বিজ্ঞাপন

কী বার্তা দিচ্ছেন ভারতের অমিত শাহ

September 24, 2018 | 7:25 pm

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে দেশটির অন্যতম রাজনৈতিক দল বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) সভাপতি অমিত শাহ বাংলাদেশকে জড়িয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন। এর আগে দেশটির সেনা প্রধানও একই বক্তব্য দিয়েছেন।

ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর জেলার গঙ্গাপুরের এক জনসভায় গত শনিবার অমিত শাহ বলেন, ভারতে অবস্থানরত কথিত বাংলাদেশিরা ‘ঘুণপোকা’, তাদেরকে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। বিজেপি সরকার এনআরসি (জাতীয় নাগরিক তালিকা) তৈরি করছে, যেখানে ৪০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত দুই সরকারের মধ্যে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে, এমন সময়ে ভারতের প্রধান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের এমন মন্তব্যকে অনভিপ্রেত, সাম্প্রদায়িক বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিজেপির অমিত শাহ-এর মন্তব্য ব্যক্তিগত এবং এটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। কেন না বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতের বসবাস করে না। আসামসহ ভারতের অনেক রাজ্যেই বাংলা ভাষাভাষী বসবাস করেন। বাংলা ভাষাভাষী বসবাস করা মানেই বাংলাদেশি নয়। আর গত ৪৭ বছরে দুই দেশের মধ্যে এমন কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়নি।’

অমিত শাহের মন্তব্যে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এমন বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্খিত। অমিত শাহের সঠিক তথ্যেও ঘাটতি রয়েছে।’

রাজনীতি বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান শেলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই দেশের সরকারের মধ্যে বর্তমান সময়ে চমৎকার ভাব বিরাজ করছে। কিন্তু দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেই ভাব চলমান কি না সেটা দেখার বিষয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিরাট তফাৎ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্র নিজেদেরকে সব সময়েই অসাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু ভারতের শাসকদল নিজেদেরকে কখনো অসাম্প্রদায়িক বলে না। মূলত ভারতের শাসক দলের মূল দর্শন হচ্ছে, ধর্মীয় উগ্রবাদিতা। যা বিজেপি সরকারের অমিত শাহের মন্তব্যে অসাম্প্রদায়িক দর্শনের প্রতিফলন উঠে এসেছে।’

মিজানুর রহমান শেলী সারাবাংলাকে আরও বলেন, ‘দুই দেশের চিন্তা-ভাবনাতে বিস্তর ফারাক থাকাতেই অমিত শাহ বাংলাদেশ নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পেরেছেন।’

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অমিত শাহের এমন মন্তব্যের মূল কারণ হচ্ছে পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জীকে হটিয়ে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতায় বসানো। মূলত মমতা ব্যাণার্জীকে টার্গেট করে এমন কথা বলছেন অমিত শাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে জয়লাভ করতে বিজেপি আদাজল খেয়ে নেমেছে, তাই এভাবে মন্তব্য করে এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করছে। যা তাদের রাজনৈতিক দর্শন। তবে আসাম বা অন্য অঞ্চল থেকে বাংলা ভাষাভাষীদের বের করে দেওয়ার সম্ভবনা কম, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হুমকি দেওয়া।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অমিত শাহের এমন মন্তব্য শোভনীয় নয় এবং অযৌক্তিক। তিনি ভুল ধারণা থেকেই এমন মন্তব্য করছেন।’

এর আগে কলকাতার ধর্মতলার পাশে বিজেপির যুব মোর্চার এক সমাবেশে দলটির সভাপতি অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ রুখতে আসামে এনআরসি তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় সেনাপ্রধান দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সীমান্ত সংক্রান্ত এক কনফারেন্সে বলেন, ‘ভারতকে অস্থিতিশীল করতে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবেই পাকিস্তান বাংলাদেশের মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর এই কাজে পাকিস্তানকে সমর্থন জানাচ্ছে চীন।’

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন