বিজ্ঞাপন

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নেই আসবে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

September 4, 2018 | 11:28 am

পরিকল্পিত অর্থনীতির সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। বেড়েছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মাথাপিছু আয়। মূল্যস্ফীতি রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। সেইসঙ্গে সামাজিক খাতেও অগ্রগতি রয়েছে ব্যাপক। কিন্তু এত সব অর্জন টেকসই হবে কিনা— তা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। এর পেছনে অন্যতম মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের সেই প্রভাবকে মোকাবিলা করে দেশকে কিভাবে উন্নয়নের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পন ‘ বা ‘ডেল্টা প্ল্যান’।

বিজ্ঞাপন

আজ মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

একশ বছরের এই ঐতিহাসিক পরিকল্পনাটি যার হাত ধরে গত সাড়ে তিন বছরে তিলে তিলে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে, তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। ডেল্টা প্ল্যান অনুমোদনের প্রাক্কালে সারাবাংলার মুখোমুখি হন পরিকল্পিত অর্থনীতির এই রূপকার। তিনি তুলে ধরেন এই পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক। ড. শামসুল আলমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোসনা জামান

সারাবাংলা: ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান আসলে কী?

বিজ্ঞাপন

ড. শামসুল আলম: ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল এই পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ, ইচ্ছা ও নির্দেশে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এই পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাংলাদেশের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।

সারাবাংলা: এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কেন এত জরুরি?

ড. শামসুল আলম: উন্নত দেশের পথে হাঁটতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে এককথায় বলা যায়, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তাছাড়া প্রকল্পটির মূল প্রতিপাদ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। তাছাড়া এরই মধ্যে ভূমিতে ক্ষয় হচ্ছে ব্যাপক। নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। বন্যায় অনেক ফসলহানি হচ্ছে। এর বাইরেও বিশেষ করে শহর অঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, কঠিন বর্জ্য ও আবর্জনা ব্যবস্থপনা, কৃষি জমিতে ব্যাপক রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি উৎপাদক শক্তি না কমিয়ে কিভাবে এসব বিষয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যেতে পারে— বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় এসব বিষয়ের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ডেল্টা প্ল্যানে ছয়টি হটস্পটের কথা বলা হয়েছে। এই হটস্পট কী?

ড. শামসুল আলম: ঝুঁকি বিবেচনায় ছয়টি হটস্পট চিহ্নত করা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। সেই সঙ্গে এসব হটস্পটে ৩৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। হটস্পট গুলো হচ্ছে— উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগরাঞ্চল। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সে অঞ্চলের পানি বিজ্ঞান ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে দেশের আটটি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকি মাত্রার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে একই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন জেলাগুলোকে একেকটি গ্রুপের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। পানি ও জলবায়ুজনিত অভিন্ন সমস্যায় কবলিত এই অঞ্চলগুলোকেই হটস্পট হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

সারাবাংলা: হটস্পটগুলোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কী?

বিজ্ঞাপন

ড. শামসুল আলম: হটস্পটভিত্তিক ৩৩টি চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত চ্যালেঞ্জ আটটি— ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পরিবেশের অবনমন। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন।

হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, আকস্মিক বা মৌসুমি বন্যা, জলাবদ্ধতা ও অপর্যাপ্ত নিস্কাশন, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশের অবনমন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— স্বাদু পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, পরিবেশের অবনমন এবং ক্রমহ্রাসমান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। নদী ও মোহনা অঞ্চলের পাঁচটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— বন্যা, পানি দূষিত হওয়া, পরিবেশের অবনমন, পলি ব্যবস্থাপনা ও নৌপরিবহন এবং নদী গর্ভের পরিবর্তন-ভাঙন ও নতুন চর। এছাড়া নগরাঞ্চলের জন্যও পাঁচটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো— অপর্যাপ্ত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, ভূমি ক্ষয় ও বন্যা, স্বাদু পানির পর্যাপ্ততা,পরিবেশের অবনমন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

সারাবাংলা: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশলগুলো কী হবে?

ড. শামসুল আলম: ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় হটস্পটগুলোর এসব চালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে বেশকিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— বন্যার ঝুঁকি কমাতে নদী ও পানিপ্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা; পানিপ্রবাহের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখা; পর্যাপ্ত পরিমাণে ও মানসম্মত স্বাদু পানি সরবরাহ করা; নদীগুলোর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা; নদীগুলোতে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; যথাযথ পলি ব্যবস্থাপনা; টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষা; বন্যা ও জলাবদ্ধতাজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানো; পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন নিশ্চিত করা; হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় জলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে টেকসই জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা; বন্যা থেকে কৃষি ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা; সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সঠিক নদী ব্যবস্থাপনা; টেকসই হাওর প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা; সমন্বিত পানি ও ভূমিসম্পদ ব্যবস্থাপনা; বন্যা ও ঝড় বৃষ্টি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শহর রক্ষা; সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা; টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বহুমুখী সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বিকাশ; নগর অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা বাড়ানো ও নগর এলাকায় বন্যার ঝুঁকি কমানো; পানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানো; নগরে কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা; নতুনভাবে জেগে ওঠা চর এলাকায় নদী ও মোহনা ব্যবস্থাপনা জোরদার করা; জলাভূমি ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ, অক্ষুন্ন রাখা ও তাদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা; বিদ্যমান পোল্ডারের কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝড়বৃষ্টি, জলোচ্ছাস ও লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের মোকাবিলা করা; পানির জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা; উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন জমি উদ্ধার এবং সুন্দরবন সংরক্ষণ করা।

সারাবাংলা: ডেল্টা তহবিল সম্পর্কে কিছু যদি বলতেন।

ড. শামসুল আলম: ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ডেল্টা তহবিল। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল, বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) বিবেচনা করা হয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থায়ন সম্বলিত বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল হতে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। আরও বলা হয়েছে, অর্থায়নের ক্ষেত্রে কস্ট রিকভারির জন্য বেনিফিশিয়ারি পে প্রিন্সিপাল অনুসরণ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার চেষ্টা করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে সময়ের আবর্তনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে।

সারাবাংলা: পরিকল্পনায় সরকারি বিনিয়োগ কেমন প্রয়োজন হবে?

ড. শামসুল আলম: ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ এবং পানিসম্পদ স্থাপনা সংক্রান্ত পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ কর্মসূচি বা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি বিনিয়োগের খাতভিত্তিক বিভাজন দিয়ে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ ধরা হয়েছে (২০১৫-১৬ অর্থবছরের স্থিরমূল্যে) ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৩২ হাজার ২০০ কোটি টাকা; যা মোট বিনিয়োগের ৫ ভাগ। সহায়ক পরিবেশ খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকা ও ২০৩১ সাল পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ধরা হয়েছে, যা বিনিয়োগের দুই ভাগ। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনসহ প্রধান নদী ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ও ২০৩১ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ২৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা; যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ শতাংশ। শহর ও গ্রামাঞ্চলের সবুজায়ন, পানি সংরক্ষণ খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, ২০৩১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ ধরা হয়েছে, যা মোট বিনিয়োগের ২১ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রধান নগরগুলোতে (পানি সরবরাহ, পয়ঃনিস্কাশন, বন্যা নিযন্ত্রণ ও নিষ্কাশন) খাতে বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা, ২০৩১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা; যা মোট বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ও ২০৩১ সাল পর্যন্ত সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ধরা হয়েছে, যা মোট বিনিয়োগের তিন শতাংশ। কৃষিতে পানি ব্যবস্থাপনায় ২০২১ সাল পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকা, ২০৩১ সাল পর্যন্ত ২৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ ধরা হয়েছে; যা মোট বিনিয়োগের চার শতাংশ। আর পরিবেশ ও প্রতিবেশ খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ২০৩১ সাল পর্যন্ত ৩২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ ধরা হয়েছে, যা মোট বিনিয়োগের পাঁচ শতাংশ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাবাংলা:পরিকল্পনা তৈরির পেছনের গল্প বলুন।

ড. শামসুল আলম: এই পরিকল্পনা প্রণয়ণে বাংলাদেশের যত প্রযুক্তিবিদ, পানি, প্রকৌশলী সবাইকে কাজে লাগিয়েছি মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে। ৬০ বছরের পানি খাতে আমাদের যে অভিজ্ঞতা, পানি ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে সেচ ব্যবস্থা, বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তার সাফল্য-ব্যর্থতা পর্যালোচনা করেছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধান প্রধান নদীগুলোকে তার প্রবাহ ঠিক রেখে নদী ভাঙনের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন কারিগরি ব্যবস্থাপনা প্রস্তাবনা রেখেছি। শুষ্ক মৌসুমে যে পানির দুষ্প্রাপ্য দেখা দেয়, ক্রমান্বয়ে সেটি প্রকট হয়ে উঠছে। তা থেকে উত্তরণের উপায় ও খাল-বিল থেকে পানি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহারের কথা বলেছি। নদীগুলোকে ব্যাপক ড্রেজিংয়ের কথা বলা হয়েছে, যেন নদীগুলোর নাব্যতা থাকে। এই পরিকল্পনায় নৌপথকে আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। নৌপথে পরিবহন খরচ সবচেয়ে কম। সে কারণে নৌপরিবহনকে গুরুত্ব দিয়েছি। নদীগুলোকে ব্যাপকভাবে সংস্কার, ড্রেজিং এবং প্রবাহমান রাখার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শক রেখেছি। এখানে মানবসম্পদ তৈরির প্রযুক্তিগত গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছি। এই পরিকল্পনা প্রণয়নে আমরা ২৬টি কারিগরি গবেষণা প্রযুক্তি গবেষণা সম্পন্ন করেছি, যা থেকে আমরা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি হবে ঐতিহাসিক প্রকল্প। পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ড। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা। নেদারল্যান্ডের বাইরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/জেএএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন