বিজ্ঞাপন

পর্ব-২৭ অগ্নি

August 17, 2018 | 12:56 pm

‘৭৫-এ আমাদের ছেড়ে চলে যাবার পর মাথার ওপর ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের সেই বটবৃক্ষ, সেই পিতা না থাকার কারণে একের পর এক ঝঞ্ঝা আর ঝড় এসে পড়েছিল আমার মতন শহীদ পরিবারগুলোর ওপরে। যে মানুষটির কথায় বাবার মতো লাখো বাঙালি যুদ্ধে গিয়েছিলো, নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছিলো, সেই মানুষটি এই অসহায় পরিবারগুলোকে কখনও ‘না’ বলেননি, খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি।

বিজ্ঞাপন

আমি সেই পিতার কথাই বলছি, যে পিতা শহীদদের জন্য, বীরাঙ্গনাদের জন্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া বাংলার গ্রামগঞ্জের জন্য অশ্রু বিসর্জন করতেন। তিনি জানতেন তাঁকে তাঁর দেশের মানুষ উপহার দিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম এক সোনার দেশ। ততোধিক ভালবাসার হাত তিনি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এদেশের মানুষের দিকে। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব ছিল না, হয়ওনি, তাই কাউকে জানানোও হয়নি আমাদের কষ্টের কথা। তাঁর চলে যাওয়ার কত বছরেও খুঁজে ফিরেছি আমার পিতামাতার ‘পিতা’ কে।

 

বিজ্ঞাপন

আমাকে ফেলে চলে যাওয়া ভালোবাসার মানুষের প্রিয় ফুল বা ফল অথবা বৃক্ষ ছাদবাগানে যুক্ত করতে ভালোবাসি। সেসব গাছেদের একেকটি পাতা আমাকে তাঁদের উপস্থিতি জানান দেয়, ছুঁয়ে দিলে স্পর্শ পাই ওঁনাদের। আমার পিতামাতার ‘পিতা’ কে স্মরণ করবার জন্য অনেক খুঁজেছি তেমন একটি গাছের। তবে এ পর্যন্ত অনেক খোঁজ করবার পরও কারো কাছ থেকে জানতে পারিনি আমাদের জাতির পিতা প্রিয় ভালোবাসার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুল কি ছিল? বা কোন ফল খেতে তিনি সবচেয়ে ভালোবাসতেন? অথবা কোন বৃক্ষের ছায়া তাঁর পছন্দের ছিল? কোন ফুলের ঘ্রাণে সে মুগ্ধ হতেন? কোন রঙে পাগল হতেন?

হরেক রকমের গাছের সমাহারে পূর্ণ আমার ছাদবাগানটি। ঘন সবুজ গাছেদের মাঝে রঙিন পাতাবাহারের প্রাধাণ্য একটু কম। আমার সবচেয়ে প্রিয় পাতাবাহারের নাম ‘অগ্নীশ্বর’। ছাদবাগানে রঙীন পাতাবাহার বলতে অগ্নীশ্বরের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশী। হঠাৎ করেই এক চৈত্রের রোদ ঝলমলে বিকেলে গাছে জল দেয়ার সময়, অগ্নীশ্বরের গনগনে পাতার লাল রঙের উজ্জ্বল বিস্ফোরণে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। এক অপার্থিব মায়াজালে চোখ আটকিয়ে যাচ্ছিল বারবার। অগ্নীশ্বরের পাতা বেয়ে জলের ধারায় ভেসে আসছিল রক্তস্নাত চোখের অশ্রুজল। ‘আমাদের কেউই দাবায় রাখতে পারবা না’ – কঠিন বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত সেই অবিনশ্বর মন্ত্রের জলধারা যেন।

বিজ্ঞাপন

আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার পিতামাতার ‘পিতা’ কে। অগ্নীশ্বরের তেজদীপ্ত লাল রঙা পাতার মাঝে। আমার অগ্নীশ্বরেরা ছাদবাগানে বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথা উঁচূ করা জাতির পিতাকে স্মরণ করে উৎসর্গীত। জাতীর পিতাকে শুধু একদিনের জন্য স্মরণ করবার জন্য নয়, প্রতিদিন তাঁকে ছুঁয়ে স্পর্শ করবার জন্য আমার এই প্রয়াশ। তাঁকে হারানোর শোকে কাবু হতে চাই না আর। অগ্নীশ্বরের মতন গনগনে আগুন রঙা লালে পিতাকে দেখতে চাই, একেবারে শেষ নিঃশ্বাসেও।

সারাবাংলা/আরএফ 

বিজ্ঞাপন

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন