বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

January 1, 2018 | 8:57 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : ‘আমারা চাই না স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এসে অন্য কোনো রাষ্ট্র বলুক, বাংলাদেশের কী করা প্রয়োজন। তবে বন্ধুবৎসল সম্পর্কের জায়গা থেকে ফ্রেন্ডলি পরামর্শ সব সময়েই ওয়েলকাম। বাট উই ডোন্ট লাইক এনি ওয়ান টেলিং আস এনি ওয়ান ইন পার্টিকুলার…। আমাদের সে বয়সটি এখন হয়েছে। বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নতুন বর্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা এবং গেল বছরের মূল্যায়ন নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপের সময় এমন মন্তব্য করেন।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য এবং অর্থনীতিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। মধ্যম আয়ের দেশ ছুঁয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তীর্ণ হতে ছক কেটে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিদেশিরা চাইলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগের মতো নাক গলাতে পারে না, বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন।

বিজ্ঞাপন

ছক অনুযায়ী নতুন বছরে (২০১৮ সাল) বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবার সক্ষমতা অর্জন করবে। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বৈশ্বিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। কিন্তু বৈশ্বিক টেবিলে কূটনীতির শক্ত চাল চালতে পারলে এবং পরিকল্পনা-মাফিক কাজ করতে পারলে জিএসপি প্লাসসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রতিমন্ত্রী জানালেন যে নতুন বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টিতেই বেশি জোড় দিয়ে কাজ করবে।

মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০১৮ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন কোন ইস্যুতে জোড় দিবে তা এরই মধ্যে ঠিক করা হয়েছে। আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। ইউরোপে পাওয়া জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই জিএসপি প্লাসের জন্য ব্রাসেলসে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। পূর্ব ইউরোপে আমাদের তৎপরতা আরো বেশি বাড়াতে হবে। লিবিয়াতে আবার নতুন করে মিশন চালু করব। এ ছাড়া বৈশ্বিক পর্যায়ে বাণিজ্য বাড়াতে জোড় দিব। ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুত রয়েছে।’

গেল বছরের (২০১৭ সাল) মূল্যায়ন করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কূটনীতিতে ২০১৭ ছিল আরেকটি সফলতার মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য শক্ত কিছু ভিত্তি রচনা হয়েছে। কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় বন্ধুত্ব, বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শকে সামনে রেখে কাজ করে, এই সময়ে আমরা অনেক কিছু ক্যাশ করেছি।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কালচারাল ডিপ্লোমেসিতে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পেরেছি। ইউনেস্কোতে যেমন পহেলা বৈশাখ কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেরও স্বীকৃতি পেয়েছি। আবার এর মাঝে জামদানি ও নকশি কাঁথার জিআই (জিও-গ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর) নিবন্ধণের জন্য জেনেভাতে কাজ চলছে। ডেল্টা হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপের আকার ও প্রকৃতি কী হবে সেটা এই সরকারের ৫ বছরের মেয়াদের জন্য না করে আমরা ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করছি। এজন্য নেদারল্যান্ড এর সঙ্গে চুক্তি করেছি। এরকম সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গেল বছর নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ যে কাজ করেছে তা আ লিক এবং বৈশ্বিক একাধিক ফোরামে সমাদৃত হয়েছে। খুব খারাপ একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমরা সেখানে পৌঁছতে পেরেছি। হলি আর্টিজানের ঘটনা খুব খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল। ওই সময়ে অনেক দেশই বাংলাদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা আমরা পরবর্তী সময়ে উতরাতে সক্ষম হই। শুধু তাই নয় আমরা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে  বৈশ্বিক আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’

বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতেও বাংলাদেশের শক্ত পদক্ষেপ ছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জেরুজালেম, আল আকসা মসজিদসহ একাধিক বৈশ্বিক ইস্যুতে বাংলাদেশ তড়িৎ গতিতে পদেক্ষপ নিয়েছে।’

কূটনীতিতে ২০১৭ সালের সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে উল্লেখ করে মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বৈশ্বিক নেতা হিসেবে ২০১৭ সালে যেভাবে সমাদৃত হয়েছেন তা অতীতের সকল কর্মকাণ্ডের রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। এই রেকর্ডগুলো কিন্তু নম্বর বা পয়েন্টস দিয়ে হয়না। জেন্ডার ইক্যুলিটি, শিশু মৃত্যুহার কমানো, নিরাপত্তা, নারী, শিক্ষা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রশংসিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দুজন নারী বৈমানিক পাঠানো হয়েছে। একজন নারী চিকিৎসক শান্তিরক্ষী মিশনের হয়ে বাংলাশে থেকে হাইতি গিয়েছেন। এই সাফল্যগুলো বাংলাদেশকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ ছাড়িয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে যেতে ২০১৭ সালে যে জায়গায় থাকা উচিত আমরা সে ভিত্তি গড়তে সক্ষম হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ইস্যুটি গেল বছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সহকারি সচিব থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত সকলেই বাড়তি শ্রম দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যেই আমরা অভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক কূটনীতির অন্য ক্ষেত্রগুলো সফলতার সঙ্গে সামলেছি। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে এই বৈঠকের প্রস্তুতি শতভাগ নেয়া হয়েছে।’

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কতোটুকু সফলতা আসবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ফেরতের ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা ভাল না। কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এই ইস্যুর সঙ্গে যেভাবে জড়িত করতে পেরেছি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ব যেভাবে বিষয়টার প্রতি চেপে ধরেছে তাতে এবার আমরা ভালো ফলাফল প্রত্যাশী। আমরা কনফিডেন্ট।’

অতীতের যে কোনো সময় থেকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এখন সু-সম্পর্ক বিরাজ করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের এই ৩ দেশের সরব উপস্থিতি এখনো বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি। এটা কী কূটনীতির ব্যর্থতা কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু একটি কথা আজ আবার বলতে চাই যা দুইমাস আগে গণমাধ্যমে বলেছিলাম, মিয়ানমারকে চাপ দিতে, এসব চুক্তিতে তাদেরকে রাজি করাতে যা যা করার প্রয়োজন ছিল তা কিন্তু এই তিনদেশের সমর্থন ছাড়াই আমরা করতে পেরেছি। সেই জায়গাতে তাদের অবস্থান কিন্তু আমাদের কাজে কোনো বাধা বা অসুবিধার সৃষ্টি করেনি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন ভেটো দেয় কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়াও আরো বৈশ্বিক ফোরাম আছে। ইউরোপিয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পক্ষে কথা বলেছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। ওই ৩ দেশ পক্ষে ভোট দিলে ভালো হতো কিন্তু ভেটো দেয়াতে কোনো ক্ষতিও হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা তাতে সকলেরই সমর্থন ছিল। বাংলাদেশেরও সমর্থন ছিল। কিন্তু যে দেশগুলো মিয়ানমারের সেনাশাসন বদলে গণতন্ত্রের পথে যেতে সহায়তা করেছিল, সেই জায়গার অগ্রভাবে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রশাসন। সেই জায়গাতে এই তিনদেশই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছে।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দেয়া প্রসঙ্গে মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এখনো কাঙি্ক্ষত সেবা শতভাগ পৌঁছে দিতে পারিনি। সেই জায়গাতে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কাজ চলছে। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এমআরপি পাসপোর্ট। সেটা সামাল দিতে পেরেছি।’

সারাবাংলা/জেআইএল

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন