বিজ্ঞাপন

‘গায়েবি মামলায় নির্বাচন অনিশ্চিত করছে সরকার’

September 21, 2018 | 11:38 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কারা অভ্যন্তরে স্থাপিত আদালতে খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি বন্ধ করে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি দলটির অভিযোগ, দেশব্যাপী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনিশ্চিত করছে সরকার।

শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একজন বন্দি— যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার উপস্থিতিতেই মামলার শুনানি হওয়াটা বিধি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অসুস্থ। তিনি হাঁটার জন্য উপযুক্ত নন। অবিলম্বে তাকে হসপিটালাইজড্ করা দরকার — এ কথা কারাকর্তৃপক্ষ বার বার স্বীকার করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘এখন কারাগারের মধ্যে আদালত কক্ষ নিয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার কথা বলছে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছি না এবং জনগণ তা গ্রহণ করছে না। আমরা মনে করি এ আদেশ পরিবর্তন হওয়া উচিত। একজন নাগরিক হিসেবে খালেদা জিয়ার যা প্রাপ্য সেগুলো তাকে দেওয়া উচিত। আমরা আশা করব তার প্রতি অমানবিক আচরণ থেকে সরকার বিরত থাকবে এবং অবিলম্বে তার চিকিৎসার জন্য তাকে একটা বিশেষায়িত হাসপাতালে নেবে’— বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এক সপ্তায় পর পর তিন দিন তারিখ দিয়েছে। এত তাড়া কেন? সরকারের তাড়া আমরা বুঝতে পারি। তারা চায় যত দ্রুত সম্ভব বেগম জিয়াকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু আদালতের কাছ থেকে এটা আমরাা প্রত্যাশা করি না, জনগণও প্রত্যাশা করে না।’

‘আদালতের কাছে জনগণের প্রত্যাশা— তারা ন্যায় বিচার করবেন এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে আদালত চলা উচিত, সেভাবে চালাবেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে বিচার ব্যবস্থা বিশেষ করে নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের করায়ত্ব হয়ে পড়েছে’—অভিযোগ বিএনপির মহাসচিবের।

বিজ্ঞাপন

ফখরুল বলেন, ‘গতকালও খালেদা জিয়া আইনজীবীদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘‘আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না কেন? একজন মানুষ কতটা অসুস্থ হলে এরকম বলতে পারেন। আগে তিনি কখনো এ কথা বলেননি। তাই বিচার বিভাগের কাছে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে অবিলম্বে শুনানি বন্ধ করে দেশনেত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’

গায়েবি মামলা জাতির কাছে সব চেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখন আমরা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছি; আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি যে, নির্বাচন সামনে রেখে এই ‘অবৈধ’ সরকার যখন ড্রাম বাজাচ্ছে, ঢোল বাজাচ্ছে, তাদের মতো করে নির্বাচন সাজিয়ে নেওয়ার কাজ করছে ঠিক সেই সময় জনগণের সমস্ত অধিকার ক্ষুন্ন করে  হাজার হাজার ভৌতিক মামলা দিয়ে বিরোধী মতের লোকদের হয়রানি করছে।’

‘বিরোধী মত বা ভিন্ন মত যারা ধারণ করে— শুধু বিরোধী দলের লোক নয়, নেতা নয়, যারা ভিন্ন মত ধারণ করে, তাদের বিরুদ্ধে আজকে ভৈৗতিক মামলা দিচ্ছে এবং প্রতিদিন এই সমস্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পুলিশ রেড করছে’— বলেন ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, ১ সেপ্টম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা বিরোধীদল ও মতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৬ টি। আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৩০  জনকে। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩০ জন। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৩ হাজার ৬৯০ জন।

‘এটা একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে  অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে। যে দলটি সব চেয়ে বড় বিরোধী দল, যে দলটির প্রতিটি এলাকায় শাখা-প্রশাখা রয়েছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস যে দলটির রয়েছে, যে দলটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তিন বার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, দুই বার বিরোধী দলে গেছে, সেই দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এইভাবে মামলা দিয়ে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনিচ্ছিত করে ফেলছে সরকার’— মন্তব্য ফখরুলের।

তিনি বলেন, ‘কত বড় সুদূর প্রসারি চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র— যাতে এই নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ গ্রহণ করতে না পারে, জনগণ অংশ গ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য এই ব্যবস্থা করছে। এ প্রক্রিয়া তারা অনেক আগে থেকে শুরু করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।

সারাবাংলা/এজেড/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন