বিজ্ঞাপন

মায়ের সময়োচিত সিদ্ধান্তই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল: শেখ হাসিনা

August 8, 2018 | 1:36 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মায়ের সময়োচিত সিদ্ধান্তই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। আমার বাবা যদি সেদিন সত্যি প্যারোলে মুক্তি নিতেন তাহলে বাংলাদেশ কোনোদিন স্বাধীন হতো না, বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ছয় দফা দেওয়ার পর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ক্যান্টনমেন্টে বন্দি থাকাকালীন সময়ে প্যারোলে মুক্তি না নিতে মায়ের দেওয়া সেই বার্তার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা তার মনটা কতটা শক্ত। আমাকে পিছনে বসাল। বলে তুই কাঁদিস কেন? তোর আব্বা ঠিকে ফিরে আসবে। জনগণ সঙ্গে আছে কেউ কিছু করতে পারবে না? আল্লার উপর ভরসা রাখ।

বিজ্ঞাপন

ওনি  (শেখ মুজিব) যদি সত্যি প্যারোলে যেতেন, বাংলাদেশ কোনোাদন স্বাধীন হতো না। কিন্তু আমার মায়ের ওই যে সময়োচিত সিদ্ধান্ত, এই সিদ্ধান্তই আমার দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলো।

এরপর সত্তরের নির্বাচনসহ ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণের পূর্বে পিতাকে দেওয়া মায়ের সেই নির্দেশনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মায়ের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতার গুণ অতুলনীয় ছিল। পাকিস্তানি হানাদার, পাকিস্তানি দোসর, যারা এদেশের মানুষকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আমার আব্বা সারাজীবন সংগ্রাম করে, দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন।

এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে তার অবদান রয়েছে। ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে। তিনি জীবনে কিছু চাননি। কোনো বিলাসিতা তার ছিল না। সাদাসিধা কাপড় পরতেন। এমনকি ওই ধানমন্ডির ৩২নম্বরের বাড়িতেই তিনি ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি কখনো সরকারি বাড়িতে ওঠেননি সেই দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কখনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আসেননি। খালি বলতেন, আমার ছেলেমেয়েদের নজর খারাপ হয়ে যাবে, অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে।

আমার আব্বা ও দাদা-দাদী যতদিন বেঁচে ছিলেন নিজের হাতে তাদের জন্য খাবার রান্না ও পরিবেশন করতেন সেই দিকটিও তুলে ধরে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনোদিন কোনো অহমিকা, কোনো কিছু ছিল না। দেশ স্বাধীন হয়েছে এই খুশিটাই সবথেকে বড় ছিল।’

পৃথিবীতে যা কিছুই অর্জন হোক, তার পেছনে প্রেরণা দেওয়ার কেউ না কেউ থাকে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তা না হলে কখনো কোনো নেতাই সফলকাম হন না। ঠিক, আমার বাবার যে রাজনীতি, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীনতা অর্জন করা, এর পেছেনে আমার মায়ের বিশাল অবদান রয়েছে। আমার বাবা সৌভাগ্য তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা পেয়েছেন। কোনোদিন আমার মায়ের মুখে কখনো কোনো অভাব অনটনের কথা শুনিনি। বরং আমার মা সবসময় এমনকি বাসায় যদি কোনো জিনিস না থাকত, মায়ের নির্দেশ ছিল ‘নাই’ বলবা না। বলবা, চাল বা চিনি’ আনতে হবে, ফুরিয়ে গেছে কিন্তু ‘নাই’ বলা যাবে না। আমার মনে হয়, আমার মা-বোনদের জন্য এটা একটা শিক্ষণীয়।

দেশ স্বাধীনের পর বহু নির্যাতিতা নারীদের পুনবার্সন বা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সেই দিকটিু তুলে ধরেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে আবেগজড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পরাজিত শক্তি এবং তাদের দোসর, যারা এই দেশের স্বাধীনতাই চায়নি। দেশে থেকেও যারা মুনাফেকি বেঈমানি করেছে, তারাই তো এই ১৫ আগস্ট ঘটালো। আর সেখানে আমার মাকেও তারা ছাড়ল না। পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করলো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫দিন আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ বিদেশে যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, তখন চিন্তাও করতে পারিনি আর কখনো মাকে মা বলে ডাকতে পারবো না, বাবা-ভাই কাউকে পাবো না। ছয়টা বছর রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর চেষ্টা করেছি, আমার আব্বার যে আকাঙ্খা ছিল, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। যে স্বাধীনতার জন্য আমার আব্বা-মা এতো ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা, মানুষের ভাগ্যটা গড়ে তোলা। বাংলার মানুষকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

যেহেতু আমার মায়ের কথা অনেকেই জানেন না। আমি যেইটুকু বলছি,সেইটুকুই হয়তো জানতে পারছেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, কখনো তিনি ক্ষমতাকে ভোগ করেন নাই। সারাজীবন একই রকম জীবন যাপন করে গেছেন। আব্বা প্রধানমন্ত্রীই থাক আর জেলেই থাক, সব সময় সাদাসিদা জীবন যাপন করে গেছেন। কারণ আমার আব্বার কথা ছিল, এই দেশের মানুষ দু বেলা খেতে পারে না, যাদের ছিন্ন বস্ত্র, তাদের সামনে বিলাসিতা কিসের। আমরা সেই শিক্ষাই পেয়েছি ছোটবেলা থেকে।

‘আজকে বাংলাদেশে অন্তত মানুষের খাদ্যের অভাবটা নাই। তারপরও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশকে আমাদের ক্ষুধামুক্ত,দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমার বাবা-মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন বক্তব্য দেন। এ ছাড়াও এতে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা; স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন