বিজ্ঞাপন

 ৩৭ বছর ধরে আকমল হোসেন কী পড়িয়েছেন খতিয়ে দেখার আহ্বান

July 25, 2018 | 5:43 pm

।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।­

বিজ্ঞাপন

ঢাবি: বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগের পর প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেনের শিক্ষাদান নিয়েও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আহ্বান জানিয়েছে, আকমল হোসেন তার ৩৭ বছরের শিক্ষাকতা জীবনে কী পড়িয়েছে তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার।

বুধবার (২৫ জুলাই) বেলা বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অধ্যাপক আকমল ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে পড়িয়েছেন। তিনি কী ৩৭ বছর এই বিষয়গুলো পড়িয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে বিভ্রান্তকর তথ্য পড়িয়েছেন সেটিও খতিয়ে দেখার বিষয় আজকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব ৩৭ বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে তিনি কী পড়িয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে শিক্ষক সমিতির এই নেতা গত ২২ জুলাই সচেতন শিক্ষকবৃন্দের মানববন্ধনে অধ্যাপক আকমল হোসেন গত ১৯ জুলাই একটি কর্মসূচিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। শিক্ষক সমিতি ওই শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা অধ্যাপক আকমল হোসেন তার বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহআন জানান। এর জবাবে অধ্যাপক আকমল হোসেন গতকাল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার বক্তব্যের ব্যাখা দেন।

মানববন্ধনে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, কোটা আন্দোলনের ভেতর জামায়াত-বিএনপি ঢুকেছে। আয়োজকরা অধ্যাপক আকমলের বক্তব্যের পরে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া করেনি। অধ্যাপক আকমল হোসেন যে অপরাধে অপরাধী আয়োজকরাও একই অপরাধে অপরাধী। আয়োজকরা তাদের বসিয়ে রেখে হাত তালি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই হাততালি ছাত্র শিবির বিএনপি-ছাত্রদলের হাততালি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশঙ্কা করেছি কোটা আন্দোলন এদেশের ছাত্রদের অধিকারের আন্দোলন নয়। কোটা আন্দোলন হলো নির্বাচনের বছর যাতে করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে সরকাররে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতা নেওয় যায়। এ আশঙ্কা আমরা সেদিন থেকে করেছিলাম। আর সেদিনকার হাততালি থেকে সে আশঙ্কা প্রমাণিত হলো।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে বসে বসে মুক্তিযুদ্ধের সমালোচনা করছিল অভিযোগ করে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছিল ভোটের বাক্সে লাথি মার, বাংলাদেশ কায়েম কর। একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সৃষ্টি করার যে পথ বঙ্গবন্ধু উন্মোচন করতে চাচ্ছিলেন সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করার প্রচেষ্টা তারা তখন করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ হলো দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি; সুতরাং আমরা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না।’

“স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ দাঁড়িয়ে বলে ‘জাতির পিতা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে?।’ এই অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চুপ থাকতে পারে না। আমরা বিবৃতিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছি। সহকর্মীরা আইনের মাধ্যমে জিনিসটির সুরাহার কথা বলেছেন। আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেব আলোচনা করে।”

অধ্যাপক মাকসদু কামাল বলেন, ২০০২ সালের ৮ জানুয়ারি মতিউর রহমান নিজামী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিল মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাতিল হবে। ২০০৩ সালে দেলওয়ার হোসেন সাঈদি বলেছিল মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাদ দিতে হবে। তারা যে বক্তব্য রেখেছে সেই বিষয় নিয়ে আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত তরুণরা যখন মাঠে নেমেছে শিক্ষক সমিতি তখন যুগের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সংহতি প্রকাশ করেছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলে কোটা আন্দোলনে যদি কোনো বাধা আসে প্রতিরোধ করতে হবে। যখন আজ লন্ডন থেকে কিভাবে কোটা আন্দোলনকে উসকে দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়। তখন কোটা আন্দোলন কোন দিকে সেটা বোঝার আমাদের অবকাশ নাই। তিনি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে কেউ যেন কোনো উসকানিতে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করেন তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পাস হলো এই জাতির বিবেক। এখানে দাঁড়িয়ে এমন কিছু হবে না যাতে আমাদের মস্তক অবনত হয়ে যায়।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক আ ক ম  জামাল উদ্দীন, তিনি মুক্তিযুদ্ধ কোটা বহাল রাখার দাবি জানান ও কোটা আন্দোলনের জন্য সরকারের পলিসিকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে প্রজ্ঞার সঙ্গে বলতে চাই, আপনার সরকারের পলিসিও কিন্তু কোটা আন্দোলনের জন্য দায়ী। ফরাস উদ্দীন কমিশনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।  অতিরিক্ত আমলা পোষণের  কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা আজকে একাডেমিক পড়া, না পড়ে বিসিএস পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেকে/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন