বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে চিকিৎসকরা: প্রবীণে আস্থা আ.লীগে, তরুণে ভরসা বিএনপির

November 14, 2018 | 2:24 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। হাটে-মাঠে চায়ের দোকানে এখন কেবলই নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন খেলোয়াড়, শিল্পীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারাও। পিছিয়ে নেই চিকিৎসকরাও।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন অনেক চিকিৎসক। তাদের মধ্যে অনেক প্রবীণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে শুরু করে নবীন চিকিৎসকরাও রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে প্রায় ৫২ জনের বেশি চিকিৎসক তাদের নিজ এলাকাতে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আট জন আবার বর্তমান সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। পাশাপাশি বিএনপি থেকে প্রবীন চিকিৎসকদের পাশাপাশি তরুণ চিকিৎসকরাও নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তারা মনে করছেন ক্লিন ইমেজের কারণে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তারা।

আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে আছেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান মনোনয়নপত্র কিনেছেন টাঙ্গাইল-৩ আসনের। এ ছাড়াও আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রার্থী হতে চান কুমিল্লা-৭ আসনে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ি-২ আসনে, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ ময়মনসিংহ-৪ আসনে, নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা-৭ আসনে (তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য), স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক কিশোরগঞ্জ-২ আসনে, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে, বাংলাদশ আওয়ামী যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম টাঙ্গাইল-৮ আসনে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি চাঁদপুর-৩ আসনে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাতক্ষীরা-৩ আসনে, ডা. আমজাদ হোসেন দিনাজপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. মো. আমজাদ হোসেন, ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. এম এ আউয়াল, ডা. আশরাফুল আমীন, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, ডা. হামিদুল হক, ডা. দিলীপ, ডা. ইউনুস আলী সরকার, ডা. চৌধুরী মো. আনোয়ার, ডা. রেজওয়ানুল হক, ডা. আব্দুর রউফ সরদার, ডা. আবু জাফর চৌধুরী, বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত, ডা. মোজাম্মেল হক, ডা. আইভি রহমান, ডা. খালেদ শওকত, ডা. শফিকুর রহমান, ডা. মোস্তফা আলম, স্বাচিপের সহসভাপতি ডা. এম এ রউফ সরদারসহ আওয়ামী লীগ থেকে আরও অনেক চিকিৎসক মনোনয়নপত্র কিনেছেন এবং তারা মনোনীত হলে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে মনোয়ন প্রত্যাশী তিনজন চিকিৎসক। তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. এম নজরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাকপ ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, আমি মনোনয়নপত্র কিনেছি এবং জমাও দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, আমাকে বিবেচনা করেন, তাহলে নিজ এলাকা থেকে প্রার্থী হবো। আর যদি মনোনীত না হই তাহলে নৌকার পক্ষে পুরো দেশ চষে বেড়াবো।

বিজ্ঞাপন

একই কথা বলেন আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র কিনেছি—প্রচার চালাচ্ছি। যদি মনোনীত হই তাহলে নির্বাচন করবো এবং আমার পেশার উন্নয়নের জন্য আরও বিষদভাবে কাজ করতে পারবো।

নির্বাচন করছেন কি না জানতে চাইলে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, মনোনয়নপত্র কিনেছি, যদি মনোনীত হই তাহলে নির্বাচন করতে আমি প্রস্তুত এবং ইনশাল্লাহ আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো, বলেও জানান অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।

এসব প্রবীণ চিকিৎসকদের পাশাপশি মনোনয়নপত্র কিনেছেন অনেক নবীন চিকিৎসকও। তাদেরই একজন ঢাকা শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল করিম তুষার। বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদের স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সাবেক সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ময়মনসিংহ-৮ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নেওয়া ডা. তুষার বলেন, এই আসনটি মূলত জাতীয় পার্টির দখলে, এ ছাড়াও নৌকার অবস্থানও কোন্দলে জর্জরিত। তাই নতুন মুখ খুঁজছে এলাকাবাসী, এতে করে আমি আশাবাদী।

বিএনপিপন্থী চিকিৎসক: অনেক চাপের ভেতর থেকে প্রার্থী হতে তৎপর রয়েছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎকরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানালেন, দল থেকে এবারে হয়তো তরুণ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী প্রায় এক ডজনের বেশি চিকিৎসক এবারে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, আর এ জন্য তারা নিজেদের নির্বাচনী এলাকাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম এ আজিজের পাশাপাশি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এই একই আসনে বর্তমানে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপিপন্থী একাধিক চিকিৎসক জানান, ডা. জাহিদ হোসেনের মনোনয়ন পাবার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। এ বিষয়ে ডা. জাহিদ বলেন, মনোনয়ন পেলে তার আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ ছাড়া বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যন ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার নির্বাচন করতে চান ঢাকা ১৭ আসন থেকে, মনোনয়ন পত্রও কিনেছেন। ড্যাবের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. ফরহাদ হালিম বলেন, ‘ঢাকা ১৭ আসনে তার দীর্ঘ ৫২ বছর কেটেছে, এই এলাকার মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সর্ম্পক এবং গত ৩০ বছর ধরে এই এলাকাতে আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছি, এই এলাকার মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’ তাই মনোনয়ন পেলে জয়ী হতে পারবেন বলে বিশ্বাস তার।

এদিকে, চট্রগ্রাম-৫ আসন (হাটহাজারী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মীর ফাওয়াজ হোসাইন শুভ। নিজ এলাকাতে জনপ্রিয় এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী ডা. ফাওয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, এইবারের নির্বাচন হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য আন্দোলনের একটা অংশ হিসেবে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলনে একটা ভূমিকা রাখবে এই নির্বাচন–সে কারণে অংশগ্রহণ করছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে এবং থাকবে বলে আমরা আশাবাদী, বলেন ডা. ফাওয়াজ হোসাইন।

বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নোয়াখালী-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। অপরদিকে, চট্রগ্রাম-৯ আসন থেকে মনোনয়ন আশা করছেন চট্রগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন। চট্রগ্রাম ১৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম। ডা. মহসিন জানিয়েছেন, ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগদানের পরই খালেদা জিয়া তাকে ওই আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এলাকা সুসংগঠিত করার পাশাপাশি জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চান।

পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সহসম্পাদক ডা. মো. রফিকুল কবির লাবু নির্বাচন করতে চান পিরোজপুর-২ আসন থেকে। তিনি তার নানা, বাবাসহ পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে বলেন, এ কারণে জনগণের সঙ্গে তাদের সর্ম্পক রয়েছে, মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ ছাড়াও গাজীপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সহসম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, গাজীপুর-২ থেকে বিএনপির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ড্যাবের সহসভাপতি ডা. মাজহারুল আলম, বিএনপির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ড্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে এবং বরিশাল-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চান বিএনপির আরেক কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. শহিদ হাসান।

এ ছাড়া সিলেটে ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, ময়মনসিংহে ডা. মোফাখ্খারুল ইসলাম রানা, বান্দরবানে ডা. সারোয়ার, চট্রগ্রামে ডা. শাহাদাৎসহ আরও অনেকেই মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে চাইছেন এবং মনোনীত হলে তারা নির্বাচনেও অংশ নিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা।

নির্বাচনের নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসি কর্তৃক ঘোষিত যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। আর এর পরদিন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে প্রার্থীদের মধ্যে।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন