বিজ্ঞাপন

‘অবৈধ’ বলে সেই আদালতেই জামিন বাড়ানোর আবেদন খালেদার

September 12, 2018 | 6:03 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘গত তারিখে যখন এখানে কোর্ট বসেছিল। ওই দিন তারা আসেন নাই। আজকে এসে একদিকে জামিন বৃদ্ধির আবেদন করলেন আবার অন্যদিকে আদালতকে বলছেন আপনি এখানে বসতে পারেন না। অবৈধ বলছেন। তাহলে তারা কি মাঝামাঝিতে আছেন। এখন এ মামলায় যদি যুক্তিতর্ক শুরু হয়, তাহলে তারা কি শুনানি করবেন নাকি বসে থাকবেন। একদিকে আপনি আদালতকে অবৈধ বলছেন আবার সেই অবৈধ আদালতে এসে জামিন বৃদ্ধির আবেদন করছেন, এটা আষাঢ়ের গল্প ছাড়া আর কিছুই না।’

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালতে  এসব  বলেন  রাষ্ট্রেপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের এই আইনজীবী বলেন, তারা গেজেটে প্রকাশিত ‘কারাগার’ শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু সেখানে ওই শব্দের আগে ‘সাবেক’ শব্দটি লেখা আছে সেটি তারা দেখেন না। সেটি তারা বলবেনও না।

বিজ্ঞাপন

আর বিশেষ জজ আদালত-৫ বললে কি বিচারকের নাম উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ জজ আদালত-৫ মানেই আপনার আদালতকে বুঝানো হয়েছে। এখানে আবার নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে কি এমন প্রশ্ন তোলেন রাষ্ট্রেপক্ষের এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, ওনারা (আসামিপক্ষের আইনজীবীরা) এই রুমটিকে স্যাঁতস্যাঁতে দেখছেন, এখানে তারা পানির বহর দেখছেন। কার্পেট বিছানো একটি রুমকে তারা কিভাবে  স্যাঁতস্যাঁতে বলছেন?

বরং এটা না বলে আপনারা বলতে পারতেন, এখানে আপনাদের এসি দরকার, চেয়ার দরকার, খাবার পানির ব্যবস্থা করা দরকার। এসব দাবি করতেই পারতেন। এগুলো না বলে আপনারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে আদালত হবে এমন দাবি করছেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতের কাছে আমার প্রার্থনা একজন আসামি অসুস্থের দোহাই দিয়ে আদালতে আসবে না তার জন্য বিচার কার্যক্রম বসে  থাকবে না। আইন তো বসে থাকবে না। প্রয়োজনে তাকে বাদ দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন এই আইনজীবী।

উভয়ক্ষের দীর্ঘ শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, উনি (বেগম খালেদা জিয়া) আদালতে আসতে যদি অনিচ্ছুক হন তাহলে আমরা মামলা চালাতে পারবো কিনা বা তাকে বাদ দিয়ে মামলা চালাবো কিনা এ পয়েন্টে আপানারা বক্তব্য দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার বিচার চলবে কিনা এবং তার জামিনের মেয়াদ বাড়ার বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যাও চান আদালত।

বুধবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন।আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

আদালতে কার্যক্রমের শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনাজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত আজকে এখানে আদালত বসেছে। আদালতে বসার জায়গা নেই। ডিফেন্স পক্ষের জন্য মাত্র চারটি চেয়ার রাখা হয়েছে। আজকে আমরা চারজন এসেছি। এই চারজনই বসতে পারছি না। তিনি বলেন, আমার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে এত ছোট পরিসরে এমন আদালত দেখেনি। যেখানে আইনজীবীতো দুরে থাক পুলিশ, সাংবাদিকদেরও বসার জায়গা নেই। মাত্র ২০ ফিট বাই ১৫ ফিট জায়গায় আদালতটি স্থাপন করা হয়েছে।

কারাগারের ভিতরে আদালত স্থাপন করা হয়েছে এমনটি গেজেটেও লেখা আছে বলেও উল্লেখ করে তিনি।

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, গত তারিখে আমরা বকশিবাজারের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম আপনি সেখানে যাবেন। আপনি আমাদেরকে জুডিশিয়াল নোটিশের মাধ্যমে জানাবেন। কিন্তু আপনি যাননি।

এ সময় তিনি বলেন, আজকে আমরা আদালতে একটি আবেদন দিয়েছি। তাতে বলা আছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। ওই দিন তিনি আদালতে তার অসুস্থের কথা বলেছেন। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। তিনি তার বাম পা এবং হাত তেমনটা নড়াতে পারেন না। অবশ প্রায়। বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার অসুস্থতা নিয়ে দেখা করেছেন। বোর্ড গঠনের আবেদন করেছেন। এ অবস্থায় তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছি।

একই সঙ্গে আরেকটি আবেদন দিয়েছি। তাতে আমরা ঢাকা মহানগর ১২৫ নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত’ পুরানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং ৭ কে অস্থায়ী আদালত হিসাবে ঘোষণা করে সরকারের গেজেট করায় এবং উক্ত আদালতে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অনুমতি ছাড়া, সংবিধানের পরিপন্থী এবং আইন বিরোধী হওয়ায় তাহা বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করলাম।

প্রথমেই আমি বলব, এ আদালত স্থাপনে যে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। সেই গেজেটে আপনার (বিচারকের) নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ইতিপূর্বে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত গেজেটে আপনার নাম উল্লেখ করা ছিল। যা এখানে করা হয়নি।

এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মামলার কার্যক্রম যতবারই স্থগিত করা হয়েছে তাতে প্রত্যেকবারই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে স্থগিত করা হয়। সেখানে একবারও তার নিরাপত্তার কারণ উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু গেজেটে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া এই আদালতের প্রবেশ গেটে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, কারারক্ষী দায়িত্ব পালন করছে। তাদের অনুমতি ছাড়া কেউ গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। এখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি আমাদের গাড়ীও আধা মাইল দুরে রেখে আসতে হয়।

আদালতে আসতে বই, খাতা-পত্র, ফাইল আধা কিলোমিটার বহন করে নিয়ে আসতে হয়। এছাড়া আদালত কক্ষের যে অবস্থা তাতো বর্ণনা অপেক্ষা রাখে না।

তিনি বলেন, ২৪ বাই ১২ ফিটের একটি কক্ষ। যেখানে সকলের উপস্থিতিতে আদালত চালানো সম্ভব নয়। আদালত কক্ষটি একটি গুহার মত, স্যাঁতস্যাঁতে। এভাবে আদালত চালালে সাফোকেশন ভোগাতে হবে সবাইকে। এখন থেকে আমরা আইনজীবীরাও জীবিত ফিরতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ।এ অবস্থায় বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত আদালত আইন সম্মত আদালত না হওয়ায় অত্র আদালত মামলার বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনা না করার জন্য আবেদন করছি।

পরে আদালত পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী  বৃহস্পতিবার পর্যন্ত  আদালত  মুলতবি করেন। বুধবার মামলাটির শুনানিতে   খালেদা জিয়া আদালতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ কারণে তাকে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির করতে পারেননি। ফলে তার অনুপস্থিতে বিচার কাজ চলবে কিনা সে বিষয়ে শুনানি হবে বৃহস্পতিবার।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন