বিজ্ঞাপন

দূরত্ব ঘুচিয়ে একসঙ্গে চলার বার্তা নাছির-ছালামের

September 17, 2018 | 3:55 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দূরত্ব ঘুচিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে একসঙ্গে পথচলার বার্তা দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো.আবদুচ ছালাম। মেয়র নাসির নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছালাম একই কমিটির কোষাধ্যক্ষ।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের মধ্যস্থতায় দুই নেতা বসেছিলেন এক টেবিলে। সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ্য নেতারাও।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভা শেষে মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান হাত ধরাধরি করে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলে আসছিলেন, সিডিএ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। এতে নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলেও মত ছিল মেয়রের।

সমন্বয়হীনতা নিয়ে গত ২১ জুন দলীয় সভায় নাছির ও ছালামের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান ২৪ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। পরে আর কোন সমন্বয় সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ছালাম।

তবে সোমবারের সভায় মেয়র দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা ছিল না। আর ছালামের দাবি, মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন দূরত্বে নেই।

বিজ্ঞাপন

সভায় নাছির বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এই বক্তব্য সঠিক নয়। তবে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। আবার আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সিডিএ চেয়ারম্যান ছালাম সাহেব মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সিডিএ এই শহরে অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরাও সিটি করপোরেশনের যতটুকু দায়িত্ব আছে তার আলোকে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

‘কেউ কেউ ধারণা করতে পারেন, মেয়র এবং সিডিএ চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড যদি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, কান টানলে মাথা আসে, তাহলে সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। সামনে নির্বাচন। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা কোন কোন মহলের থাকতে পারে,’ যোগ মেয়র।

আ জ ম নাছির আরও বলেন, নির্বাচন সন্নিকটে। আমরা (মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান) সরকারেও আছি। সুতরাং সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে, সেই লক্ষে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রত্যেকটা আসন যাতে আমরা আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সুতরাং এখানে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

সভায় নিজেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী উল্লেখ করে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমি পরীক্ষায় পাশ করে কিংবা বিসিএস পাশ করে সিডিএ চেয়ারম্যান হইনি। আমার একমাত্র যোগ্যতা আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের আমি একজন ছোট্ট কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের কোন সুযোগ নেই। এটা যদি আমি করি তাহলে তো বিশ্বাসঘাতকের তালিকায় আমার নাম উঠবে। মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই আমি সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছি।’

ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ দেবেন না উল্লেখ করে ছালাম বলেন, ‘যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের মেসেজ দেওয়ার জন্য আজ আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বসেছি। আমরা এই সভা থেকে ম্যাসেজ দিতে চাই, উই আর ইউনাইটেড।’

‘সিডিএ, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসাসহ সব সরকারি সংস্থা নগরীতে যত উন্নয়ন কাজ করছে সবই মহানগর আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে যেতে হবে। আমি শুরু থেকেই দলকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। এখনও প্রাধান্য দিচ্ছি,’ বলেন সিডিএ চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে গিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করে দলের ভেতরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ছালাম। সভায় এরও জবাব দেন তিনি।

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিডিএ’র মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। টানেলসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, অস্বীকার করা যাবে না। কারণ আমরা বিকল্প কোন শহর তৈরি করতে পারিনি যে, উন্নয়ন করলে বিদ্যমান শহরের মানুষের দুর্ভোগ হবে না। কি কি কাজ করলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে, সেটা শোনার জন্যই আমি উঠান বৈঠক করি। জনগণের কথা শুনতে যাই।’

মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা শুনতে হলে আমার সঙ্গে উঠান বৈঠকে চলেন। দেখবেন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তারা কত আনন্দিত। আমার সঙ্গে গেলে তাদের কথা শুনতে পাবেন।’

গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় খোরশেদ আলম সুজন মেয়রের সঙ্গে টেলিফোনে সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন। এরপর সমন্বিত সভার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সিএমপি কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান ও ওয়াসা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ’র সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠকে বসবেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন সুজন।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, ও সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। এসময় নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিক আদনান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চন্দন ধর ও মশিউর রহমান, দিদারুল আলমও ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন