বিজ্ঞাপন

নীচ শীতের খপ্পরে দেশ

January 9, 2018 | 11:12 am

মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর

বিজ্ঞাপন

শীতের কাণ্ড দেখেছেন? কেমন নির্লজ্জ! নেমেই যাচ্ছে নেমেই যাচ্ছে কোনো মান সম্মান নেই! এগুলো কোনো কথা? বাংলাদেশ এই বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় তার নিজের ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। ঢাকার আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সকালে সূর্য উঠেছে ৬টা ৪৩ মিনিটে। কিন্তু উঠলে কী হবে? দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে। একটা স্বাভাবিক রেফ্রিরেটর যেটায় আমরা সবজি ফল ইত্যাদি রাখি সেটার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নিচে হয়। সেই হিসাব করলে দেশকে এখন আপনি একটা ফ্রিজের সাথে তুলনা করতে পারেন। সেখানে সূর্য হচ্ছে ফ্রিজের ভেতরের বাতি! এই বাতি আর কত গরম করবে! আলো দিচ্ছে এই ঢের! বিকাল ৫টা ২৮ বাজলে সূর্য ডুবে যাবে তখন এটাও বন্ধ হয়ে যাবে।

ভূতুরে শীত আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কুয়াশা। নৌ পথে তো ৪০০ কিলোমিটারের কম দূরেই কিছু দেখা দায় হয়ে পরেছে। ভূখণ্ডেও অবস্থা বেশি সুবিধার নয়। তবে বাঁচোয়া যে আমাদের অবস্থা তাও ভালো। সারা পৃথিবী জুড়ে যেই শীত পরেছে, কদিন আগে কানাডা আর নিউইয়র্কে তো রানওয়েতে এক প্লেন আরেক প্লেনকে ধাক্কা দিয়ে বসেছে। কেউ নাকি অন্য প্লেনটা দেখতেই পায়নি! ইশ!

বিজ্ঞাপন

আমাদের নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য বেশ সাবধানী। এমন ঘটনা যেন অন্তত আমাদের নৌপথে না ঘটে তাই ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী পাঁচ-ছয় ঘণ্টা করে নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরে যদি নৌ যানে ঠুকোঠুকি হয় তাহলে ঠাণ্ডা পানিতে আরও কী বিপদ হতে পারে তা ভাবাই যায় না! থাক বাবা, কদিনই তো এই ঠাণ্ডা। আমরা একটু সাবধানে থাকি আর নিয়মগুলো মেনে চলি!
ঠাণ্ডার সাথে হুড়মুড় করে এসে যাচ্ছে ঠাণ্ডার অসুখ। বিশেষ করে বাড়ির ছোটরা আর বৃদ্ধরা খুব কষ্টে আছে। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এমন অবস্থায় রোগ নিরাময়ের চেয়ে বোধহয় রোগকে বাঁধা দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

শীতকে আটকে দিতে আমি এক বুদ্ধি বলে দেই, গরম কাপড় তো নিবেনই সাথে, দুই তিন প্রস্থ কাপড় নিবেন। ধরেন একটা সাধারণ জামা যেটা আপনি শীতে পরেন। তার উপরে একটা পাতলা সোয়েটার পরবেন। তার উপর চড়াবেন একটা ভারি জাম্পার। একই রকমে পায়ে আগে একটা আঁটসাঁট পায়জামা পরবেন তার উপরে পরবেন কটা ভারি উলের বা ফ্লানেলের পায়জামা। শীত যদি বেশী লাগে তবে পায়জামা গুজে দিবেন মোজার ভেতরে। বাতাসের বেগ ১২ ঘণ্টায় কিলোমিটার হতে পারে। শরীরে বাতাস ঢোকা যদি বন্ধ না হয় তাহলে কিন্তু হাজার গরম কাপড় পরেও যেই শীত সেই শীতই করবে!

শীতের অসুখ যখন শরীরের আশপাশ দিয়ে ছোকছোক করে তখন তাকে যাহ হুশ হুশ বলার আরেকটা খুব ভালো বুদ্ধি আছে। খুব করে ভিটামিন সি খাবেন। কমলা যে শীতকালে বাম্পার ফলন হয় সেটা কিন্তু এমনি এমনি নয়। শীতকে বাঁধা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভিটামিন সি কমলায় থাকে। এটা একটা প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এছাড়াও আজকে সারা দিনে মুরগির স্টেক করে খেতে থাকুন। সর্দি কাশি ধারে আসবে না!

বিজ্ঞাপন

এত ঠাণ্ডায় তো ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো তার উপর সূর্যের যেই প্যানপ্যানে আলো! কে আর যাবে তার রোদে গা মেলতে! তবে কাজের প্রয়োজনে যদি বের হতেই হয় এটা মাথায় রাখবেন মেঘের পরিমাণ আজ ৩১ শতাংশ। তাই অতিবেগুনী রশ্মির তেজ বেশি। সানস্ক্রিন অবশ্যই অবশ্যই মাখতে হবে।

অতিবেগুনী রশ্মি যদি খুব বিরক্ত নাও করে। তাহলেও ঝামেলা আছে। শুষ্ক শীতল বাতাস ত্বককে একদম শুষে খাবে। ওকে একটু তেল-পানি দিয়ে তাজা রেখেন। নাহলে শুষে ত্বক চুলকাবে। সেটা থেকে ত্বক ফেটে রক্ত আসবে আর ছিঁড়ে যাওয়া চামড়ায় ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে এটা কে না জানে!

শীত আজকের মধ্যে কমে যেতে পারে। তবে এ কথায় খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। ১০ তারিখের পরে আরও দুটি শৈত্য প্রবাহ আসবে। আর এখন যে শৈত্য প্রবাহে আমরা কাবু হয়ে আছি সেটা মাঝারি ধরণের শৈত্য প্রবাহ! প্রার্থনা করুন পরেরগুলো যেন তীব্র না হয়।

আপনাদের আজকের দিন শুভ কাটুক। একজন আরেকজনকে সাহায্য সহযোগিতা করার মধ্যমে শীতকে উষ্ণ করে রাখুন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমএ

ছবি কৃতজ্ঞতা: রাফসান রাসিন (কুষ্টিয়া)

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন