বিজ্ঞাপন

আ.লীগ প্রার্থীর ছড়াছড়ি বরিশালে, তোড়জোড় নেই বিএনপিতে

October 9, 2018 | 8:46 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘হাইব্রিড’ বা নতুন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া অনেক নেতাই কেন্দ্রে শক্ত লবিং জারি রেখেছেন মনোনয়নের জন্য। অন্যদিকে, দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের অনেকেই স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করেছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে বিভাগের কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।

এদিকে, দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বললেই চলে। সবগুলো আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রার্থীও নেই। স্থানীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হিসেবে নির্বাচন অংশ নিলে এই বিভাগ থেকে দশম জাতীয় সংসদের মতোই পটুয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার এবং বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান রতনা মনোনয়ন পাবেন। আর জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তখন প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে।

বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী— এই ছয়টি জেলা নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগ বরিশাল। ১৩ হাজার ২২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিভাগে রয়েছে ২১টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে বরিশালে ছয়টি, ভোলায় চারটি, ঝালকাঠিতে দুইটি, পিরোজপুরে তিনটি, বরগুনায় দুইটি ও পটুয়াখালীতে আসন সংখ্যা চারটি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই বিভাগে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৯ লাখ ৭২ হাজার ২৭৪।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য ছিলেন ১৬ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে দুই জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে একজন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে হাতুড়ি প্রতীকে একজন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে একজন প্রার্থী ছিলেন এই বিভাগ থেকে।

বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া, গৌরনদী)

সংসদীয় এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে আকন কুদ্দুস রহমানও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। এই আসনে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন বিএনপির  ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এই আসনে জাতীয় পার্টি সম্ভাব্য প্রার্থী দু’জন— গোলাম রহমান পারভেজ ও সেকান্দার আলী।

বিজ্ঞাপন

বরিশাল-২ (বানারীপাড়া, উজিরপুর)

বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তবে তার বাইরে এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন— ক্যপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল (ওরফে জয়বাংলা বাবুল), সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম, শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য স্থানীয় বেশকিছু কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন। ফলে এই আসনে নৌকা প্রতীকে মুখবদল হতে পারে। এই এলাকায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলেরও (জাসদ) দু’জন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন— অ্যাডভোকেট আনিসুজজ্জামান আনিস ও আবুল কালাম আজাদ। জোট হিসেবে নির্বাচনে গেলে এই আসন থেকে জাসদের কোনো একজনের ভাগ্যেও শিঁকে ছিড়তে পারে।

এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীও রয়েছেন তিন জন। তারা হলেন— অ্যাডভোকেট এস এম এ বকর, এস সরফ উদ্দিন আহমেদ সান্টু ও কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ, মুলাদী)

বিজ্ঞাপন

এই আসনটি মূলত ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের। এই আসনে একাধিকবারের সংসদ সদস্য তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। তিনি ছাড়াও এই আসনে দলটির আতিকুর রহমানও মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। তা সত্ত্বেও দল থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিরাজউদ্দিন আহমেদ, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম মিঠু, কাজী এমদাদুল হক দুলাল তাদের মধ্যে অন্যতম।

আসনটিতে গত নির্বাচনে মাঠের বাইরে থাকা বিএনপির অবস্থানও বেশ শক্তিশালী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তাদের সম্ভাব্য দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন— জয়নাল আবেদিন ও বেগম সেলিমা রহমান।

বরিশাল-৪ (হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ)

আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নের দৌড়ে আরও বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম, মেজর (অব.) নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক মজিবর রহমান হাওলাদার, মেজর (অব.) মহসিন সিকদার। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের পক্ষেই কর্মী-সমর্থকদের পাল্লা ভারি।

এই আসনে জাতীয় পার্টি তেমন সক্রিয় নেই। তবে বিএনপির অবস্থা বেশ ভালো। দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন মেজবা উদ্দিন ফরহাদ।

বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর)

শওকত হোসেন হিরন এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুও এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চান। আসনটিতে বিএনপিও সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। দলটিতে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মজিবর রহমান সরোয়ার। তবে অ্যাডভোকেট বিলকিস আখতার জাহান শিরিনও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান এই আসন থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)

জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আগামী নির্বাচনেও তিনিই এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে তিনিই হবেন এই আসনের প্রার্থী।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন— কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রশীদ খান, প্রয়াত সংসদ সদস্য মাসুদ রেজার সহধর্মিণী জেলা পরিষদ সদস্য আইরিন রেজা ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল হোসেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, আসনটিতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি খুব বেশি শক্তিশালী নয়।

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর, কাঁঠালিয়া)

বর্তমান সংসদ সদস্য ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুল হক হারুন (বিএইচ হারুন)। তবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মুনিরুজ্জামান মনিরও মনোনয়ন চান ক্ষমতাসীন দল থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য হারুনের জনপ্রিয়তা কিছু কিছু এলাকায় কমেছে। অন্যদিকে, এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। বিএনপি নির্বাচনে এলে তার বিরুদ্ধে জিততে হলে ১৪ দলীয় জোট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর, নলছিটি)

বর্তমান সংসদ সদস্য ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ব্যক্তি হিসেবে আমু ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থান এই আসনে অত্যন্ত শক্তিশালী। তারওপর নির্বাচনে এলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এলিণ ভুট্টোর জনপ্রিয়তা কমেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ফলে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আমির হোসেন আমুকে অনেকেই এই আসনে পরবর্তী সংসদ সদস্য হিসেবেও মনে করছেন।

পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ)

আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আউয়াল। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শ ম রেজাউল করিম; পিরোজপুরের পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ও সংসদ সদস্য প্রয়াত এনায়েত হোসেন খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ এ্যানি রহমান; সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা এবং ইসাহাক আলী পান্নাও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপদল গড়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ এই কোন্দল না মিটলে আসনটি ক্ষমতাসীনদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থী উপাধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও বাবুল গাজী। জাতীয় পার্টি এই আসনেও সাংগঠনিকভাবে তেমন শক্তিশালী নয়। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া, কাউখালী, জিয়ানগর)

এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আগামী নির্বাচনেও মহাজোট বজায় থাকলে আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বদলে তিনিই জোটের প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বলে মনে করছেন জেলার রাজনীতিবিদরা। তবে জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ হাকিম হাওলাদার, ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামও নৌকায় মনোনয়ন চান এই আসন থেকে। অন্যদিকে, বিএনপি নির্বাচনে এলে এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন ডা. রফিকুল ইসলাম। যদিও বিএনপি এই আসনে তেমন জনপ্রিয় নন বলে জানান স্থানীয়রা।

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া)

দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী। জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, কারণে-অকারণে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা করা ও বারবার দল পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন কারণে তার জনপ্রিয়তা কমেছে।

এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন— জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেন, মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এম নজরুল ইসলাম। স্থানীয়রা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এই আসন আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কোন্দল না মিটলে ফের আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন রুহুল আমিন দুলাল, কর্নেল (অব.) শাজাহান মিলন ও রফিকুল ইসলাম মাহাত। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে রুহুল আমিন দুলালের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।

পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি)

এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদার। জোট থেকে এবারও মনোনয়ন পেলে তিনিই এই আসনের পরবর্তী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ মৃধা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম এই আসন থেকে নৌকায় মনোনয়ন চান। অন্যদিকে, এই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বিএনপি নির্বাচনে এলে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের জোট হিসেবে প্রার্থী দেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল)

বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দদকার শামসুল হক রেজাও এই আসনে মনোনয়ন চান ক্ষমতাসীন দল থেকে। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম তালুকদার ও ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হোসেন। জাতীয় পার্টি এই আসনে তেমন সক্রিয় নয়। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা, গলাচিপা)

এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মহব্বত প্রিন্স, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা নান্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. ফোরকান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান এই আসনে নৌকার মনোনয়ন চান। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউই ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যেকার বিভেদ দূর করাটাই এই আসনে ক্ষমতাসীনদের বড় চ্যালেঞ্জ। এই আসনেও জাতীয় পার্টি খুব একটা সক্রিয় নয়। তবে বিএনপির শাজাহান খান এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া, রাঙ্গাবলী)

আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। স্থানীয়রা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় একডজন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের মধ্যে কলাপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান মোতালেব তালুকদার, কলাপাড়ার পৌর মেয়র বিপুল হালদার, সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) হাবিবুর রহমান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি মুরসালিন আহমেদ ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ ব্যাপারীর নাম রয়েছে আলোচনায়। প্রার্থীদের মধ্যেকার দূরত্ব না ঘুচাতে পারলে ক্ষমতাসীনদের জন্য আসনটি ধরে রাখা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা। কারণ বিএনপি নির্বাচনে এলে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন মোশারফ হোসেন; তিনি জনসমর্থনে বেশ এগিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তারা।

বরগুনা-১ (বরগুনা সদর, আমতলী)

বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এরই মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যেই একটি অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সম্প্রতি শম্ভুকে এলাকায় অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছেন। তার জায়গায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক মেয়র শাহজাহান মিয়া, যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান মহারাজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যাবসায়ী মশিউর রহমান শিহাব। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী মনে করছেন, শম্ভুকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার বিরুদ্ধে কামরুল হাসান মহারাজকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এই কোন্দলের কারণে বিএনপি নির্বাচনে এলে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা। যদিও বিএনপির দুই সম্ভাব্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মতিউর রহমান মামুনের কারও জনপ্রিয়তাই ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নয় বলেও মনে করেন স্থানীয়রা।

বরগুনা-২ (বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী)

বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শওকত হাসানুর রহমান রিমন। তবে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন বরগুনার মেয়র শাহাদাত হোসেন, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর সহধর্মিনী সুলতানা নাদিরা ও মেয়ে ফারজানা সবুর রুমকি, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মালেক খানের পুত্র ফিদা আবদুল্লাহ খান মন্টি।

স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগের জন্য আসনটি পাওয়া কঠিন হবে। কারণ, সাংগঠনিকভাবে এই আসনে বিএনপি শক্তিশালী। এখানে তাদের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন— অ্যাডভেকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন ও নুরুল ইসলাম মনি।

ভোলা-১ (ভোলা সদর)

আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার প্রতিই আওয়ামী লীগ ভরসা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হেমায়েত উল্ল্যাহও এই আসনে নৌকার মনোনয়ন চান। নির্বাচনে তারা কেউ মনোনয়ন না পেলে তোফায়েল আহমেদের জন্য কতটা কাজ করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি এই আসনে বিএনপিও সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। ফলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল না মেটাতে পারলে আসনটি নৌকার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান)

বর্তমান সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রীর ভাতিজা আওয়ামী লীগের আলী আজম মুকুল। তবে সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমানের পুত্র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভাগ্নে ড. আশিকুর রহমান শান্ত, মহব্বতজান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে এই আসনেও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। এই আসন থেকে হাফিজ ইব্রহিম ও সাবেক ফুটবলার রফিকুল ইসলাম দলটির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপি নির্বাচনে এলে হাফিজ ইব্রাহিম মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ভোলা-৩ (লালমোহন, তজমুদ্দিন)

বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। তবে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) জসিম উদ্দিনও আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, ভোলার এই আসনটিও বিএনপি অধ্যুষিত বলে পরিচিত। ফলে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের কোনো প্রার্থী মনোনয়ন পেলে জয়ের পাল্লা তার দিকে ঝুঁকে থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন, মনপুরা)

বর্তমান সংসদ সদস্য বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। আগামী নির্বাচনে দল থেকে তিনিই ফের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আর এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন নাজিম উদ্দিন আলম। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি— দুইটি দলের সাংগঠনিক অবস্থাই শক্তিশালী হওয়ায় এই আসনে বিএনপি নির্বাচনে এলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন-

ঢাকা বিভাগে বিএনপি-জামায়াত সেবার শূন্য, এবার কী?

রংপুর: মাঠের লড়াইয়ে শক্তিশালী জাপা, আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

ময়মনসিংহ: আ.লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এখনও সক্রিয় নয় বিএনপি

রাজশাহী: মাঠে-কেন্দ্রে তৎপর আ.লীগের একাধিক প্রার্থী, বসে নেই বিএনপিও

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন