বিজ্ঞাপন

‘দুঃখ একটাই, জিয়ার বিচারটা করতে পারলাম না’

August 1, 2018 | 6:45 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বহঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সত্যকে কেউ কখনও চাপা দিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু আমার দুঃখ একটাই, আমি জিয়ার বিচারটা করতেই পারলাম না। তার আগেই সে মারা গেল।

বুধবার (১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে শোকাবহ আগস্টের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত এক রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাসও কিন্তু প্রতিশোধ নেয়। জাতির পিতাকে হত্যা করে এই জাতিকে বিকৃত ইতিহাস জানানো হয়েছিল। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনও চাপা দিয়ে রাখতে পারে না। তাই মানুষের কাছে এখন সব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা এবং তার অপরাধটা কি ছিল’এমন প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার অপরাধ একটাই, তিনি বাঙালি জাতির মুক্তি এনেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। বাঙালী জাতিকে স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাই যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জাতির পিতার নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরাজয় বরণ করে, সেই পরাজয় তারা মেনে নিতে পারেনি।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদশীয় দোসর কুলাঙ্গাররা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল বলেও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সাথে তাদের কিছু প্রভু, যারা হয়ত ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শে তারা বিশ^াস করতো না। তারাই এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা। এই পরাজিত শক্তি, তারাই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে এভাবে হত্যা করে। আর ভেবেছিল, জাতির পিতাকে হত্যা করলে এই স্বাধীন বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। বাঙালী জাতি শৌর্য বীর্য গৌরব হারাবে। আর এই দেশ আবারও সেই পাকস্তানি শাসকদের পদতলে চলে যাবে। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্যে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই তারা এ হত্যাকান্ড চালায়।

স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে ধ্বংসস্তুপ থেকে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে গড়ে বিভিন্  দিকও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

এই দেশ নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল বাবার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন দেশটা কেবল উঠে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক সেই সময় চরম আঘাতটা হানল। কি দুভার্গ্য আমাদের ? অতি পরিচিতজন। খুনী রশীদ ফারুক ডালিম, নূর এরা কারা? এদের তো প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল। ডালিম, ডালিমের শ্বাশুড়ী তার বউ, শালি দিনরাত ২৪ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকত।

কর্ণেল, ফারুক ও রশিদের বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন,‘ এটার প্রমাণ পাবেন, যখন ৭৫’র পর খুনী মোশতাক। তিনি তো সেই আমাদের দলেরই ছিল। কিন্তু সেও বেঈমানি-মোনাফেকি করল। কিন্তু তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। মোশতাকের পতনের পরেই প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান সেই সায়েম সাহেবকে বঙ্গভবনে অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্ষমতা থেকে বের করে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।

জিয়ার শাসনামলে ইতিহাস বিকৃত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নসাৎ করাসহ বিভিন্ন অপকর্মগুলোর দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসে চাকরি করে কারা? জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল ওই জিয়াউর রহমান। কেন পুরস্কৃত করেছিল? জিয়া এই ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল বলেই, এই খুনিদের পুরষ্কৃত করেছিল।”

আমাকে ও রেহানাকে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। রেহানার পাসপোর্টটা পর্যন্তও রিনিউ করতে দেয়নি। ১৯৮১ সালে ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে আসার পর ধানমন্ডিতে ৩২নম্বরে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও বিষয়টিও তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

এবিষয়ে শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাসও কিন্তু প্রতিশোধ নেয়। জাতির পিতার নাম নিশানা মুছে ফেলে দিয়ে বিকৃত ইতিহাস এদেশের মানুষকে শোনানো হয়েছিল।  বাংলাদশের কথা বললেই বঙ্গবন্ধু আসে। সেই নাম সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা কিন্তু সত্যকে কেউ কখনো চাপা দিয়ে রাখতে পারে না। জিয়ার যা পরিণতি হয়েছিল, তা তার অবধারিত তবে আমার দুঃখ একটাই তার বিচারটা আমি করতে পারলাম না। তার আগেই সে মরে গেল।

শতবাধা অতিক্রম করে, ২১ বছর পর যখন সরকার গঠন করলাম। এরপর ওই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে দিয়ে জাতির পিতার খুনিদের বিচারের কাজ শুরু করার বিষয়টি তুলে ধরেন।

এই বিচারের কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা, অনেক ধুমকি, অনেক হুমকি, অনেক কিছুই আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, এই অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া য়ায় না। আমি আর রেহানা বিদেশের মাটিতে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। তাই আমি মনে করি, এটা আমাদের কর্তব্য। এই খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই করবো। আর সেই সাথে সাথে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ। দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেই হাসি ফোটানো। এটাই ছিল আমাদের জীবনে প্রতিজ্ঞা। কাজেই সেই খুনীদের বিচার করেছি।

এজন্য ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখনো কিছু খুনী লুকিয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের ফিরিয়ে আনতে। এই হত্যার বিচার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে পেরেছি। আজকে ক্ষধুামুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশকে এখন আমাদের দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বে আবার মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। একটা একটা অর্জন যখন হয়। তখন শুধু এইটুকুই মনে হয়, আমার আব্বা-আমার মা নিশ্চয়ই দেখতে পান, তাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মর্যাদা ফিরে পেয়েছে।

কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুরনাহার লাইলী, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা। সভা পরিচালনা করেন কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র দে।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন