বিজ্ঞাপন

৩৪ বছর পর ছাত্রলীগের কমিটি, বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম কলেজ

September 18, 2018 | 2:51 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : তিন দশক পর ছাত্রশিবিরের দখল থেকে মুক্ত করা ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের মধ্যে।

ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখান করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভের সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের পদ দেওয়া হয়েছে।

১৯৮৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। ছাত্রশিবিরের সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হওয়া ছাত্রলীগের প্রায় তিন দশক ধরে ওই কলেজে কোন কর্মকাণ্ডই ছিল না। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস দখলে নেয়। এরপর থেকে কলেজদুটিতে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে।

বিজ্ঞাপন

ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছর পর সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

কমিটিতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মাহমুদুল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এই কমিটি প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন মেয়রের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে কমিটিতে পদ পাওয়া মেয়রের অনুসারী ছয়জন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘পদত্যাগী’ নেতা ও তাদের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। তারা সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এসময় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ কয়েকজন নেতাকর্মী গাড়ি ভাংচুরেরও চেষ্টা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

প্রায় দুইঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখায় আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরীর জামালখান এলাকায় ডা.খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট মেরিস স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে সড়কে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তীব্র রোদ ও গরমের মধ্যে যানজটে আটকা পড়া স্কুলশিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাধারণ মানুষকেও পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

নগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিক্ষোভের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে আমরা গিয়ে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছি। এখন পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক।’

বিজ্ঞাপন

কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সহ-সভাপতি ওবায়েদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাউকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কমিটি করেছেন। প্রকৃত সহযোদ্ধাদের মূল্যায়ন না করে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদের পদ দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে আমরা ৬ জন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি।’

সড়ক অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছি। এজন্য জনসাধারণের দুর্ভোগ হয়েছে। এর দায়ভার নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবশ্যই নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘৩৪ বছর পর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের একটি আংশিক কমিটি আমরা দিতে পেরেছি। আমাদের ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আমাদের মুরব্বী সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কমিটি দিয়েছি। একটি কমিটিতে তো দুজন সভাপতি দেওয়া যায় না কিংবা দুজন সাধারণ সম্পাদক দেওয়া যায় না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সময় কমিটি নিয়ে অভিযোগ থাকলে সেটার সুরাহা হবে। এতবছর পর শিবিরের দখল থেকে আমরা কলেজটাকে মুক্ত করেছি। আমরা চাই, ছাত্রলীগ সেখানে মিলেমিশে রাজনীতি করুক। গ্রুপিং আমাদের সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

১৯৮১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ গেইটে সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ২৮ মে ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলা নেতা শাহাদাত হোসেনকে কলেজ ছাত্রাবাসে গলা কেটে হত্যার মধ্য দিয়ে আধিপত্য শুরু শিবিরের। ১৯৮৬ সালে শিবির পুরোপুরি দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের তৎকালীন সদস্য (পরবর্তীতে সভাপতি) মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ চক্রবর্তী সুজনকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। এরপর আমরা শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আর কলেজে ঢুকতে পারিনি। তখন আমরা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ব্যানারে মুসলিম হলে অনুষ্ঠান করতাম। যেহেতু কলেজ ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব ছিল না, ১৯৮৪ সালের পর ছাত্রলীগের আর কোন কমিটি হয়নি।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন