বিজ্ঞাপন

শহিদুলের জন্য রঘুর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

August 7, 2018 | 8:42 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং দৃক ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে কোনো ধরনের শাস্তি না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই।

মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা এক খোলা চিঠিতে এই অনুরোধ জানান এই আলোকচিত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা রঘু রাইয়ের খোলা চিঠিটি সারাবাংলার পাঠকদের জন্য সরলভাবে অনুবাদ করে দেওয়া হলো। সঙ্গে যুক্ত করা হলো ১৯৭১ সালে তার তোলা কিছু ছবিও।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুরাতন সংসদ ভবন, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ

আমার নাম রঘু রাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর ছবি তুলে অবদান রাখায় ২০১২ সালে আমাকে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে সম্মানিত করেছিলেন আপনি। প্রতিবেশি ও বন্ধুদের সমর্থনে যে যুদ্ধে জয় পেয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ কবি, লেখক, শিল্পীর দেশ। এদের মধ্যে অনেকেই দেশভাগের সময় ভারতে চলে গিয়েছিলেন। আমাদের বন্ধন অনেক গভীরে প্রোথিত, শুধু সাংস্কৃতিকভাবেই নয়, আত্মিকভাবেও।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী, আপনি মহান বিপ্লবী শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। যিনি পাকিস্তানের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এর প্রতিদানে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশিদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। এর পরে পুরো জাতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে এবং বাংলাদেশে পরিণত হয়। তাই আমাদের তরুণদের আর শিক্ষা দিতে যাবেন না।

সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী, দৃক ও পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম আপনার বাবা শেখ সাহেবের একজন গুণমুগ্ধ। গত তিন দশক ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে তাকে আমি চিনি। শহিদুল সেই বিরল মানুষদের মধ্যে একজন যিনি সত্য ও সততার জন্য প্রতিশ্রতিবদ্ধ এবং প্রয়োজনে যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। গত ৫ আগস্ট রাতে গোয়েন্দা পুলিশের ২০-৩০ জন সদস্য তাকে তুলে নিয়ে যান। তাকে এতো নির্যাতন করা হয়েছে যে নিজে হাঁটতেও পারছেন না। এটা দেখে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

আমরা জানতে পেরেছি যে বাংলাদেশের পরিবহন খাতের নৈরাজ্য এবং সড়কে চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় সাধারন মানুষের মৃত্যু ও পুলিশের অবহেলার বিরুদ্ধে দেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের যা চাওয়া তার সঙ্গে দেশের যে কোনো বিবেকবান মানুষ একমত হবে। আর শহিদুল সেটাই আল জাজিরা চ্যানেলকে বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহ আমাদের জগতের সকল অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করুন। যদি কোনো প্রতিপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ এই তরুণদের অপব্যবহার করে তাহলে তারাই এর মোকাবিলা করবে। কিন্তু আমার বন্ধু শহিদুল আলমের মতো সৎ এবং বিশ্বস্ত দেশপ্রেমিক নাগরিকরা বুঝতে পারেন যে তরুণরা কী চাইছে। আমি সবসময় তাকে বলি যে তিনি যেন গণমানুষের চোখ দিয়ে দেখেন এবং তাদের মনের কথা শুনতে পান। আর আজ এজন্যই তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাকে সেই পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের কথা মনে করিয়ে দেয় যারা বাংলাদেশের মানুষকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। ভারত থেকে শুধু আমিই নই, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক, আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের পাশে আছেন। শহিদুলকে আটক করা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে এই খবর পেয়ে আমরা ভীষণভাবে ব্যাথিত। তিনি যা করেছেন তা হলো, চলমান বাস্তবতাকে নিজের ফটোগ্রাফিক দক্ষতা এবং আওয়াজ দিয়ে সবার সামনে শুধু তুলে ধরেছেন।

আমি বিনীতভাবে আপনাকে অনুরোধ করছি, শহিদুল আলমের মতো সৎ এবং সত্যবাদী তারুণ্যের প্রতিনিধিকে যেন কোনা শাস্তি দেওয়া না হয়। গণতন্ত্রের চেতনা হিসেবে সত্যকে অবশ্যই টিকে থাকতে হবে, আপনার দেশের লাখো তরুণের বুকে যে আলো জ্বলছে সেই আলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আশা করবো একজন শহিদুল আলমের জন্য শত মানুষের যে বিনীত অনুরোধ তাকে আপনি সম্মান করবেন।

বিনীত
রঘু রাই
বাংলাদেশের বন্ধু

ক্যামেরার কবি হিসেবে পরিচিত ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের যে ছবি তোলেন তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয় যুদ্ধের ভয়াবহতা। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে রঘু রাইকে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় মোট ৬৯ জনকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

গত রোববার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহিদুল আলমকে তার বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের অ্যাডিশনাল কমিশনার কাজী শফিউল আহমেদের বরাত দিয়ে শহিদুল আলমের পার্টনার অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শহিদুল আলমকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার (৬ আগস্ট) শহিদুল আলমকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিনই তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান। মামলার এজাহারে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ও উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

এই রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে শুনানি শেষে শহিদুল আলমকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করে চিকিৎসার নির্দেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া, আগামী বৃহস্পতিবারের (৯ জুলাই) মধ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন