বিজ্ঞাপন

সোলারে জেগে থাকা সোলারেই ঘুম

December 28, 2017 | 10:16 am

মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চরকুকরী মুকরী থেকে ফিরে : কেবল ভোলাই নয়, এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের অতি প্রাচীন দ্বীপগুলোর মধ্যে চরকুকরী মুকরী অন্যতম। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে অন্তত চার শ’ বছর আগে দৃশ্যমান হয় এই দ্বীপ। তবে একদিকে মেঘনা নদী আর তিন দিকে বঙ্গোপসাগর হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। তাই এ দ্বীপের জনবসতিতে বিদ্যুতের আশীর্বাদ নেই একদম।

বিদ্যুতের ঝলমলে আলো নেই তাই বলে কি বিকশিত হবে না এখানকার মানুষের জীবন মান? তারা কি পিছিয়ে থাকবেন প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকে? না, সৌরশক্তি দ্বীপবাসীদের অপূর্ণতা পূরণ করছে। তারা এখন সোলারের আশীর্বাদে জেগে থাকেন আবার ঘুমাতেও জান এই সোলারের ছোঁয়ায়।

চরের মুসলিম মহল্লাগ্রাম। ঘড়ির কাটা তখন ১১টা ছাড়িয়েছে। মাটির রাস্তার কোল ঘেঁষে এটি ছোট্ট জরাজীর্ণ ঘর। ঘরটির চালে শোভাপাচ্ছে সোলার। কৌতূহলী হয়ে পড়লাম। সেলফোনে ছবি তুলতে তুলতে বার কয়েক হাঁক-ডাক ছাড়লাম। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না। পরে জানতে পারলাম, ঘরটির মালিক নূরুদ্দীন মিয়া একজন নিতান্তই খেটে খাওয়া মানুষ। তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। নূরুদ্দীন মিয়া গ্রামের অন্য সবার মতো বেশ কিছুদিন হলো ঘরে সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কেবল নূরুদ্দীন মিয়াই নয়, চরের এমন কোনো ঘর নেই যেখানে সোলারের প্যানেল চোখে পড়ল না। বাজার এলাকা থেকে শুরু করে একেবারে জঙ্গলের কোল ঘেঁষে যে বসতি তার প্রত্যেক ঘরেই দেখা মিলল সোলার প্যানেল।

পথে যেতে যেতে কথা হয় আমীনপুর গ্রামে সিদ্দিক আলীর সঙ্গে। তার মতে, এখানে বিদ্যুৎ আসবে সেটি এখনো স্বপ্নের মতো। তাই সোলার প্যানেলের আলোয় এ চরের প্রতিটি ঘর আলোকিত। তার নিজের ঘরেও চল্লিশ ওয়াটের প্যানেল রয়েছে। যা দিয়ে চারটি লাইট, দুইটি ফ্যান চালানো যায়। এ ছাড়া লাইট চার্জ ও মোবাইলে চার্জ তো আছেই।

বিজ্ঞাপন

সিদ্দিক আলী বলেন, ‘আগে এই চরে গ্রামীণ শক্তি, পল্লী শক্তি ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কিস্তিতে সোলার প্যানেল দিত। ২০ ওয়াটের একটি প্যানেল তারা দিত ১৮ হাজার টাকায়। কিন্তু এখন তারা নগদ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় এগুলো কিনছেন। সোলারের জন্য এ চরের মানুষ এখন আর কোনো এনজিওর কাছে যায় না।’

চরকুকরী মুকরী বাজারের পাশে বন বিভাগের নতুন অত্যাধুনিক রেস্ট হাউজেও বসোনো হয়েছে বিশাল সোলার প্যানেল। এ ছাড়া বাজার এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বসানো সড়ক বাতিগুলোও চলছে সোলার প্যানেলে। মূলত পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান সবখানেই সোলারের আলো।

রেস্ট হাউজের সামনে চায়ের দোকানী আলাউদ্দীন হাওলাদার। জানালেন ১৯৭২ সালে বন বিভাগে বাবার চাকরি সুবাদে আসেন এই চরে। কর্মজীবনে বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন তিনি। এখন এখানে চায়ের দোকান দেন। বাজারেও মুদি দোকান আছে তাদের। বাড়িতে ও দোকানে সবখানেই সোলারের আলো। তিনি জানালেন, এখন মোবাইল ছাড়া জীবন চলে না। সোলারের সাহায্যে মোবাইল চার্জ দেন তারা। গরমকালে ঘরে ফ্যানও চলে এতে। দ্বীপবাসীর জীবন যাত্রার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতি থেকে আহরিত এ শক্তি।

এই চরে সোলারের উপস্থিতি জলে-স্থলে সমানভাবে চোখে পড়ে। জেলেদের কোষা নৌকায় দেখা মিলল সোলার প্যানেল। দূরে মাছ ধরায় নিমগ্ন এক জেলের কাছে হাঁক ছেড়ে জানতে চাইলাম নৌকায় সোলারের প্রয়োজনই বা কেন? উত্তরে তিনি জানালেন, রাতে মাছ ধরতে আলোর প্রয়োজন হয়। মোবাইলে বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে হয়। এসব সোলারের সাহায্যেই করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ১২নং চরকুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজন বলেন, ‘এ দ্বীপের প্রায় শতভাগ বাড়িতেই সৌর বিদ্যুৎ রয়েছে। সরকার এই দ্বীপে সোলার ভিত্তিক ২ মেঘাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রা আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।’

সারাবাংলা/এমএস/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন