপক্ষকে তুষ্ট করতে পারেননি তিনি। এজন্য তিনবারই মেয়াদপূর্তির আগেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এজন্যই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা আর কোনো সুযোগ নওয়াজ শরীফকে দেবে না দেশটির সেনাবাহিনী।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ভোট গ্রহণের দিনে পাকিস্তানের এক সাবেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নওয়াজ সেনাবাহিনীর বিরাগভাজন হয়েছিলেন অনেক আগেই। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে উৎখাত হওয়ার পর তখনকার সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফ তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি রাজ পরিবারের অনুগ্রহে সেবার রক্ষা পান তিনি। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার পরপরই নওয়াজ শরীফ বলেছিলেন, তিনি পাকিস্তানের মানুষকে জানিয়ে দিতে চান যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের ‘বস’, সেনাবাহিনী নয়। অনেক বিশ্লেষক এখন বলছেন, আসলে সেদিনই নওয়াজ শরীফের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। এতদিন ছিল শুধু সময় গোনা এবং ক্ষেত্র প্রস্তুতের পালা।

এই ক্ষেত্র প্রস্তুতের অংশ হিসেবেই কি না অথবা ছকের ধারাবাহিকতায় পানামা পেপার্স তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে পাকিস্তানের আদালত তাকে সরকারি দায়িত্বে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেন। এ ঘটনাকে তখন অনেকেই আখ্যা দিয়েছিলেন বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান হিসেবে, যার সবকিছু ঘটেছে সেনা কর্তৃপক্ষের অঙ্গুলি হেলনে।

পদচ্যুত হওয়ার পর কিছুদিন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকলেও এরপর তিনি লন্ডনে চিকিৎসারত স্ত্রীর সাথে দেখা করতে যান। সঙ্গে যান দলে নওয়াজের উত্তরসূরি মেয়ে মরিয়ম নওয়াজও। দুইজনের অনুপস্থিতি লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে গত ৬ জুলাই আদালত নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে সাত বছর ও তার স্বামী মেজর ইফরান সফদারকে এক বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

নওয়াজ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়ায় তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট হন তার ভাই শেহবাজ শরীফ। নওয়াজের ছোট ভাই শেহবাজই তখন থেকে পিএমএল-এন এর প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নির্বাচনের প্রায় তিনমাস আগে দণ্ড মাথায় নিয়ে পিতা-কন্যা পাকিস্তানে ফিরে আসেন নওয়াজ ও মরিয়ম। বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেফতার করে আদিয়ালা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসানো ও নামানোর রশি যাদের হাতে সেই সেনাবাহিনী নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের কাউকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। এজন্যই নওয়াজ ও তার সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে নওয়াজের ছোট ভাই পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, শাহবাজের ছেলে এবং দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদী তৎপরতার অভিযোগ এনে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেছে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।

এনডিটিভি মন্তব্য করেছে, নওয়াজ শরীফের কপালজোর যে এখনো প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর মতো করুণ ট্র্যাজেডি বরণ করতে হয়নি। ২০০৭ সালে এ রকম জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতায় থাকা জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বিরাগভাজন বেনজির ভুট্টো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছিলেন। সে সময় বিমানবন্দরের মিছিলের মধ্যে আততায়ির গুলিতে নিহত হন তিনি।

দেশে ফেরার অব্যহতি আগে বেনজির সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি মৃত্যুকে মাথায় নিয়ে দেশে ফিরছি। কারণ আমার হাতে এ সময় আর কোনো বিকল্প নেই। এ সময় দেশে না ফিরলে অবধারিতভাবে আমার রাজনৈতিক মৃত্যু হবে। আর দেশে ফিরলে জীবনমৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেঁচে গেলে রাজনীতি ও জীবন দুটিই বাঁচবে। অন্যদিকে মৃত্যু হলে তা হবে রাজনৈতিক মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি শ্রেয়। তাই মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্যই আমি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি।’

বেনজির আরো বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যু হলে এজন্য দায়ী হবেন পারভেজ মোশাররফ।’ এতো কিছুর পরও বেনজির বাঁচতে পারেননি। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর মিছিলের মধ্যে গুলিতে ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিহত হলেন বেনজির ভুট্টো। এখনো পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, সবকিছু ঘটেছে তখনকার সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের নির্দেশেই।
এবারে নওয়াজের পরিস্থিতিও অনেকটা বেনজির ভুট্টোর মতোই। বেনজিরের মতোই এবার নওয়াজ শরীফ ইচ্ছা করলে লন্ডনে অবস্থান করে গ্রেফতার ও জেল-জরিমানা এড়াতে পারতেন। কিন্তু নওয়াজ বেনজিরের ভাষাতেই বলেছে, নিজের রাজনৈতিক মৃত্যু ঠেকাতেই সব ঝুঁকি নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য পাকিস্তানের পঙ্কিল রাজনীতিতে নির্বাচনের আগে নওয়াজ ও তার মেয়ে মরিয়মের দেশে ফিরে আসা ইতোমধ্যে ‘আত্মদানের’ মর্যাদা পেয়ে গেছে। এবারের নির্বাচনে দল না জিতলেও কারাবরণ করে ভাবমূর্তি বদলে ফেলেছেন নওয়াজ। দুর্নীতিবাজ ভাবমূর্তি সরিয়ে দল তাকে এখন গণতন্ত্রের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা মানুষ হিসেবেই দেখাতে চাইছে। যা সেনাবাহিনীর শিরঃপীড়ার কারণ।

জঙ্গি পুনর্বাসন
সাল ১৯৭৮। পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হন জেনারেল জিয়াউল হক। ক্ষমতায় বসেই জেনারেল জিয়া সামরিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে ফাঁসি দেন জুলফিকার আলী ভুট্টোকে। কিন্তু অল্পদিনেই তিনি বুঝতে পারেন রাজনৈতিক ক্ষমতা আর সামরিক ক্ষমতার পার্থক্য। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিবারের কর্তৃত্ব হ্রাস করার জন্য জেনারেল জিয়াউল হক ইসলামি কট্টরপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবের প্রভাবশালী শিল্পপতি পরিবারের তরুণ তারকা নওয়াজ শরীফকে টেনে এনে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

এর ৩৮ বছর পর সাল ২০১৮। ক্ষমতায় আহোরণে পাকিস্তানের বর্তমান সেনা কর্তৃপক্ষের একমাত্র বাধা সেই ‘রাইজিং স্টার’ নওয়াজ শরীফ। এবারো প্রায় একই কৌশল। কট্টর ইসলামপন্থিদের সহযোগিতায় নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারকে রাজনীতি থেকে বাদ দিয়ে সাবেক ক্রিকেটার উগ্র মতাবলম্বী ইমরান খানকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে দেশটির সেনাবাহিনী। এমনটাই মত দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তবে এটি স্পষ্ট যে, নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পদক্ষেপ হিসেবে সেনাবাহিনী এবার ব্যবহার করছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের। গত তিন বছরে ভারত ও আফগানিস্তানে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মূলধারার রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে সেনাবাহিনী। ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে জঙ্গি আক্রমণের প্রধান আসামি মাওলানা হাফিজ সাঈদকে শুধু মুক্তিই দেওয়া হয়নি, তার নেতৃত্বে ‘আল্লাহু আকবার তেহরিক’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন খুলে সেই দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে। দেশটির গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলো এই ইসলামীকরণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের আরো মত, পাকিস্তানে যা ঘটছে, তাতে পুরো অঞ্চলের জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি হয়েছে।

সেনাবাহিনীর নতুন এই ছকে পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থার এই নতুন সংস্করণে উগ্র ইসলামি দল যেমন, লস্কর-ই-তৈয়বা, আল কায়েদা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও তালেবান গোষ্ঠী আরো শক্তিশালী হবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাই সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে পাকিস্তান ভবিষ্যতে আরো সামরিকতন্ত্র ও উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে।

‘নতুন পাপেট ইমরান’
নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই পাকিস্তানে জোর গুঞ্জন সেনাসমর্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি জরিপেও ইমরান খানকেই দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব তাকে এই অবস্থান এনে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

তবে সেনাবাহিনীর লক্ষ্য যে তাদের আশির্বাদপুষ্ট ইমরান খানকে ক্ষমতায় বসানো সেটি স্পষ্টই টের পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালে নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে দহরম-মহরমের অভিযোগে ইমরান খানের দল পদযাত্রা করে ইসলামাবাদের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রাজধানীকে প্রায় অচল করে দিয়েছিল। এই অচলাবস্থা ছিল প্রায় তিন মাস। তখন সবারই মন্তব্য, সেনা কর্তৃপক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় ও নির্দেশে ইমরান খান ওই কর্মসূচি পালন করছেন। এই পদযাত্রার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ কঠোর ভূমিকায় থাকলেও একসময় প্রায় বাধ্য হয়ে সেনা সদরে এসে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টির সমাধানে সাহায্য চান। এর পরদিনই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন ইমরান খান। ওই সময় থেকে দেশটিতে এটা স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনীর পরবর্তী দাবার ঘুঁটি বা উপযুক্ত পাপেট ইমরান খান। আর তাই আজকের নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও কট্টর ইসলামপন্থিদের সমর্থনে যে কোনোভাবেই ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে বলে সবার ধারণা।

সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান তার প্রায় দুই দশকের রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই উগ্রপন্থী হিসেবে পরিচিত। ভাষা ও বক্তব্য মিলিয়ে পাকিস্তানে তাকে উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত ক’বছরে এই উগ্রপন্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর আরোপিত ভাষা। নওয়াজ শরীফ ও বিলওয়াল ভুট্টোকে পোষ মানাতে না পেরে পাকিস্তানের সেনা কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পাপেট মনে করছে ইমরান খানকেই।

এদিকে নওয়াজপন্থীরাও বলছেন, পিটিআইকে নির্বাচনে জেতাতে সেনানিয়ন্ত্রিত সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। দলটি জানিয়েছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা আশা ছাড়বে না। তবে বিশ্লেষকদের অভিমত, পিএমএল-এন যতই আশা করুক সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়াই এবারে দেশ দখলের কাজটি প্রায় সুসম্পন্ন করে ফেলেছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

সন্দীপন বসু: লেখক, সাংবাদিক।

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন