বিজ্ঞাপন

৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ: ভাসানীতে ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার

October 8, 2018 | 11:37 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

টাঙ্গাইল: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদারসহ পাঁচ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন— সহসভাপতি মো. ইমরান মিয়া, আদ্রিতা পান্না, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও ইয়াসির আরাফাত।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগের লাঞ্ছনা, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেন। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হয়।

৫৬ শিক্ষকের মধ্যে দু’জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চার জন ডিন, চার জন প্রভোস্ট ও ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রোববার (৭ অক্টোবর) সকালে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরেও জোর করে একজনকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ছাত্রলীগ। গত শনিবার (৬ অক্টোবর) দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস গ্রেড পয়েন্ট ৪-এর মধ্যে ১ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে কোনো শিক্ষার্থী পরবর্তী সেমিস্টারে উন্নীত হতে পারেন। অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিভাগের অনুমোদন না থাকার পরও ওই ইশিতাকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির বিরোধ দেখা দেয়।

ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে পরীক্ষার বসতে দেওয়ায় বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার পদার্থ বিজ্ঞাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভাগের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়।

ঈশিতাকে পরীক্ষা শেষ করানোর পর সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

পরে বিকেলে জরুরি সভায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহসভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। উপাচার্য বরাবর মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষকের সই করা দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিক থেকে ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে। পরে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। ছাত্রলীগ নেতারা উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে জানান, পরদিন সোমবার সকাল ৯টায় তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেবেন।

এর মধ্যে লাঞ্ছনার বিচার না পাওয়ায় রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষককরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন