বিজ্ঞাপন

দিয়া-করিমের মামলার বিচার ৩০২ ধারায় হতে পারে বিদ্যমান আইনেই

August 8, 2018 | 10:02 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীবের মামলার বিচার বিদ্যমান আইনেই ৩০২ ধারায় হতে পারে বলে মনে করছেন হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীরা।

‘ডেথ কজড বাই অ্যাক্ট ডান উইথ ইনটেনশান’ (উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যা) অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ থাকলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হওয়া অমূলক নয়- উচ্চ আদালতও সেই মত দিয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টেনম্যান্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীবের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার জন্য জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাস চালক প্রতিযোগিতা করছিলেন। এতে মৃত্যু হয় দুই শিক্ষার্থীর।

বিজ্ঞাপন

এরপর ৩০ জুলাই নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে সংহতি জানিয়ে সড়ক অবরোধ, ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ সড়ক

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে গত সোমবার (৬ আগস্ট) সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া অনুমোদন দেছে মন্ত্রিসভা। আইনটি পাসের জন্য আগামী সংসদ অধিবেশনে তোলা হবে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম  নতুন এ  আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন।

তবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যা মনে হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৩০২ ধারায় মামলা হবে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি কী ছিল। ৩০২ ধারায় মামলা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।

বিজ্ঞাপন

তদন্তে যদি মনে হয় উদ্দেশ্য হত্যা ছিল না, কিন্তু বেপরোয়া চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে- সে ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হতে পারে।

হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীরা বলছেন, খসড়া আইনটি পাস হওয়ার আগেই দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় নিহত দিয়া ও করিমের মামলা হতে পারে। একই মত দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো দুর্ঘটনা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না।’

সংবিধানের ৩৫(১) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, ‘অপরাধের দায়যুক্ত কার্যসংঘটনকালে বলবৎ ছিল, এইরূপ আইন ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে না এবং অপরাধ-সংঘটনকালে বলবৎ সেই আইনবলে যে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারিত, তাঁহাকে তাহার অধিক বা তাহা হইতে ভিন্ন দণ্ড দেওয়া যাইবে না।’

আনিসুল হক বলেন, নতুন আইনে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার করার সুযোগ নেই। তবে ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ধরে ৩০২ ধারায় বিচারের সুযোগ রয়েছে।

জাবালে নূরের মালিক

ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সড়কে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তিন রকমের বিধান রয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কিংবা চালকের অবহেলায় নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, মৃত্যুর উদ্দেশ্য হত্যা না হয়ে থাকলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

একই কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যদি ডেলিভারেট কিলিং (ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড) প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেই মামলা পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় চলে যাবে, যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।

এর আগে দুই বাস চালকের রেষারেষিতে হাত হারায় রাজীব হোসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। এরপর উচ্চ আদালতে রিট করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

রিটের শুনানিতে গত ৭ মে উচ্চ আদালত বলেন, দেখতে হবে, যদি কেউ ইনটেনশনালি মার্ডার করে, তখনতো ৩০২-তে মামলা আসা অমূলক নয়।

নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর মিয়া নিজেও একজন বাস চালক। গত ২৭ বছর ধরে তিনি ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে বাস চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি একজন বাস চালক। তাই জানি কোনটাকে দুর্ঘটনা বলতে হবে আর কোনটা হত্যাকাণ্ড হবে। সেদিন জাবালে নূরের বাসচালক ইচ্ছা করেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়।

২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

“শিক্ষার্থীরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিল। দুই বাস চালক প্রতিযোগিতা না করলে এই মৃত্যু হতো না। একজন হত্যাকারী আর সেই অ্যাক্সিডেন্ট করা ড্রাইভারের মধ্যেতো কোনো পার্থক্য নেই।” বলেন জাহাঙ্গীর মিয়া।

আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সারাবাংলাকে বলেন, চালক চাইলেই দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন, কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করায় কারো মৃত্যু হয়েছে। সেটা অবশ্যই পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় আসবে। তিনি আরো বলেন, রাজীব হোসেনের মামলা হয়েছিল ৩০৪ ধারায়, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। কিন্তু এখনো মামলাটি ৩০২ ধারায় আসতে পারে বলে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি অধিকতর তদন্ত করে, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ৩০২ ধারায় এর চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেন।

একই বিষয় হতে পারের দিয়া এবং করিমের বেলায়। তাহলে চালকরাও সংযত হবেন আর এটা খুবই জরুরি, বলেন রুহুল কুদ্দুস কাজল।

সারাবাংলা/এটি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন