বিজ্ঞাপন

মাঠের লড়াইয়ে শক্তিশালী জাপা, আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

October 9, 2018 | 12:43 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রংপুর বিভাগের বেশ বড় একটি অংশেই মাঠের অন্যতম শক্তিশালী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এই বিভাগের বেশকিছু সংসদীয় আসনই বর্তমান সংসদের বিরোধী দলটির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। যে কারণে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হিসেবে অংশ নিলেও বেশকিছু আসনেই জোট থেকে মনোনয়ন পাবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এই বিভাগে কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরও হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তাই এরই মধ্যে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে এই বিভাগে।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছে দলগুলো। নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে আছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ছয় মাস আগে থেকেই প্রতিটি জেলায় পরিকল্পিত নির্বাচনী ছক নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও এবার দলটি নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনী মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও দুর্নীতি মামলার সাজা পেয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না এমন কথা বলা হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই ও ভোটের প্রস্তুতি— দু’টিই চালাচ্ছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিএনপি নির্বাচনে না আসলে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য তিনশ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। চলতি মাসের শুরু থেকে বেশ জোরেশোরেই সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণা নেমেছে সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

একনজরে রংপুর বিভাগ

রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় থেকে বাংলাদেশের সংসদীয় আসনের গণনা শুরু হয়। রংপুর বিভাগে মোট সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৩৩টি। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট হয়েছে ১৫ আসনে। বাকি ১৮টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় ভোট হয়নি। ওই নির্বাচনে বিভাগের ৩৩ সংসদ সদস্যের মধ্যে জাতীয় পার্টির সাত জন এবং একজন করে সংসদ সদস্য জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির (জেপি)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচিত হন একজন। বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগের। বিএনপি নির্বাচনে এলে এবার রংপুর বিভাগের অর্ধেকের বেশি আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার আসনগুলোতে ভাগ বসাতে পারে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

রংপুর বিভাগে মোট জেলা আটটি। উপজেলা ৫৬টি। একটি সিটি করপোরেশন। ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৮৭টি। মোট নয় হাজার ২০১টি গ্রাম রয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা এক কোটি ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৫ জন। আর ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪,৩৩৫টি (২০১৪ সালের হিসেব) এবং মোট বুথের সংখ্যা ২১ হাজার ৫১০টি।

পঞ্চগড়-১

পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেঁতুলিয়া উপজেলা এবং আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গড়া পঞ্চগড়-১ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর নাজমুল হক প্রধান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদকে এ আসনে ছাড় দেওয়ায় আওয়ামী লীগের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেককে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ থেকে এবারও প্রার্থী হবেন নাজুমল হক প্রধান। জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সাবেক স্পিকার ও আইনমন্ত্রী মরহুম মির্জা গোলাম হাফিজের জামাতা, আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শিল্পপতি মনির হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা।

বিজ্ঞাপন

দেশের সবচেয়ে উত্তর প্রান্তের এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। শারীরিক কারণে এই বর্ষীয়ান নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপারগতায় তার ছেলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির মনোনয়ন পেতে পারেন। এছাড়া পঞ্চগড় পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলাম মনোনয়নের জন্য তৎপর রয়েছেন। অপরদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে জাগপার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুঁই মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক এবার ১৪ দলের প্রাথী হতে আগ্রহী। জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচনে না করলে লাঙ্গল প্রতীকেই তিনি নির্বাচন করবেন। বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল খালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

পঞ্চগড়-২

বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ আসনে দীর্ঘদিন ছিল বিএনপির আধিপত্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবারের বিএনপি সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনকে হারিয়ে দিয়ে এ আসন দখল করে নেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের এমরান আল আমিনকে হরিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজন। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো. শাহজাহান মণ্ডল, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক চিশতি।

পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের হয়ে প্রার্থিতা দাবি করবেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বোদা মহিলা কলেজের অধ্যাপক এমরান আল আমিন। জোটের মনোনয়ন না পেলে জাসদের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

বিএনপি থেকে এ আসনে সাবেক এমপি মরহুম মোজাহার হোসেন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর সংকটে পড়েছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। বিএনপির টিকিটে এ আসনে এবার নির্বাচন করতে চান সাবেক সাংসদ মোজাহার হোসেনের সহধর্মিণী বিলকিস নারগিস হোসেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নীতিশ কুমার বকসি ওরফে বাবু মুকুল বকসী বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বোদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সফিউল্লাহ সুফি। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চান তিনি। জোটের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন জামায়াতের এই নেতা।

ঠাকুরগাঁও-১ (সদর)

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা  নিয়ে গঠিত এ আসনে গত দুই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন। এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে হারিয়ে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির ইমরান হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রমেশ চন্দ্র সেন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামতে চান তিনি। এ আসনেই নির্বাচন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীর কারণে আসনটি জাতীয় সংসদের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আসনের ভোটের লড়াইয়ে চোখ থাকবে সারাদেশের।

রমেশ চন্দ্র সেনের দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত জেনেও এ আসনে মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বাবু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা সাধারণ সম্পাদক সাদেক কুরাইশি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অরুণাংশু দত্ত টিটো, কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাজিউর রেজা খোকন চৌধুরী ও জেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি তাহমিনা আক্তার মোল্লা।

এ আসনে বিএনপির মহাসচিব  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই ধানের শীষের একমাত্র প্রার্থী। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও মির্জা ফখরুলের বিকল্প কেউ নেই বলে মনে করছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলী, ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ইমরান হোসেন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে জামায়াত, ন্যাপ, সিপিবি, বাসদ, খেলাফত ইসলামসহ অন্যান্য দলের তেমন কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই।

ঠাকুরগাঁও-২

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা, হরিপুর উপজেলা এবং রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়ন ও কাশিপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এ আসনে ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ছয় মেয়াদর সংসদ সদস্য হলেন দবিরুল ইসলাম। টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আর কারো নেই। একসময়ের কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

১৯৭৯ সালে এ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পিতা মির্জা রুহুল আমীন চখামিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর বিএনপি এই আসনে জিতেনি। বিগত নির্বাচন গুলোতে আওয়ামী লীগ প্রাথীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

বার্ধক্যের কারণে এবার দবিরুল ইসলাম মনোনয়ন না চাইলে আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন তারই বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য গণসংযোগ চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। এছাড়াও আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি  সফিকুল ইসলাম, বড়বাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরাম আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম।

এ আসনে বিএনপির কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা  দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখতে চান। এছাড়া ধানের শীষ প্রতীকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ- সভাপতি ডা. আব্দুস সালাম  ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা। জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে মহিলা জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য নুরুন নাহার বেগমকে। ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জামায়াতের হয়ে নির্বাচন করেন । ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি জামায়াতের জোটে নির্বাচন করেন। অল্প ভোটের ব্যাবধানে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। এ আসনে তিনি এবারও ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবেন।

ঠাকুরগাঁও-৩

পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা মিলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রাখার পর ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পাটির প্রার্থী তা ছিনিয়ে নেয়। এ আসনে দুই মেয়াদে সংসদ ছিলেন জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচন ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসিন আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন  জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ও সাবেক এমপি ইমদাদুল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সেলিনা জাহান লিটা এবং রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যন অধ্যাপক সহিদুল হক। ওয়ার্কার্স পাটির জেলা সভাপতি ও বর্তমান এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী এবারও জোটের মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রাথী পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদও একাদশ নির্বাচনে জয়লাভের আশায় দিন রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পাটির প্রার্থী সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিনও বেশকিছু দিন আগ থেকেই নির্বাচনী মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছেন।

দিনাজপুর-১

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা ও কাহারোল উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-১ আসনটি। এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর হতে একবার জাতীয় পাটি ও একবার জামায়াত ছাড়া বেশিরভাগ সময়ে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের জেলা সহসভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। গত দুই মেয়াদের এ সংসদ সদস্য তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে জাগপা ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া মনোরঞ্জন শীল গোপালকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিরূপ মনোভাব রয়েছে।  দলের অনেক নেতাকর্মীও তার ওপরে সন্তুষ্ট নন।

দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলে এগিয়ে থাকবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাকারিয়া জাকা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন  ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি আবু হুসেইন বিপু।

বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জামায়াত নেতা মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ এ আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবেন। জোটের প্রার্থী হতে না পারেল স্বতন্ত্রই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মনজু। তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা শুরু করেছেন।

এছাড়া এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা কমিউনিস্ট পাটির সভাপতি আলতাফ হোসেন, বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম।

দিনাজপুর-২

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর-২ আসন বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরীর পুত্র। প্রয়াত পিতার রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তিগত কর্মতৎপরতায় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ আসনটিতে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেকজন শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়। ২০০১ সালে দলীয় কোন্দলের কারণে আসনটি হারায় আওয়ামী লীগ। আর ১৯৮৮ সালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আসনটিতে জয় পায় জাতীয় পার্টি।

বিএনপি থেকে এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক এমপি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। পাশাপাশি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির বোচাগঞ্জের সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক ও উপজেলা বিএনপি নেতা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জীবন এবং এ্যাড. সুধীর চন্দ্র শীল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ তাজুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন।

দিনাজপুর-৩

দিনাজপুর-৩ আসনটি জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসনের মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন। তবে এ আসনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি।

ইকবালুর রহিমের বিরুদ্ধে জনসম্পৃক্ততা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ। এ আসনে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেলও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বোন খুরশীদ জাহান হক এই আসনে দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকে বোনের আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রার্থী হওয়ার দাবি করে আসছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, এ আসনে বেগম জিয়া নির্বাচন করলে বাকি পাঁচটি আসনেও ২০ দলীয় জোট প্রার্থীদের ওপর প্রভাব পড়বে এবং ওই আসনগুলোতে প্রার্থীরা বিজয়ী হবে। বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় কারারুদ্ধ খালেদা জিয়ার সাজা হলে এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারালে এ আসনে দেখা যেতে পারে দিনাজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলালকে।

এছাড়া এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা মুকুর চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হক’র ছেলে শাহরিয়ার আক্তার হক ডন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা জামাল উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

দিনাজপুর-৪

চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৪। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কিন্তু তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে বেশীরভাগ সময় ঢাকাতে অবস্থান করায় এই অঞ্চলে রাজত্ব করেন তার ভাই শামীম। এ কারণে মাহমুদ আলী জনপ্রিয়তা কমেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু, আমেনা বাকী রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা. আমজাদ হোসেন, চিরিরবন্দর উপজেলা শাখার সভাপতি আইয়ুবুর রহমান শাহ্ ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

বিএনপির সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া এবার এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি প্রচারণাও শুরু করেছেন। ধানের শীষ প্রতীকে এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি আলহাজ্ব হাফিজুর রহমান, চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আবদুল হালিম ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ আলী খান মনোনয়ন চাইবেন। ২০ দলীয় জোটের প্রাথী হতে  চান জেলা জামায়াত নেতা ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আফতাব উদ্দীন মোল্লা। তবে জোটের মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়াও চিরির বন্দর উপজেলা জাপার সভাপতি আলহাজ্ব সেকেন্দার আলী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মো. নবীউল ইসলাম মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

দিনাজপুর-৫

ফুলবাড়ি এবং পার্বতীপুর— এই দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান জেলা আওয়ালী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ভূমি প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি এ আসন থেকে পরপর পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিদনি পুনরায় মনোনয়ন পাবেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। ফুলবাড়ী পার্বতীপুর দুই উপজেলা দিয়ে তার নিবার্চনী এলাকা হলে পার্বতীপুর উপজেলায় তার বাড়ী হওয়ায় একচাটিয়া ভোট পাওয়ায় পাঁচবার এমপি হয়েছেন তিনি।

এ আসনে  বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এজেডএম রেজওয়ানুল হক মনোনয়ন পেতে পারেন।  জাতীয় পার্টি যদি এককভাবে নির্বাচন করে তাহলে এ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন।

জেলা বিএনপির সদস্য ও পার্বতীপুর উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পদক এস এম জাকারিয়া বাচ্চু এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার জনসেবামূলক কার্যকলাপের কারণে তিনি এরইমধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এছাড়া এ আসন থেকে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব মনসুর আলী সরকার, পার্বতীপুর উপজেলা জাপার সভাপতি আব্দুল গফুর এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাজী মো. আবু সায়েম এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

দিনাজপুর-৬

বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট এবং হাকিমপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্ষমতাসীন দলের শিবলি সাদিক। মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. আজিজুর হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলতাফুজ্জামান মিতা, নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান।

দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পর্যটন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো. দেলওয়ার হোসেন এ দুজন বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলতাফুজ্জামান মিতা, জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. লুৎফর রহমান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাহার আলী সরকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুন্নবী এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

নীলফামারী-১

নীলফামারী জেলার ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী -১ আসন। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বাবুল, সাবেক রাষ্ট্রদুত ও নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হোসেন সরকার, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য অ্যামনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সরকার ফারহানা আখতার সুমি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রজন্ম বিষয়ক সম্পাদক ও নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি জেব্দ্যাতুল তারেফিন তারেক ও নীলফামারী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার ইমরান কবির চৌধুরী জনি।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে না পারলে তার বাবা রফিকল ইসলাম চৌধুরী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্র  হিসেবে এ আসনে প্রার্থী দেবেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুস ছাত্তার এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের আর এক শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এ আসন থেকে জোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি। জাতীয় পাটির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা জাতীয় পাটির সদস্য ও নীলফামারী-১আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী । গত নির্বাচনেও তিনি প্রাথী হয়েছিলেন।

নীলফামারী-২

নীলফামারী সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও নীলফামারী পৌরসভা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-২ আসন। এ আসনের  বর্তমান সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। ১০ম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নির্বাচিত হন। একাদশ নির্বাচনে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

বিগত নির্বাচন গুলিতে নীলফামারী-২ আসনে জামায়াত থেকে প্রার্থিতা দেওয়া হলেও ভোটের অঙ্ক সম্মানজনক ঘরে নিয়ে যেতে না পারায় চরম ক্ষুব্ধ শরিকরা। সর্বোপরি প্রতীকবিহীন জামায়াতের ওপর বিমুখ বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা যেকোনো অবস্থায় এখানে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে। আর এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান জামানের নামই শোনা যাচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াত ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর মনিরুজ্জামান মন্টু অনেকটা নীরবেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। জোটের হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে তিনি এগুচ্ছেন।

নীলফামারী-৩

নীলফামারীর জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে নীলফামারী-৩ আসন। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, উপজেলার গোলনা ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুল আলম কবির ও উনসত্তরের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা একেএম শহীদুল ইসলাম।

এ আসনটিতে বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা তেমনটা ভালো না। উপজেলা বিএনপি সভাপতি, পৌর মেয়র ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল হক কবির চৌধুরীর ছেলে ফাহমিদ ফয়সাল কমেট চৌধুরী জোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টি থেকে আসনটিতে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন চান কাজী ফারুক কাদের। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা রানা মোহাম্মদ সোহেলও মনোনয়ন প্রত্যাশী। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক জেলা আমির আজিজুল ইসলাম মনোনয়ন চাইছে বলে জানা গেছে।

নীলফামারী-৪

নীলফামারী জেলার (সৈয়দপুর উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ আংশিক) নিয়ে নীলফামারী-৪ আসন গঠিত। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও নীলফামারী জেলা শাখার আহ্বায়ক শওকত চৌধুরী। তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ। এ আসনে আওয়ামী লীগেই মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন আটজন। বিএনপি থেকে তিনজন এবং জাতীয় পার্টি থেকে দুইজন মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার টানা পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র দেওয়ান কামাল আহম্মেদ, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র আখতার হোসেন বাদল, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা মোখছেদুল মোমিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মোখছেদুল ইসলাম, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. সিকান্দার আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য আমেনা কোহিনুর আলম, আওয়ামী কর আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল ইসলাম আমীর, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা।

অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস ইসলাম। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। জাফর ইকবাল সিদ্দিকীর আগে নীলফামারী-১ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন।

 লালমনিরহাট-১

লালমনিরহাটের এই আসনটি গঠিত পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলা নিয়ে। এটি একসময় জাতীয় পার্টির দূর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙে আওয়ামী লীগের পর পর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। মোতাহার হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনোনয়ন চাইবেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে সংসদ নিতে পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবুলও বেশ তৎপর রয়েছেন। এছাড়াও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনে প্রাথী হতে চান বলে জানিয়েছেন।

বিএনপির মনোনয়ন চান ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান, সাবেক এমপি জয়নুল আবেদীন সরকার, তার ছেলে সাইদুজ্জামান কোয়েল, আইনজীবী সাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারি উজ্জ্বল, হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আকন্দ।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগ করছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য হাতীবান্ধা উপজেলা সভাপতি এমজি মোস্তফা। দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরও শোনা যাচ্ছে এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা ও এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মেজর (অব.) খালিদ আখতারের নাম। তবে বছর দুয়েক আগে দলের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

লালমনিরহাট-২

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ-আদিতমারী নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসন। এটি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। এ আসনে জাতীয় পাটির প্রার্থী পর পর ৬ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছে। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ না নেওয়ায় বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান আহম্মেদ এমপি হন। ক্ষমতাসীন দল থেকে তার প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলামও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল, সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ও কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমের নাম শোনা গেলেও ভোটের অবস্থানে বিএনপির অবস্থান আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির চেয়ে নড়বড়ে। জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুল প্রতিনিয়ত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনটি বরাবরেই জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মজিবুর রহমান অংশ না নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ নির্বাচিত হন। এ আসনে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ব্যক্তি হিসাবে রোকন উদ্দিন বাবুল ক্লিন ইমেজের হওয়ায় তিনি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

লালমনিরহাট-৩

লালমনিরহাট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমিনরহাট-৩ সংসদীয় আসন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ দুলাল। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে তাকে ছাড় দিতে রাজি নয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মতিয়ার রহমান ও নারী এমপি অ্যাড. সফুরা বেগম রুমি। এই দু’জনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে আওয়ামী লীগ স্থানীয়ভাবে বিভক্ত হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে তারা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের এমপি ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ দুলালের দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। তার চেয়ে জনসম্পৃক্ততায় এগিয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মতিয়ার রহমান। তিনি প্রতিনিয়ত দলের কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা সবাই কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর অনুসারী। বিএনপি থেকে তিনি এবার মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধানও এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন। গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এ আসনে বিএনপিও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

এই আসন থেকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন এরশাদের ছোট ভাই পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। স্বচ্ছ ইমেজের এই নেতা ইদানিং প্রায়ই লালমনিরহাট সফরে আসছেন। এ আসনে বিএনপিতে কোনো কোন্দল না থাকলেও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিতে দলীয় কোন্দল রয়েছে।

রংপুর-১

রংপুরের এই আসন গঙ্গাচড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে টানা চার মেয়াদে স্থানীয় কোনো নেতা সংসদ সদস্য হতে পারেননি। বড় দলগুলো মনোনয়ন নিয়ে বহিরাগত প্রার্থীরা এ আসনের গণপ্রতিনিধি হয়েছেন। এবার এ অঞ্চলে আওয়াজ ওঠেছে সংসদ সদস্য হতে হবে স্থানীয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্র্টি আর বিএনপিতে শোনা যাচ্ছে একই আওয়াজ। এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হাওয়ায় ভোটের লড়াই হবে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যেই।

এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু ও শিল্পপতি সিএম সাদিক। তারা প্রত্যেকেই আলাদভাবে জনসংযোগ করছেন এবং দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আওয়ামী লীগের এই তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী ‘স্থানীয় ও বহিরাগত’ ইস্যুটিতে জোর দিচ্ছেন।

রংপুর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি চান আবারও জাপার মনোনয়নে এই আসনে নির্বাচন করতে। কিন্তু জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন। মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।

রংপুরের এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দুইজন— জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন সুজন। এ আসনে রংপুর জেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক খায়রুল আলম বাবুর নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে।

রংপুর-২

রংপুর জেলার তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকার বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি না থাকায় ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যেই। স্বাধীনতার পর তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুল হক চৌধুরী পাঁচ বার এমপি নির্বাচিত হন। মাঝখানে ১৯৯১ সালে এ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদ। তিনি এ আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে এমপি হন অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওই সময় থেকে রংপুরের আসনগুলো জাতীয় পার্টির দখলে চলে যায়। পরপর দু’বার জাতীয় পার্টির দখলে থাকে রংপুর ২ আসনটি। কিন্তু বর্তমানে আবারও আসনটি চলে গেছে আওয়মী লীগের নিয়ন্ত্রণে। এ আসনের বর্তমান এমপি বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আহসানুল হক চৌধরী ডিউক। আওয়ামী লীগ থেকে এবারও মনোনয়ন পাবেন আশা করছেন আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। তবে চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টুটুল চৌধুরী এবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তাকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। ডিউক চৌধুরী ও টুটুল চৌধুরীর মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্ধের সুযোগে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন পার্টির জেলা সদস্য মোকাম্মেল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। ধানের শীষের মনোনয়ন চান বিএনপির উপজেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি পরিতোষ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শাহান এবং জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার। জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) আবদুস সাত্তার, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী এবং জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য জয়চন্দ্র প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

রংপুর-৩

রংপুর জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি এ আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তার ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আগামী নির্বাচনে এ আসনেই লড়বেন এরশাদ। এখনও এ আসনে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক আমলা চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।

বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি এখানে দুর্বল হলেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এখানে চারজন। এর হলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন। অন্য দলগুলোর মধ্যে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা সিপিবি নেতা কমরেড শাহাদাত হোসেন, বাসদের জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু ও আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্তফা, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন, জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব রেয়াজ উদ্দিন এবং জাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা সভাপতি ডা. একরামুল হোসেন স্বপন।

রংপুর-৪

কাউনিয়া ও পীরগাছা নিয়ে গঠিত এ আসনে লড়াইয়ের জন্য বড় তিনটি দলের একাধিক প্রার্থী কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি। এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে না পারলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে বিএনপি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে ছিনিয়ে নেয় বিশিষ্ট শিল্পপতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি। নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দু’বারের এমপি টিপু মুনশি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেখানে তার বিকল্প কাউকে দেখছেন না।

এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে যমুনা ব্যাংকের এমডি সিরাজুল ইসলাম ভরসা। সম্প্রতি যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেওয়া শিল্প নগরী হারাগাছের সন্তান ব্যবসায়ী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলও জাতীয় পার্টির টিকিট চাইবেন। এছাড়াও পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান এ আসনের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

রংপরের এ আসনটিতে বিএনপির অবস্থা আগে থেকেই কিছুটা নড়েবড়ে। তবুও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিন নেতা। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রাঙা ও জেলা বিএনপির সদস্য কর্নেল আবদুল বাতেন (অব.)। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি মো. বদিউজ্জামান এবং জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য রফিকুল ইসলাম প্রার্থী হবেন।

রংপুর-৬

পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে রংপুর-৬ আসনে টানা দুই যুগ রাজত্ব করে জাতীয় পার্টি। ৩৫ বছর পর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এ আসনটি উদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি হলো পীরগঞ্জ। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মন্ডলের কাছে সামান্য ভোটে পরাজিত হলেও নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে পরপর এমপি হন। তখন থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে স্থানীয় নেতারা নিশ্চিত করেছেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে বিএনপি’র জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামও আগ্রহী। এ অঞ্চল থেকে কেন্দ্র কোনো প্রাথী না দেওয়া হলে জাতীয় পার্টির মানোনয়ন পেতে পারেন পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী নূরে আলম যাদু। এরই মধ্যে অবশ্য তিনি এরশাদের সবুজ সংকেত পেয়ে গেছেন জানিয়ে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমে পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম-১

নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসন। ১৯৯১ সাল থেকে এ আসনটি দখলে রেখেছে জাতীয় পার্টি। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ.কে.এম. মোস্তাফিজ্জুর রহমান (মোস্তাক)। পুনরায় মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছেন। তার পক্ষে নেতাকর্মীরা নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। ক্লিন ইমেজের এমপি হিসেবে পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য এবার চ্যলেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। কারণ গত কয়েকবছর ধরে জাতীয় পার্টির এই দুর্গে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন।

এ আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আট জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন— জেলা কৃষক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বীরবল, নাগেরশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজ্জাম্মেল হক প্রধানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসলাম হোসেন সওদাগর। তিনি গতবার আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থনও পেয়ে ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল।

বিএনপির দলীয় ইউনিটি দুর্বল হলেও এ আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান রানা। ২০ দলীয় জোটের প্রাথী হিসেবে এ আসনে নির্বাচনে আগ্রহী জেলা জামায়াতের আমির আজিজুর রহমান স্বপন। মনোনয় না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও এ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি)র প্রার্থী হচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রশীদ আহমেদ।

কুড়িগ্রাম-২

কুড়িগ্রাম-২ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদ আমলে তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত তাজুল ইসলাম এবারও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) আব্দুস সালাম জাতীয় পার্টির টিকেট চেয়েছেন। এ ছাড়া দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমদের নামও শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নতুন-পুরানো মিলিয়ে প্রায় ডজন খানেক নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাফর আলীর নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আমসা-আ-আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মণ্ডল, সহ-সভাপতি চাষি অব্দুল করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সুফিয়ান, ও ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. হামিদুল হক খন্দকারের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে জোটগত নির্বাচন হলে এবারও হয়ত জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে হতে পারে।

বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নাম সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে। এ ছাড়া এই আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজ সেবক মো. নুরনবী সরকার ও বাম দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক মিলু প্রার্থী হতে পারেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের থেকে মাওলানা ইয়াছিন আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম-৩

জাতীয় পার্টির দখলে থাকা উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৩ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির ডা. আক্কাছ আলী সরকার। এর আগের সংসদ সদস্য মাঈদুল ইসলাম মারা গেলে তিনি উপ নির্বাচনের সংসদ নির্বাচিত হন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে পুনরায় আক্কাছ আলী মনোনয়ন চাইবেন। পাশাপাশি মনোনয়ন চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবু তাহের খায়রুল হক। এ আসনে নির্বাচন করতে চান আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এখানে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া অধ্যাপক এম এ মতিন। এছাড়া চিলমারী উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম, সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদার, দলের উলিপুর উপজেলা শাখার সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু, এবং পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে কে মনোনয়ন পাবেন- তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। একাধিক প্রার্থী থাকায় দলের নেতাকর্মীরাও অনেকটাই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

সে তুলনায় বিএনপি বলা চলে ভারমুক্ত। দলের কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সভাপতি তাসভীর উল ইসলামের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এছাড়াও জাতীয় পার্টি ছেড়ে ট্রুথ পার্টি নামে নতুন দল গঠন করে এ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক প্রধান বনরক্ষক গোলাম হাবিব দুলাল।

কুড়িগ্রাম-৪

কুড়িগ্রাম -৪ আসনটি ১৯৮৬ সালে থেকে ২০০১ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির গোলাম হাবিবের কাছ থেকে আসনটি কেড়ে নেন আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকির হোসেনকে হারিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে এমপি হন রুহুল আমিন।

২০১৪ সালে এরশাদের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ আলী এবার এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। বর্তমান এমপি রুহুল আমিনেরও জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে মনোনয়ন পাওয়াটা নিশ্চিত। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে একাধিক প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সাবেক এমপি ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেনের নাম। পাশাপাশি রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও রৌমারী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন প্রথম সারিতে। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রৌমারী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক মনি।

বিগত বছরগুলোতে ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে প্রার্থী দিয়ে আসছিল জামায়াতে ইসলাম। তবে এবার এখানে বিএনপির স্থানীয় নেতারা জামায়াতের প্রার্থী চান না। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন রাজীবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, রৌমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা আবুল হাশেম মাস্টার ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু।

গাইবান্ধা-১

এ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর উপনির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ জয়লাভ করেন। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহমেদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে আসনটি আবারও শূন্য হয়ে যায়। এ আসনের দ্বিতীয় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রয়াত সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন আফরোজা বারীকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জয়ী হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ফের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। উপনির্বাচনে হেরে গেলেও প্রয়াত লিটনের বড় বোন আওয়ামী লীগ নেতা আফরোজা বারীও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে আগ্রহীদের তালিকায় আরো রয়েছেন সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম রেজা।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম। তবে ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে জামায়াত থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান জোটের প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জাপা চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আইন ও বিচার বিষয়ক উপদেষ্টা এবং উপজেলা জাপার সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও জাপা নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সরদার। জাতীয় পার্টি-জেপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা। জাসদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক।

গাইবান্ধা-২ (সদর)

জেলা সদরের এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সামছুল আলম হিরু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরহাদ আবদুল্লাহ হারুন বাবলু, বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ্ আব্দুল হামিদের নাতি সাবেক থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ্ সরোয়ার কবীর, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য অ্যাডভোকেট আশুতোষ সাহাসহ আরও অনেকেই।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে সাবেক জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক আনিছুজ্জামান খাঁন বাবু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আযম আনাম, সাবেক এমপি সাইফুল আলম সাজা, জেলা জিয়া পরিষদের সদস্য সচিব ও দলের পৌর শাখার উপদেষ্টা খন্দকার আহাদ আহমেদ, দলের সাবেক সভাপতি শেখ সামাদ আজাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজান গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে একমাত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি আব্দুর রশিদ সরকার। এ আসনে জামায়াত থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের জেলা সেক্রেটারি মো. আব্দুল করিম।

এছাড়াও এখানে জাসদ থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা জাসদের সভাপতি শাহ শরীফুল ইসলাম বাবলু, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও জেলা শাখার সভাপতি মিহির ঘোষ, বাসদের মঞ্জুর আলম মিঠু দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।

গাইবান্ধা-৩

সাদুল্ল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ আসনে ছয়বারে সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ড. টিআইএম ফজলে রাব্বীকে হটিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ের মুখ দেখে আওয়ামী লীগ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. ইউনুস আলী সরকারের এবারও আওয়ামী লীগৈর মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন সাদুল্ল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শাহারিয়ার খান বিপ্লব, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাদুল্ল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার, সামসুজ্জোহা প্রামাণিক রাঙ্গা, বর্তমান কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক।

এ আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত জয় না পেলেও দলটির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন একাধিক নেতা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক এলাকায় গণসংযোগ এবং দলীয় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।

এ ছাড়া জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাদুল্ল্যাপুর উপজেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রফিকও দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লবিং অব্যাহত রেখেছেন।

জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীর মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন দলের চেয়ারম্যন আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

গাইবান্ধা-৪

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটির রয়েছে আলাদা ঐতিহ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ আব্দুল হামিদ নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকারের আসনে বসেন। দশম জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের দুজন ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পাট ও বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম লিটন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান মণ্ডল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন, পৌর বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আলতাব হোসেন পাতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ডা. আব্দুর রহিম জামায়াতের প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে।

মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লুত্ফর রহমান চৌধুরী। কিন্তু এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথায় তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচন পরবর্তীতে লুৎফর রহমান চৌধুরী জাতীয় পার্টি (জেপি) যোগদান করায় গোবিন্দগঞ্জ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য উপজেলা জাপার আহ্বায়ক কাজী মো. মশিউর রহমান।

গাইবান্ধা-৫

এ আসনে বর্তমান এমপি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জাতীয় পার্টির টিকেটে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী বেগম রওশন এরশাদকে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও এমপি নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী অবিভক্ত বাংলার কৃষিমন্ত্রী মরহুম আহমেদ হোসেন সরকারের নাতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজ সেবক মাহবুবর রহমান নিটল।

এ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। তবে কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করলে তার পরিবর্তে প্রার্থী হবেন সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এবং সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু।

এ আসনে বিএনপি থেকে সাঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রাহিদুল ইসলাম রাহী, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সমাজ সেবক নাজেমুল ইসলাম নয়ন। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেন।

আরও পড়ুন-

মাঠে-কেন্দ্রে তৎপর আ.লীগের একাধিক প্রার্থী, বসে নেই বিএনপিও

সারাবাংলা/এইচএ/একে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন