বিজ্ঞাপন

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

October 23, 2018 | 10:53 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতাদের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যর। এই জোটকে ষড়যন্ত্রের আভাস হিসেবে দেখছেন তারা। এই ঐক্যের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন।

প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার। প্রস্তাবটি হচ্ছে ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দর্শন-চিন্তা দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও সমাদৃত হচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি, ইউএন কর্তৃক হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন কর্তৃক স্পেশাল ডিসটিংকশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। এসব সম্মাননা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করায় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানানো হোক।’

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় অংশ নিয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জোটের বিজ্ঞ নেতা তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রভাশালী উপদেষ্টা ছিলেন। উনি সেই সময় দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করার পর বলেছিলেন, আমরা চুনোপুটি নয়, রাঘব বোয়ালদের কারাগারে দেবো। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। দুঃখ লাগে, বিএনপি এদের সঙ্গে জোট করেছে। যে ব্যক্তি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল, সেই ব্যক্তির সঙ্গে জোট করে— এটা কোন ধরনের ষড়যন্ত্র?

ড. কামাল হোসেন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোট করেছেন। অথচ যাদের সঙ্গে জোট করেছেন, সেই দলের শীর্ষ নেতারা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। আবার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন। অথচ তাদের জোটের শীর্ষ নেতারা সন্ত্রাসের কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের এই ধরনের প্রতারণার উদ্দেশ্য জাতি জানতে চায়।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জোটের নেতা আইনবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, যিনি স্বৈরাচারের চাইতে বড় স্বৈরাচার। তিনি একজন নারী সাংবাদিককে সম্মান দিতে জানেন না। যিনি শিক্ষা নিয়েছেন, কিন্ত মানুষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা জানেন না। এগুলো উনি শেখেন নাই। উনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নাই। উনি ঢাকা শহরে বসবাস করেছেন পাকিস্তানিদের বন্ধু হিসেবে। যিনি ইত্তেফাকের মতো পত্রিকা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, আবার পাকিস্তানিদের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। সেই পুরস্কৃত মানুষটি বাংলাদেশের সম্মান বিশ্ববাসীর কাছে হেয় করেছে, খাটো করেছে। দেশের মানুষের সম্মান যিনি বিদেশিদের কাছে হেয় করেছেন, তার বিচার হওয়া দরকার। নারীর প্রতি অসম্মানের জন্য তার বিচার হওয়া দরকার। তার বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সম্মানকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, যারা এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, জঙ্গিদের প্রশ্রয়দাতা, কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক ব্যক্তি, দেশ নিয়ে, সেনাপ্রধান নিয়ে মিথ্যাচারকারী, নারী বিদ্বেষী, পাকিস্তানপ্রেমী, জামায়াত কর্তৃক প্রত্যক্ষ মদতে কিছু নীতিহীন-আদর্শহীন-বাকসর্বস্ব লোক নিয়ে এই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত। আর যদি ধরা হয় এটি নির্বাচনী জোট, তবে তার অবস্থা আরও শোচনীয়। কারণ এর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির ইতিহাসটি বড়ই করুন।

ড. কামালকে ইঙ্গিত করে দীপু মনি বলেন, এই ঐক্যফ্রন্টের নেতা রাজনৈতিক জীবনে একবার মাত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এরপর যতবার নির্বাচন করেছেন, হেরেছেন। আওয়ামী লীগকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুধু হারেননি, জামানতও হারিয়েছেন। বাকিদের বেশিরভাগ কখনও নির্বাচিত হননি বা নির্বাচন করেননি। তাদেরকে নিয়ে এ কি ধরনের নির্বাচনী জোট, কিংবা ঐক্যফ্রন্ট? আসলে এই ঐক্যফ্রন্টটি না আদর্শিক, না নির্বাচনী। এটি একটি ষড়যন্ত্রের ঐক্যফ্রন্ট।

তিনি বলেন, তাদের এ দেশের জনগণের প্রতি আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। তাই প্রথমেই ধরনা দিয়েছেন বিদেশিদের কাছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কোন রবার্ট ক্লাইভের প্রতীক্ষায় আছেন? মোসাদেকে যখন সিআইএ উচ্ছেদ করেছিল, এখন কোনো সিআইএ বা অন্য কারও প্রতীক্ষায় আছেন আপনারা? অতীতেও জনগণের চাপে সব কিছুই খুঁইয়েছিলেন। আবারও ব্যর্থ হবেন। জনগণ সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আবারও নৌকাকে ভোট দিয়ে আপনাদের সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী এক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রায় কিছু মানুষের জ্বালা-যন্ত্রণা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ধিক্কার জানিয়ে ফজিলাতুনন্নেসা বাপ্পী বলেন, জোটের নেতা ব্যরিস্টার মইনুল হোসেন পাকিস্তানের দালাল। ১/১১ কুশীলব, খুনি মোস্তাকের দোসর, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয় দল গঠন করেছিল। সে নিজের ভাইকে ফাঁসানোর মানুষ খুন করেছিল। এজন নারী সাংবাদিকের প্রতি জঘন্য ভাষায় কটূক্তির করেছেন। তাই আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

ডা. জাফরুল্লাহ সেনাপ্রধানকে নিয়ে অসত্য বানোয়াট তথ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে বলে উল্লেখ করেন বাপ্পী। তিনি আরও বলেন, আর আ স ম রব পরগাছা। আজকে এই গাছে, কালকে ওই গাছে। এই উচ্ছিষ্টরা ঐক্যফ্রন্ট করেছে। আসলে এটা ফ্রডদের ঐক্য। বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো অশুভ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। এদের স্থান জায়গা হবে ডাস্টবিনে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তারানা হালিম, নুরুজ্জামান আহমেদ, মো. তাজুল ইসলাম, মীর মোস্তাক আহমেদ রুহি, জাসদ দলীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন, ড. জয়া সেনগুপ্তা, মো. মনিরুল ইসলাম, উম্মে রাজিয়া কাজল, সাবিনা আক্তার তুহিনমসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন