বিজ্ঞাপন

নতুন নিয়ম ঢামেকে, স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও ময়নাতদন্ত

September 5, 2018 | 9:48 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: স্বাভাবিকভাবে কারও মৃত্যু হলেও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এতদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হতো না। কিন্তু হঠাৎ এই রীতি পাল্টে গেছে।

হাসপাতালের পরিচালক মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) থেকে নির্দেশ দিয়েছেন, সব মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে হবে।

হঠাৎ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে মর্গে জমছে মরদেহের সারি। পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্বজনদেরও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে বুধবার বেলা সোয়া ১১টা। লালবাগ শেখসাহেব বাজার এলাকা থেকে মোছলেম ব্যাপারী (৬৮) নামে এক ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা।

চিকিৎসক তাকে দেখে একটি ইসিজি করতে দিলেন। কিন্তু ইসিজি করার আগেই মারা যান মোছলেম ব্যাপারী।

বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচজন মারা যান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। কেউ মারা গেছেন হৃদরোগে আবার কেউ মারা গেছেন ব্রেইন স্ট্রোক করে।

বিজ্ঞাপন

লালবাগের মৃত মোছলেম পাটোয়ারীর ছেলে জিদনী পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আজকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বাবার মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক আমার বাবার ময়নাতদন্তের জন্য সুপারিশ করলেন। কিন্তু আমরা বুঝতে পারলাম না কেন তার ময়নাতদন্ত করতে হবে? সাধারণ মৃত্যুর জন্য তো ময়নাতদন্তের দরকার হয় না। জানতে পারলাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) থেকে এ নিয়ম শুরু করেছে।’

জিদনী বলেন, ‘তখনই আমরা একটি কাগজ নিয়ে ছুটে যাই লালাবাগ থানায়। ফোন দেওয়া হয় আমাদের এলাকার সাবেক এমপি বর্তমান বিএমএএর সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে। তিনি লালবাগ থানায় ফোন দিয়ে আমার বাবার লাশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু লাশ দাফন দিতে দিতে সারাদিন লেগে যায়।’

জিদনী অভিযোগ করে বলেন, ‘এর আগে এমন নিয়ম কখনও দেখিনি। কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হলে মরদেহ এমনিতেই দিয়ে দিত। এখন ময়নাতদন্তের এই ঝামেলার কারণে অনেকেরই কষ্ট বেড়ে গেল।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর বাউফল থেকে আসা (৭০) বছরের আ. খালেক। বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তার ছেলে মো. সেলিম জানান, বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী থেকে সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। মরদেহ ময়নাতদন্ত করার কথা বলেছেন চিকিৎসক।’

রাত ৯টায় তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও শাহবাগ থানায় আছি। রাত কয়টা বাজবে জানি না।’

মরদেহ ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্তের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আসা বিল্লাল হোসেন (৪৫), ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোরানের আ. কাদির (৫০), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ওবায়দুল হক। মরদেহ নিতে তাদের অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এখানে আছি। কিন্তু এমন আইন এই প্রথম দেখলাম। স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালের পরিচালক এ নিয়ম চালু করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বাড়তি ময়নাতদন্তের কারণে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। এটি বন্ধ করা উচিৎ। আর এতে লাভবান হচ্ছে হাসপাতালের কিছু লোক ও থানা পুলিশ। আশা করি এ আইন দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।’

জরুরি বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত মো. শহীদ নামে এক কর্মচারী জানান, ‘এ রকম নিয়ম তো আগে দেখি নাই। যে কেউ মরলেই ময়নাতদন্ত করতে হচ্ছে।’

জরুরি বিভাগের হারুন অর রশীদ নামে একজন স্টাফ ব্রাদার বলেন, ‘এমন নিয়ম করা ঠিক হয়নি। এতে মৃতদেহ নিয়ে স্বজনদের বহু বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

ময়নাতদন্তের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনাকে আমি চিনি। এর আগেও নিউজ নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা হয়েছিল। এবার নিউজের বিষয়ে কোনো কথা বলতে আমি রাজি নই।’

সারাবাংলা/এসএসআর/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন