বিজ্ঞাপন

ডাঙ্গায় মাহাজন, জলে অবরোধ

October 19, 2018 | 9:34 am

।। রিয়াদ ফেরদৌস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চাঁদপুর: ‘সকাল হইলেই কিস্তির লোকজন টাকার জন্য ঘরে আইসা বইসা থাকে। নদীতে না নামলে কিস্তির টাকা দিমু ক্যামনে? সরকার হেগরে ২২ দিন কিস্তির টাকা নেওয়া বন্ধ রাখলে আমগো চাপ কিছুটা কমে।’

খানিকটা ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন হইমচরের কাটাখালি এলাকার জেলে নয়ন মোল্লা। সরকার ঘোষিত ২২ দিনের (৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর) মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের কারণে তাকে এখন বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে। কেবল নয়ন মোল্লা নয়, তার মতো ইলিশ ধরার কাজে যুক্ত চাঁদপুরের সব জেলেকেই বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে। কর্মহীন এসব মানুষের সংসার চলছে ধার-দেনা করে।

নয়ন মোল্লা আরও বলেন, ‘এ বছর মাছ আমাগো এখানে কম পাওয়া গেছে। মেলা দেনায় আটাকাইয়া গেছি। নদীতে ঘর ভাইঙ্গা গেছে, এ হানে আইসা আবারও স্বপ্ন দেখছিলাম। ভাবছিলাম পোলাটারে স্কুলে পাঠামু, দেনা কিছুটা শোধ করমু। ভাই, আসলে আমাগো জীবন হইলো জলের মতো, নাড়া খাইলে সব ওলটপালট হইয়া যায়।’

বিজ্ঞাপন

জেলেরা বলছেন, দিনে দিনে ঋণের বোঝা বাড়ছে তাদের। জীবনযাত্রার ন্যূনতম ব্যয় মেটাতে গিয়েই তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়া, জাল, নৌকা কিনতে সমতি থেকে যে ঋণ নিয়েছেন, তোর কিস্তিও পরিশোধ করতে হয়। দৈনিক, সপ্তাহিক, পাক্ষিক, এমনকি মাসিক কিস্তিতেও টাকা পরিশোধের নিয়ম রয়েছে। তবে দেনা পরিশোধে জেলেরা বিভিন্ন সমিতি, এনজিও কিংবা মাহাজনের কাছে প্রায় সারাবছরই ঋণগ্রস্ত অবস্থায় থাকেন।

এমনই আরেক জেলে চান্দ্রা বাজারের উদ্দিপন সমিতি থেকে লোন নেওয়া মিজান বেপারী। প্রতি সপ্তাহে সাতশ টাকা করে ৪৮ কিস্তির ২৫ হাজার টাকার ঋণের কিস্তি তার।

মিজান বেপারী বলেন, ‘নদীই আমাগো সব। নদীই জীবন, নদীই মরণ। মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা রক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের এই সব সমিতি যদি কিস্তির টাকা নিতে না আসত, তয় আমরা একটু দম ফেলার সময় পাইতাম। কর্মসূচি শেষে আবারও কিস্তি টাকা দিতে শুরু করতাম। এখন পোলাপাইন সংসার লইয়া খুব কষ্টে আছি। একদিকে কিস্তি, আরেক দিকে নদীতে মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি— আমরা যামু কই!’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: মা ইলিশ ধরায় চাঁদপুরে ৮ জেলের কারাদণ্ড

মেঘনার নদী ঘেঁষে বহরিয়া, লক্ষীপুর, হরিণা নদী সংরক্ষণ বাঁধের পাশেই সারিসারি জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘর। চর ভাঙনের শিকার মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানকার অধিবাসী জুলেখা বেগম।

তিনি জানান, তিন বার চর ভাঙার পর বহরিয়ার নদী ঘেঁষে গড়ে তুলেছেন ঝুপড়ি। তার স্বামী রেজ্জাক বেপারী নদীতে মাছ ধরেন। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন মাছ ধরা বন্ধ।

বিজ্ঞাপন

জুলেখা বলেন, ‘শুধু চাইলে কি পেট ভরে? চাইলের সাথে ডাইল, লবণ, তেল— আরও কত কিছু লাগে। হেগুলি কে দিবো? হেরপরে মাহাজনের কিস্তি তো আছেই। একটা কিস্তি দিতে না পারলে আরেকটা চাপে পইরা যাই।’

জুলেখা-রেজ্জাক দম্পতির মতো জেলে পরিবারগুলোকে এভাবে কিস্তির গণ্ডিতেই আবদ্ধ থকতে হচ্ছে। কিস্তিতে সাময়িক উপকার হলেও অনেকে শেষমেষ আসবাবপত্র বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে বাধ্য হন।

জেলেদের দুর্ভোগ নিয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী সারাবাংলাকে জানান, জেলায় প্রায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সরকারি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জেলেরা তাদের খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তবে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল হলে জেলেরাই লাভবান হবে।

জানতে চাইলে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি বলেন, বর্তমান সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা বাড়িয়েছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে তার সুফল সবাই পাবে, দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।

সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন