বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের গুলি করে মারা উচিত: বিজেপি এমপি

August 1, 2018 | 10:06 am

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ভারতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গারা বিপজ্জনক। তারা স্বেচ্ছায় ভারত না ছাড়লে, তাদের গুলি করে মারা উচিত। এ ছাড়া শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মনোনীত তেলেঙ্গানা রাজ্য বিধানসভার সদস্য টি রাজা সিং এমন মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আসামের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে উগ্র পোস্ট দেওয়ার পর সংবাদ সংস্থা এএনআইকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশিরা কি করে থাকে, এদের রাখার কি প্রয়োজন? আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছি- এদের দূরে পাঠিয়ে দিতে। নইলে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে অন্য দেশগুলো যা করে, ভারতও তাই করুক।’

এর আগেও, নিজের নির্বাচনী এলাকা তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শুধু টি রাজা সিং’ই নয়, আসামের নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাদের বিরুদ্ধে আসামের মানুষের ক্ষোভ উস্কে দিতে অমিতের মন্তব্য, ‘লোকে মানবাধিকারের কথা বলে। অসমিয়াদের মানবাধিকার নেই? তাদের রোজগারের সুযোগ যখন অনুপ্রবেশকারীরা কেড়ে নেয়, তখন মানবাধিকারের প্রশ্ন আসে না! অনুপ্রবেশকারীদের মদদ দিলে দেশের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?’

এরইমধ্যে মুসলিমদের বাদ দিয়ে, হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখদের ‘শরণার্থী’ আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব প্রদানে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিলও পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে জায়গা দেওয়ার প্রশ্ন নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়ে বিজেপি প্রধান বলেছেন, ‘যারা নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে, ধর্ম বাঁচাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসেন, তারা শরণার্থী। কিন্তু যে রোজগার বা অন্য কারণে বেআইনিভাবে ঢোকে, সে অনুপ্রবেশকারী। বিজেপির মনে এ নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, ‘প্রতিটি রাজ্যে কত সংখ্যক রোহিঙ্গা আছে, তা জানাতে বলা হয়েছে। রাজ্যগুলি থেকে তথ্য আসার পরে এসব অনুপ্রবেশকারীদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, ‘ভারত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেয়নি। এখানে থাকা রোহিঙ্গাদের একাংশ নানা অপরাধমূলক কাজে যুক্ত। তারা ভোটার কার্ড জোগাড় করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন।’

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার হিসেব মতে, ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছে। যাদের বেশিরভাগই রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে।

বিজ্ঞাপন

জম্মুর বিজেপি সাংসদ যুগল কিশোর অভিযোগ করেছেন, তার রাজ্যে অন্তত ১৫-২০ হাজার রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাস করছে। যাদের কেউ কেউ কাশ্মীরের সেনা ছাউনিতে হামলার সঙ্গেও জড়িত। জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে একাধিক রোহিঙ্গা। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি তোলেন ওই সাংসদ।

এদিকে বিজেপি সরকারের এই মুসলিম বিদ্বেষ নীতি ও আসামের নাগরিক পঞ্জি ইস্যুতে বেজায় চটেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভারতে কে থাকবে, আর কে থাকবে না, তা শাসক দল ঠিক করে দিতে পারে না। বিজেপিকে ওই কথা বলার সাহস কে দিল?’

অপরদিকে সিপিএম নেতা মুহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, ‘নাগরিকত্ব কি ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে? এ তো কোনো রাজ্যের নাগরিকত্ব নয়। দেশের নাগরিকত্ব।’

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, ‘‘অমিত শাহও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিতে ভোট কুড়াতে চাইছেন। এই রাজনীতিকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।’’

সারাবাংলা/এএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন