বিজ্ঞাপন

ছাত্রকে পিটিয়ে থানায় গিয়ে ক্ষমা চাইলেন অধ্যক্ষ

September 17, 2018 | 10:20 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের আলোচিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খান ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এক ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষ এই অভিযোগ গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করলেও থানায় গিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। অবশ্য এসময় ওই ছাত্রের কাছ থেকে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনার একটি আপোষনামায়ও স্বাক্ষর নেয় পুলিশ।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর চকবাজার থানায় বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এই ঘটনা ঘটেছে।

লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করা ছাত্র জাকারিয়া হোসেন নাহিদ (১৯) বিজ্ঞান কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

নাহিদ সারাবাংলাকে জানান, তিনি পরীক্ষার নম্বরপত্রের জন্য কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। তাকে দেখেই রেগে যান জাহেদ খান। তিনি নিজের চেয়ার ছেড়ে গিয়ে নাহিদকে কিল-ঘুষি মারেন। এসময় কয়েকজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখলেও অধ্যক্ষকে বাধা দেননি বলে অভিযোগ নাহিদের।

‘প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে পেটাচ্ছিলেন আর বলছিলেন- তোকে মেরে ফেলব। তোকে জেলে ঢুকিয়ে দেব। তুই রইন্যার (নুরুল আজিম রনি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) সঙ্গে আন্দোলন করেছিলি। তুই মামলার আসামি’, যোগ করেন নাহিদ।

বিজ্ঞাপন

পাঁচ হাজার টাকা করে উন্নয়ন ফি আদায়ের জন্য গত মার্চে তিন শতাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সেই প্রবেশপত্র আদায়ের জন্য নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলনের মুখে প্রবেশপত্র ফেরত দিতে বাধ্য হন জাহেদ খান।

তবে ২৯ মার্চ সেই আন্দোলনের সময় জাহেদ খানকে ঘুষি দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিতর্কের মুখে পড়েন রনি। রনিসহ তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়।

নাহিদের দাবি, অধ্যক্ষ জাহেদ খান তাকে নুরুল আজিম রনির অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী বলে সন্দেহ করে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন।

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেটার সমস্যা আছে। সে আগেও কলেজে আন্দোলন করেছিল। সে সানগ্লাস দিয়ে আমার রুমে ঢুকেছিল। সেজন্য আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম। তবে মারধর করিনি।’

বিজ্ঞাপন

মারধর না করলে থানায় গিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহেদ খান বলেন, ‘ওসি সাহেব বলেছেন, সেজন্য আমি লিখিত একটা বক্তব্য দিয়েছি। আমার কলেজের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। আপনি রিপোর্ট করলে আরও বড় বিপদে পড়ে যাব।’

নাহিদ সারাবাংলাকে জানান, মারধরের পর অধ্যক্ষ নিজেই পুলিশ ডেকে তাকে চকবাজার থানায় সোপর্দ্দ করেন। এসময় জাহেদ খান থানায় গিয়ে নাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলে ওসি রেগে যান। ওসি এসময় বলেন- ‘মামলা আপনার বিরুদ্ধে হবে। আপনি তার গায়ে হাত তুললেন কেন? আইন নিজের হাতে নিলেন কেন?’

নাহিদ বলেন- ‘কিছুক্ষণ পর চকবাজার থানা যুবলীগ নেতা টিনুর অনুসারী কয়েকজন নেতাকর্মী থানায় যান। তারা অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে পুলিশকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেন। এসময় পুলিশ কারও মামলা নেওয়া হবে না জানিয়ে উভয়পক্ষকে সমঝোতার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। তখন প্রিন্সিপ্যাল স্যার লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আমারে বাবাকে রাজি করিয়ে আমার কাছ থেকেও ক্ষমা প্রার্থনার বক্তব্যে স্বাক্ষর নেন ওসি।’

মারধরে আঘাত পাওয়া নাহিদ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন।

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম সারাবাংলাকে বলেন, ছাত্রের বক্তব্য হচ্ছে- বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের কাছে বিনয়ের সঙ্গে মার্কশিট চাওয়ার পরও তিনি রেগে গিয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দেন। আর অধ্যক্ষের বক্তব্য হচ্ছে- ছাত্র ঔদ্ধর্ত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাকে বকাঝকা করেছেন তিনি। তবে পরে উভয়পক্ষ নিজেরাই আপোষ করেন। লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে অধ্যক্ষ ও ছাত্র উভয়ে স্বাক্ষর করেছেন। মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের মার্কশিট দিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন