বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনা রোধ করতে ‘স্পিড গভর্নর’ সিল ছাড়া ফিটনেস সার্টিফিকেট না

September 12, 2018 | 7:45 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সংসদ থেকে: মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধ করতে সরকারের উদ্যোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে ইতোমধ্যে সরকার নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘স্পিড গভর্নর’ সিল ছাড়া কোনো অব্স্থাতেই যেন ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া না হয়। মহাসড়কে আমরা যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাস ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং ট্রাক ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলবে।

বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৪ এর সংসদ সদস্য বেগম নূরে হাসনা লিলি চৌধুরীর তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন-২ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিন বিকেল ৫টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় মহাসড়কে ১২১টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়ে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যানবাহন যেন চলতে না পারে- সে জন্য আরও ওজন স্টেশন স্থাপনের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোবাইল ওয়েট মেশিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন মতো যেন ওজন স্টেশন স্থানান্তর করা যায়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের মেধাবী দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, ১২ জন আহত হয়েছে। এতে আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। নিহতদের পরিবারের মতো আমিও কষ্ট পেয়েছি। তাদের সমবেদনা জানিয়েছি। রাজীব এবং দিয়ার পরিবারকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। বাস মালিক এবং চালককে আটক করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে নয় দফার প্রায় সবগুলো বাস্তায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই কলেজের অধ্যক্ষর সঙ্গে আমি দেখা করেছি, শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি বাস দেওয়া হয়েছে। জেব্রা ক্রসিং করে দেওয়া হয়েছে। আন্ডার পাসের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছি। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মানিক মিয়া এভিনিউতে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দুইটি আন্ডার পাস নির্মাণ করা হবে। পথচারীদের সুবিধার জন্য কারওয়ান বাজার এবং গুলিস্তান আন্ডার পাস সংস্কার করা হচ্ছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করতে বলা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১৫০টি জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা করেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হয়েছে। চলতি সংসদে আইনের খসড়া উত্থাপন করা হবে। ঢাকার ইন্টার-সেকশানে রোভার, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পরামর্শ অনুযায়ী, ১২১টি বাস স্টপেজ আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে নির্ধারিত বাসস্টপেজ ছাড়া বাস দাঁড়াবে না। এতে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। বিআরটিএ জনসচেতনা তৈরি করতে লিফলেট বিতরণ করছে- জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, আমরা ১২৩টি ড্রাইভিং স্কুল অনুমোদন দিয়েছি। দুরপাল্লার চালকরা টানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে পারবে না। আমরা মহাসড়কের পাশে আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ করছি। সেখানে চালকরা বিশ্রাম নিতে পারবেন, খাদ্যের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হবে সার্ভিস সেন্টারের মতো করা হবে।

শুধু আমরা ব্যবস্থা নিলেই তো হবে না। জনগণকে সচেতন হতে হবে। এ দেশের মানুষের অদ্ভুত মানসিকতা আছে। আমাদের বুঝতে হবে হাত দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগামী গাড়ি থেমে যেতে পারে না। আমরা দেখি ছোট্ট শিশুর হাত ধরে মা রাস্তার মাঝখানে চলে যাচ্ছে। খুব কাছে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডার পাস। অথচ সেখানে না গিয়ে দৌড়ে পার হতে চায়। এটাও বিবেচ্য বিষয় চালকদের দোষ কতটুকু, ড্রাইভারের দোষ কতটুকু। এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো, এত বড় আন্দোলন হলো, তারপরও আমরা দেখছি মানুষের ভেতরে সেই সচেতনতা নাই। দুর্ঘটনার পর ড্রাইভার দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে যে মানুষটা সামন্য আহত হতো- সে হয়তো মারা যাচ্ছে। এর কারণ, যে মানুষটা গাড়ির ধাক্কায় পড়ে গেল তাকে সাহায্য করার চেয়ে জনগণের আগ্রহ থাকে ড্রাইভারকে টেনে নামিয়ে কিভাবে মারধর করা যায়। এমন ঘটনাও ঘটে, পিটিয়ে চালককে মেরে ফেলেছে। আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। চালককে ধরে পুলিশে দিতে হবে। যদি মারধর বন্ধ হয়, দুর্ঘটনাও কমে যাবে। অনেকে বাসের জানালা দিয়ে হাত ঝুলিয়ে রাখে, মাথা বের করে রাখে। ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি, সড়কে কিভাবে চলতে হবে সেটা যেন স্কুলে সেখানো হয়, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইওয়েতে দুর্ঘটনা রোধ করতে আমরা আলাদা লেন করছি। এর আগে আমি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক নির্মাণ করার সময় সিরাজগঞ্জের সড়কে আলাদা লেন করেছিলাম। দ্রুতগামী যান চলবে এক অংশে, একটু নিচু করে আরেকটা লেন- যেদিক দিয়ে স্থানীয়রা ছোট যান নিয়ে চলবে।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন