বিজ্ঞাপন

আর একটু সময় চাই: প্রধানমন্ত্রী

November 14, 2018 | 11:30 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে জাতির পিতার নেতৃত্বে। কাজেই আর একটু সময় চাই। এই দেশের মানুষের দায়িত্ব নিতে চাই ভবিষ্যতের জন্য। বাংলাদেশকে নিয়ে যেন আর ভবিষ্যতে কেউ খেলতে না পারে, কেউ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে না পারে।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র সারাবাংলাকে বক্তব্যের বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

গণভবনে উপস্থিত সূত্র জানায় বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে ভালবেসেই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি করি নাই। মানি লন্ডারিং করি না। এখন তারা এক হয়েছে। খুব ভাল কথা। তারা নির্বাচনে আসবে আমি স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনেই দেখা যাবে জনগণ কাকে চায় এটা ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় বুঝিয়ে দেবে। তাদের সঙ্গে নতুন নতুন চেহারাও দেখতে পাচ্ছেন। কেউ ভেবেছে আরও বড় কিছু হবে। তাই এখন নৌকা থেকে ধানের শীষ ধরেছে। ধানের শীষে ধান নাই, এটা তারা কিন্তু ভুলে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি কিন্তু সবার সঙ্গে বসেছি। যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমি তাদের সঙ্গে বসেছি । আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি শুধু নয় বাংলাদেশেরও প্রধানমন্ত্রী। তাই তাদের সাথে আলোচনা করেছি। আপনারা দেখেছেন। জনগণের জন্য কাজ করেছি জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার আমরা সরকার গঠন করবো। ক্ষমতায় যেতে পারবো। জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন পূরণ করবো’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলেছে। আমরা আর নির্বাচন পেছাবে না। কারণ তাদের মতলব আমি বুঝতে পারছি না। কারণ এদের লাটাই ওই ক্রিমিনালের হাতে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত মানি লন্ডারিং’এ সাজাপ্রাপ্ত। তার হাতে লাটাই ঘুরছে। এতো বিলাসে বিদেশে জীবন যাপন করছে কিভাবে? আর ওখানে বসেই খুব বড় বড় কথা বলে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশে ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমাদের পালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ আমরা সরকারে এলেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক আকারে উদযাপন করতে পারবো। অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে জাতির পিতার নামেই মুছে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবো। কাজেই এই সরকারকে রাখার ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীকে ভাবতে হবে। ২০২১ সাল আমরা রস্বাধীনকার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আমরা ৯৬ সালে সরকারে এসে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পালন করেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

‘একাদশে নৌকাকে বিজয়ী করুন, নইলে ছেড়ে যাবো’

বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে যদি আমরা ক্ষমতায় আসি তাহলে এই দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমরা ডেলটা প্ল্যান নিয়েছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাংলাদেশে যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি।’

২০০১ সালের নির্বাচনে কোনো কোনো প্রার্থীর অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে হেরে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পেয়েছি। আমি তো জিতবোই। আবার একটি আসন না পেলে কি হবে? এই বিশ্বাস ছিল? আমি জানি। সেই অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়। কারণ পর পর আমরা দুই টার্ম সরকারে আছি। এটা আমাদের থার্ড টাইম।’

১৫ আগস্টের নির্মম পরিহাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাগ্যক্রমে আমরা দুই বোন বেঁচে আছি। বছরের বছরের পর বিদেশে থাকতে হয়েছিলো।’ এসব কথা বলতে বলতে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এবিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছি জনগণের জন্য। যা কিছু পেয়েছি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দেশের মানুষের জন্য। দেশের মানুষ যদি ভাল থাকে তাতেই আমরা খুশি। কখনো নিজের কথা ভাবি না। শুধু দিনরাত তাদের জন্য পরিশ্রম করি। এই দেশের জন্য এবং আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, আওয়ামী লীগকে ভাল রাখাই একমাত্র লক্ষ্য।’

এবার একাধিক আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন তোলার বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতো প্রার্থী হয়েছে দেখে খুব খুশি। না হলে আমরা এতো টাকা কোথায় পেতাম। খুব ভাল কথা। যাক আওয়ামী লীগের একটা লাভ হয়েছে। কিন্তু এর খারাপ দিকটা কি? সেদিকে একটু খেয়াল করতে পারেন? আওয়ামী লীগ কি নেতৃত্ব শূণ্য ছিল। আপনারা প্রার্থী হয়েছেন কিন্তু একজনও তো নেতৃত্ব দিয়ে নিজের সংগঠনকে গড়ে তুলতে পারেন নাই বলেই তো এতো প্রার্থী। তাই আপনাদের এমপির যোগ্যতা আছে বিচার করবো কিভাবে? কে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। নিজেদের জায়গা থেকে আপনারা যদি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারেন তাহলে আমি কি করবো?’

পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে বিষেদাগার না করারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তো কম উন্নয়ন করিনি। এতো কিছু করার পরেও কিন্তু সরকারে আসতে পারিনি। এবারও তো কম করিনি। এই দশটা বছর চেষ্টা করেছি। দেশের উন্নয়ন যত দ্রুত করা যায়। এর আগে তো কিন্তু শুধু সংগঠন তৈরি করেছি। তারপরও কতজন ভাগ করে নিয়ে গেল। একবার রাজ্জাক সাহেব ভাগ করে নিয়ে চলে গেল। একবার কামাল সাহেব চলে গেল একভাগ নিয়ে। সারাদেশ ঘুরে ঘুরে সংগঠন তৈরি করেছি। আজকে এইটুকু বলবো, সংগঠনটাকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস আনতে হবে।’

এই নির্বাচন হচ্ছে আগামী তরুণ প্রজন্মের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের জীবন মানসম্মত করার জন্য। কাজেই এই দেশের মানুষ যেন সুন্দর জীবন পায়। আমরা যেমন কষ্ট করে গেলাম তারা যেন না পায়। আগামী প্রজন্ম যাতে কষ্ট না করে। সেইভাবেই গড়ে তুলতে চাই।’

এরপর কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রথম লাইন ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়’ আবৃত্তি করে শোনান। এরপরই কবিতার লাইনটির সঙ্গে মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃত্তি করে বলেন, ‘চলে যাব– তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার…।”

এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার আশাবাদকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন