বিজ্ঞাপন

বেপরোয়া ছিনতাই, হাসপাতালে বাড়ছে চাপ

January 5, 2018 | 8:50 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানীতে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে ছিনতাই এর ঘটনা। দিনে দুপুরে, মধ্যরাতে, কখন না ছিনতাই হচ্ছে! ছিনতাইয়ের শিকাররা বলছেন, পুলিশ বেশিরভাগ সময় নির্বিকার ভুমিকা পালন করে। অথচ তারা যদি নিজেদের কাজে সচেষ্ট হতো, তৎপর হতো, তাহলে ছিনতাই এতোটা বাড়তে পারতো না। মানুষের জান-মাল পুরোটাই হুমকীর মুখে এই ছিনতাইকারীদের জন্য। ছিনতাইয়ের কারণে আহত অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না আতংক। আর চিকিৎসকরা বলছেন, আগে ছিনতাই কেবল ছিনতাই থাকলেও এখন সেটা হয়ে গিয়েছে ‘বেপরোয়া ছিনতাই’।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও জরুরী বিভাগে এমন কোনও দিন নেই যে ছিনতাইয়ে আহতরা আসছেন না। ছুরিকাহত, গুলিবিদ্ধ, রাস্তায় পড়ে ছিলে যাওয়া, হাত ভাঙ্গা, চোখে মরিচের গুড়ো নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আর এ কারণেই চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আরেকটু তৎপর হলে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব, আর তাতে কমে যাবে এ ধরণের রোগীদের চাপ।

৪ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে কারওয়ান বাজার এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন আব্দুল মান্নান। সেদিন ভোরে ফকিরাপুলের বাসা থেকে রিকশায় করে  কারওয়ানবাজার আসার সময় ৩ জন ছিনতাইকারী তার পাজরে ছুরিকাঘাত করে নিয়ে যায় সঙ্গে থাকা চার হাজার ৫০০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

১৯ নভেম্বর রাত ১ টার দিকে তেজগাঁ ট্রাক স্ট্যান্ডে ছিনতাইয়ের শিকার হন বিল্লাল হোসেন। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও ৭ হাজার টাকা নিয়ে যাবার আগে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত বিল্লালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তার দরকার হয় ৩ ব্যাগ রক্তের। প্রায় ১২ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাড়ি ফেরেন।

কেবল সাধারণ মানুষই নন, ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। ১৯ নভেম্বরেই ভোর ৫টার দিকে মালিবাগ মৌচাক এলাকায় ডিবি পশ্চিম বিভাগের পরিদর্শক মাহবুবুল হককে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা।

মাহবুবুল হক সেদিন রাতের ডিউটি শেষ করে মিন্টো রোডের অফিস থেকে মালিবাগের বাসায় ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ৭ নভেম্বর মায়ের সঙ্গে রিকশায় করে আসার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন আকলিমা আক্তার। টিএসসি ও দোয়েল চত্ত্বরের মাঝামাঝিতে রিকশায় করে আসার সময়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী আকলিমার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দিলে রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। আহত অবস্থায় আকলিমাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিনই তিনি বাসায় ফেরেন। তবে আকলিমা এখনও আতংকিত। বাসায় ফেরার পর থেকে এখনও তিনি বাসা থেকে বের হতে পারেন নি। মোটরসাইকেল শব্দটাই তার কাছে এখন বড় আতঙ্ক। আকলিমা সারাবাংলাকে বলেন, রিকশা থেকে পড়ে যাবার কারণে হাঁটু থেকে শুরু করে পায়ের অসংখ্য জায়গায় ছিলে যায়, হাতের কনুইতে এখনও ব্যথা, ক্ষত হওয়া জায়গা এখনও শুকায়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. জেসমিন নাহার সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে অসংখ্য রোগী আসেন। আর আহত হবার ধরণের মধ্যে বেশি পেয়ে থাকি ছুরির আঘাতপ্রাপ্ত। এর সঙ্গে রয়েছে গুলির আঘাতে আহত হওয়া রোগীর সংখ্যা।

ডা. জেসমিন নাহার বলে, তবে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আহতদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এসব রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও তারা অনেকটা সময় ট্রমাটাইজড বা আতংকিত থাকেন। বীভৎস সে স্মৃতি থেকে বের হতে তাদের সময় লাগে দিনের পর দিন। যার প্রভাব গিয়ে পরে পুরো পরিবারটির ওপর।

প্রতিদিন নানা ক্যাজুয়ালিটের মধ্যে ছিনতাই এর ঘটনায় আহতরা আমাদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে কাজ করে, তাই ছিনতাই প্রতিরোধ করতে পারাটা আমাদের দায়িত্ব। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি আরেকটু বেশি তৎপর হতো তাহলে আমাদের ওপর চাপ কমতো।

বিজ্ঞাপন

আগেও ছিনতাই এর ঘটনা ঘটতো কিন্তু তখন ছিনতাই এর শিকার ব্যক্তিদের আহত হতে হতো না।

এমন কোন মানুষ নেই যে ছিনতাইয়ের সময় আহত না হচ্ছে মন্তব্য করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. শুভ প্রসাদ সারাবাংলাকে বলেন, আগে ছুরি ঢেকিয়ে, পিস্তল দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো। কিন্তু এখন ছুরি মেরে, গুলি করে ছিনতাই করছে ছিনতাইকারীরা। এগুলো প্রতিরোধ করা দায়িত্ব হয়ে গিয়েছে।

সারাবাংলা/জেএ/এসআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন