বিজ্ঞাপন

মাথার ভেতরে এখনও স্প্লিন্টার সাংবাদিক জাকির হোসেন মিন্টুর

October 10, 2018 | 11:29 am

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। রাজধানীর পল্টনে সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে দায়িত্ব পালন করছিলেন বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন জাকির হোসেন। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহতদের একজন সাংবাদিক জাকির হোসেন। সেই দিনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন সারাবাংলার কাছে। তার ্সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ

রাহাত মিনহাজ:  ২১ আগস্টে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট কি ছিল? আপনার সঙ্গে প্রতিবেদক কে ছিলেন?

বিজ্ঞাপন

জাকির হোসেন: ওই দিন আমার সিডিউল কোন অ্যাসাইনমেন্ট ছিল না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ কাভার করার কথা ছিল আমার সহকর্মী মো. ওমর ফারুকের। কিন্তু তার অন্য একটি অ্যাসাইমেন্ট থাকায় আমাকে সমাবেশের নিউজ কাভার করার জন্য বলা হয়। আমাদের তখনকার নিউজ এডিটর  নঈম নিজাম ভাইয়ের নির্দেশনায় আমি অ্যাসাইমেন্টে  যাই। আমার সঙ্গে প্রতিবেদক হিসেবে ছিলেন সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ রিয়াজ।

রাহাত মিনহাজ: আপনারা ঠিক কয়টার দিকে অ্যাসাইনমেন্ট স্থলে পৌঁছালেন?

জাকির হোসেন: আনুমানিক সময় বিকাল ৩টায় এটিএন বাংলার অফিস কারওরান বাজার থেকে আমরা বের হই এবং ঘটনার স্থলে আনুমানিক ৪টার দিকে মধ্যে সমাবেশে পৌঁছায়।

বিজ্ঞাপন

রাহাত মিনহাজ: ওই দিনের সমাবেশ কেমন ছিল? সব কি আগের মতই? নাকি আপনি নতুন কিছু দেখেছিলেন? বা লক্ষ্য করেছিলেন?

জাকির হোসেন: ওইদিনের সমাবেশ অন্যান্য সমাবেশের মতো মনে হয়নি। সমাবেশস্থলে নামার পর দেখি অনেক ভীড়। যা অন্যান্য সমাবেশে দেখা যায় না। আমি এবং আমার রিপোর্টার সৈয়দ রিয়াজ ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউ এর প্রধান সড়কে নেমে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে ট্রাক দিয়ে বানানো অস্থায়ী মঞ্চের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ঐ দিন সমাবেশ শুরুর আগেই সমাবেশ স্থলটিতে মানুষের ঢল থাকায় আমাদের অস্থায়ী মঞ্চটিতে যেতে অনেক বেগ পেতে হয়। তারপর মঞ্চের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে রিপোর্টার সৈয়দ রিয়াজ আমাকে বলে আমার কাছে ক্যামেরা দিয়ে তুমি মঞ্চে (অস্থায়ী ট্রাক) ওঠো। মঞ্চে বা ট্রাকে ওঠার পর নড়াচড়া করার মত এক বিন্দু পরিমাণ জায়গাও ছিল না। আমি কোন মতে ট্রাকটিতে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের বসিয়ে ছবি ধারণ করছিলাম। একটু পর ঐ সমাবেশের প্রধান অতিথি, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য কোনো রকম জায়গা করে নিই। তারপর একে একে নেতাদের বক্তব্য রেকর্ড করতে থাকি।

বিজ্ঞাপন

রাহাত মিনহাজ: প্রথম গ্রেনেডের শব্দ কয়’টার দিকে হল? আপনি তখন কোন দিকে ছিলেন?

জাকির হোসেন: প্রথম গ্রেনেডের শব্দ সময়টা আনুমানিক বিকাল ৫টা-৬টার মধ্যে। আমার অবস্থান ছিল অস্থায়ী মঞ্চের দক্ষিণ পাশে। দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য রেকর্ড করছি। এ অবস্থায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে যখন জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে শেষ করলেন তখনই এক এক করে গ্রেনেডের শব্দে স্তব্ধ হয়ে গেল অস্থায়ী মঞ্চসহ পুরো বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউ।

রাহাত মিনহাজ: আপনি তো বেশ আহত হয়েছিলেন? কোথায় কোথায় গ্রেনেডের  হন? আপনার সহকর্মী প্রতিবেদকও কি আহত হয়েছিলেন?

জাকির হোসেন: আমার মাথায় ডান কানের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় গ্রেনেডের একটি  স্প্লিন্টার ঢুকে পড়ে এবং আমার সহকর্মী সৈয়দ রিয়াজ ট্রাকের উত্তরপাশে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট লেখা অবস্থায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার দুই পায়ে অসংখ্য স্প্লিন্টার আঘাতে তাৎক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিজ্ঞাপন

রাহাত মিনহাজ: আপনি কত দিন চিকিৎসা নিয়েছেন? দেশের বাইরেও কি আপনার চিকিৎসা চলেছে?

জাকির হোসেন: আমি টানা তিনমাস পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছি বাংলাদেশে। আহত হওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তারপর থেকে আমি কিছুই দেখতে পাই না। ঘটনার স্থলে লোকজনের দৌড়াদৌড়ি আর চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এরপর সেখানকার স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মী হঠাৎ চিৎকার করে বলতে লাগল উনি এটিএন বাংলার সাংবাদিক। ওনাকে তাড়াতাড়ি ওঠাও।, এরপর ঘটনার স্থলে আসেন আমার অফিসের নিউজ এডিটর নঈম নিজাম ও ক্রাইম রিপোর্টার মাহমুদুর রহমান। স্পোর্টস রিপোর্টার জিএম তসলিমসহ আমার অফিসের অ্যাডমিন থেকে শুরু করে নিউজরুমের সহকর্মীরা ছুটে আসেন আমাকে এবং আমার সহকর্মীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। তারপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ধানমন্ডির সালভেশন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারপর এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক থাইল্যান্ডের বামরুদগাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক মাস চিকিৎসার পর আমি কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসি। তারপর আমাকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

রাহাত মিনহাজ: আপনার শরীরে কি এখনও স্প্রিন্টার আছে?

জাকির হোসেন: আমার শরীর ও মাথায় এখনও স্প্রিন্টার বহন করে বেড়াচ্ছি। প্রায় প্রতি মাসে এখনও আমাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়।

সারাবাংলা/একে

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন