বিজ্ঞাপন

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি: চার্চে মিললো ৩৪ শিক্ষার্থীর মরদেহ

October 2, 2018 | 1:07 pm

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া একটি চার্চ থেকে ৩৪ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। সেখানকার জুনুজ চার্চ ট্রেনিং সেন্টারের বাইবেল ক্যাম্প থেকে যে ৮৬ শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিল, এই ৩৪ জন ওই দলের মধ্যেই ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই দলের বাকি ৫২ শিক্ষার্থীর কোনো খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রেডক্রস ইন্দোনেশিয়ার মুখপাত্র অলিয়া আরিয়ানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ওই চার্চ থেকে ৩৪ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের কারও নাম-ঠিকানা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। আর সেখানে মোট ৮৬ শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতের পর ব্যাপক ভূমিধস দেখা দিলে ওই চার্চের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, গত শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিটে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে সুলায়েজি দ্বীপে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর পরপরই আঘাত হানে সুনামি। এখন পর্যন্ত এর আঘাতে ৮৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। তবে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চলতে থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জাসাফ কাল্লা বলছেন, সব মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। আর এই ভূমিকম্প ও সুনামিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশি।

এদিকে, প্রবল ভূমিকম্প ও সুনামির পর এখনও চলছে আফটার শক। এর পাশাপাশি বিস্তীর্ণ জনপদ বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় ‍উদ্ধার কাজের গতিও ধীর হয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে ধ্বসস্তূপের মধ্যে এখনও হয়তো অনেক মরদেহ আটকা পড়ে রয়েছে। তবে প্রচুর কাদার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

রেডক্রস ইন্দোনেশিয়ার একজন মুখপাত্র রিদওয়ান সোবরি বিবিসিকে বলেন, কিছু কিছু এলাকা এমনভাবে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে যে সেখানে হাঁটার মতো পরিস্থিতিও নেই।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, পালু’তে ধসে পড়া রোয়া রোয়া হোটেলে এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত সাত তলা ওই হোটেল থেকে ৯টি মরদেহ ও জীবিত তিন জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সেখানকার উদ্ধারকারী দলের প্রধান অগাস হারিয়োনো রয়টার্সকে বলেন, আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে, যেন জীবিত কেউ থাকলে তার কোনো আঘাত না লাগে। ওই হোটেলে অবস্থানরত ৫০ জন ধ্বসস্তূপে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

এর বাইরে গোটা পালু এখন পরিণত হয়েছে ধ্বসস্তূপে। শহরটির বিমানবন্দর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও ভেঙে পড়েছে। ফলে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সহায়তা নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ হয়ে উঠেছে প্রায় অসম্ভব। ত্রাণ সহায়তা আনা-নেওয়া, আহতদের চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থানান্তর ও আটকা পড়াদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজগুলোর নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় সামরিক বাহিনী। তবে বিমানবন্দর থেকে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক ফ্লাইট এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে যারা শহরের বাইরে যেতে চাচ্ছেন, তাদের অপেক্ষার প্রহর বাড়ছে।

শহরের হাসপাতালগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেককে। অনেক স্থানেই চিকিৎসা চলছে খোলা জায়গায়।

এদিকে, সুনামিতে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এলাকার দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানেও মিলছে না খাবার। তারপরও দোকানগুলোতেই হানা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য তাদের।

স্মরণকালের ভয়াবহ এই দুর্যোগ স্থানীয় শিশু-কিশোরদের জন্যও ভয়াবহ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ডিরেক্টর টম হাওয়েলও এক বিবৃতি বলেন, এখানকার বেশিরভাগ শিশুকেই অকল্পনীয় এক ট্রমা ও তীব্র মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের কেউ মা-বাবাকে হারিয়েছে, কেউ শুধু মা বা বাবাকে হারিয়েছে। তারা চোখের সামনে সবকিছু ভেসে যেতে দেখেছে। আর এখন তাদের যেভাবে আশ্রয়হীন হয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে, তা তাদের সারাজীবনের জন্য বড় একটি ধাক্কা।

আরও পড়ুন-

ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির আঘাত

ইন্দোনেশিয়ায় ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প, সতর্কতা

সুনামিতে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়া, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮৪

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৩২

ইন্দোনেশিয়া: মৃতদের গণকবর, জীবিতদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে

ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা পেরুলো ১২০০

সারাবাংলা/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন