বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে আ.লীগ

October 4, 2018 | 3:11 pm

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের যেকোনো সময় অথবা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তেও আসতে পারে নির্বাচনকালীন সরকারের ঘোষণা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখনই ঘোষণা আসুক না কেন, ক্ষমতাসীনরা খুবই অল্প সময়ের জন্যই নির্বাচনকালীন সরকার রাখতে চাইছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও সংসদে থাকা অন্যান্য দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বুধবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে ৭৩তম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানসহ সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন অর্জন ও সফলতা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সাংবাদিকের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুয়েএকটা দলের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও কেবিনেটে এ বিষয়ে আলোচনা করব।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, নিউইর্য়কে গত শনিবার (নিউইর্য়ক স্থানীয় সময় শুক্রবার) এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেতার (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান, আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দল যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা, সেটা কোনো বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো সংজ্ঞা নেই।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, এটা কেবল প্রধানমন্ত্রীই জানেন। সময় হলেই জানা যাবে।’ এ নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব রুহুল আমি হাওলাদার এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয় আলোচনা হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে শিগগির আনুষ্ঠানিক আলোচনায় আমরা বসব।

বিজ্ঞাপন

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসের যেকোনো সময় ১৪ দল ও সংসদের বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবেন।

সরকারি দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে এবং এ মন্ত্রিসভায় কারা থাকতে পারেন, এর একটি পরিকল্পনা সরকারপ্রধানের কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মন্ত্রিসভায় ২০ থেকে ২৫ জনকে রাখার পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি আগামীতে মনোনয়ন পাচ্ছেন না— এমন নেতাদেরও এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার পরিকল্পনা আছে।

এর আগে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলে ২৯ জন ছিলেন। আরও ছিলেন ১০ জন উপদেষ্টা। ওই সময় মন্ত্রিসভার পুরানো কয়েকজন মন্ত্রীকে রেখে এবং নতুন কয়েকজনকে যোগ করে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এবারও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে বলে জানান সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় সংসদে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। জাপা সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে এরশাদ নতুন করে তার দলের তিন জনকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় রাখার অনুরোধ করলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনার করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।

নেতারা জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। কারণ বিএনপির সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে সংবিধানে মন্ত্রিসভা গঠনের একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। এ জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, এর আকার ও কাকে নেওয়া হবে আর কাকে বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হবে— তা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীই ঠিক করবেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিকে প্রয়োজনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। এবার এমন মনোভাব সরকারি দলের নেই।

আরও পড়ুন-

‘অক্টোবরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার’

২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার, ভোট ‘২৭ ডিসেম্বর’

নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি থাকার সুযোগ নেই: কাদের

‘নির্বাচনকালীন সরকারের কথা প্রধানমন্ত্রী জানেন, অর্থমন্ত্রী নয়’

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন